রোহিঙ্গা নিপীড়নকারীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নিপীড়নের জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের জঘন্য অপরাধের দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয়।বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক সময় বিকেলে ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক (রোহিঙ্গা) সঙ্কট: স্থায়ী সমাধান জরুরি’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ আইসিজেতে চলমান আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের তৈরি অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াগুলোকেও সমর্থন করা উচিত।রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে অবশ্যই এখনই কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এর সমাধানে ৫টি প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।এর মধ্যে প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, আমাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এবং অবশ্যই সে লক্ষ্যে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যদিও মিয়ানমারে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তবুও এ সঙ্কট সমাধানে আমাদের চেষ্টা অব্যহত রাখা উচিত।তৃতীয়ত, এ ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করি আসিয়ানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আসিয়ানের বিশেষ দূত নিয়োগকে স্বাগত জানাই এবং আশাকরি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে এ সঙ্কট সমাধানের বিষয়টি আসিয়ানের এজেন্ডায় বেশি গুরুত্ব পাবে। সহযোগী সদস্য হিসেবে আসিয়ানের উচিত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা। যাতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত হয়।চতুর্থত, আমাদের মনে রাখতে হবে মানবিক সহায়তা অপরিহার্য, কিন্তু কোনোভাবেই স্থায়ী সমাধান নয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে জাতিসংঘ এবং অংশীদারদের অবশ্যই বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ এবং প্রকল্প নিতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা এরকম কোনো অগ্রগতি দেখিনি।
পঞ্চমত, মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নিপীড়নের জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের জঘন্য অপরাধের দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ আইসিজেতে চলমান আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের তৈরি অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াগুলোকেও সমর্থন করা উচিত।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মানবিক সঙ্কট সমাধান করা সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। কারণ এর প্রভাব রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরেও পড়ছে। ভয়াবহ এ সঙ্কটের সমাধান বিলম্বিত হলে আমাদের সবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। প্রত্যাবর্তনের অগ্রগতির অভাবে ক্রমবর্ধমান হতাশার কারণে অনেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তারা উগ্রবাদী মতাদর্শীদের সহজ শিকার। এটি পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে তুলতে পারে। এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সবার সাথে কাজ করে যাবে।
রোহিঙ্গা নাগরিকদের দুর্দশা লাঘবের আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা- পুনরুদ্ধারের আশা; টেকসই পুনর্গঠনের আশা’ এই থিম নিয়ে ৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। আমার প্রতিনিধি দলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘আশা’ নিয়ে অধিবেশনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দুর্দশা লাঘবের আশা।এতদিনেও রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান না হওয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, গত চার বছর ধরে আমরা খুবই আশাবাদী ছিলাম মিয়ানমারের এসব বাস্তুচ্যুত মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাবে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা বৈশ্বিক সমাবেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর আস্থা রেখেছিলাম।এখনও সঙ্কট সমাধানের আশা রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাই হোক আমাদের আহ্বান উপেক্ষিত হয়েছে এবং আমাদের আশা অপূর্ণ রয়ে যায়। আমরা এখন সংকটের পঞ্চম বছরে। তবুও আমরা এখনও এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা ধরে রেখেছি।রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে দুটি পথ ছিল- হয় তাদেরকে জীবন বাঁচানো অথবা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া এবং তাদের জাতিগত নির্মূলের মুখে ঢেলে দেওয়া। আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাড়া দিয়ে তাদের জীবন বাঁচানোর পথটি বেছে নেই।