অর্থ-ক্ষমতা এবং বিদ্যাবুদ্ধির জটিল রসায়ন

গোলাম মাওলা রনি ::
হবু রাজার গবু মন্ত্রী, হীরক রাজার দেশে, গোবর গণেশ, ইঁচড়ে পাকা, খালি কলস বেশি বাজে, একে তো নাচুনে বুড়ি তার ওপর ঢোলের বাড়ি ইত্যাদি শব্দমালা আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। আবহমান বাংলায় সমাজ-রাষ্ট্র ও সংসারে যখন অনেক কিছু বেমানানভাবে ঘটতে থাকে, তখনই বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন বাগধারা রাতারাতি তৈরি হয়ে যায়। উঁচু পদে নিচু মানুষ, মহৎকর্মে ইতরজনের খবরদারি, দুষ্টলোকের বাড়াবাড়ি এবং অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য বা অভয়ারণ্য যখন একই সমান্তরালে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, তখনই নানা অসামঞ্জস্য, বৈসাদৃশ্য এবং ব্যতিক্রমী ও নিষ্ঠুর পাপাচার তথা অপরাধের রাহুগ্রাস মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি, বোধবুদ্ধি, কর্মশক্তি, উদ্দীপনা ইত্যাদি ধ্বংস করে দেয়। ফলে সমাজ-সংসারে অসম্পূর্ণ মানুষ বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় দেখা যায়, বিদ্বানের বুদ্ধি থাকে না এবং বুদ্ধিমান মানুষ বিদ্যা অর্জনের প্রয়োজন মনে করেন না। ধনীরা স্বাস্থ্যহীন হয়ে সারাক্ষণ বেঁচে থাকার চেষ্টায় রত থাকেন। অন্য দিকে, দরিদ্ররা শক্তিশালী এবং পেশিবহুল স্বাস্থ্য নিয়ে সারাক্ষণ মৃত্যুভয়ে কাঁপতে থাকেন।

সমাজ-সংসার-রাষ্ট্রে যখন উল্লিখিত পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন মানুষ লোকালয় রেখে কবরস্থান নিয়ে মাতামাতি শুরু করে। জীবিত মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এবং মৃত মানুষকে দেবতা বানিয়ে উল্লাসনৃত্য শুরু করে। তারা কান্নার দৃশ্য দেখে কৌতুক লাভ করে এবং আনন্দঘন পরিবেশে বিষাদময় বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে আত্মার শান্তি লাভের অপচেষ্টা চালায়। তারা সত্যনিষ্ঠতা, ন্যায়বিচার, শুভবুদ্ধি ইত্যাদির কবর রচনা করে এবং কিছু দিন পর সেই কবর থেকে দুর্গন্ধময়, পচা ও বীভৎস স্বরচিত সত্যনিষ্ঠতা, বিচারব্যবস্থা এবং অশুভবুদ্ধি বের করে এনে পৃথিবীর মুক্ত বাতাসে সেগুলোর প্রজনন বাড়াতে থাকে। ফলে মানুষের লোভ-লালসা, বিশৃঙ্খলা, অবাধ্যতা, নিষ্ঠুরতা, নোংরামি এবং চুরি-ডাকাতির মনোবৃত্তি জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। মানুষের চোখে এমন পর্দা পড়ে যায় এ কারণে অন্ধকারকে আলোকময় মনে হয় এবং আলোকময়তাকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মতো অস্পৃশ্য বোধ হতে থাকে।

নির্বোধের দাপটে মানুষ যখন নিষ্পেষিত হয়, তখন সম্মানিত লোকেরা বেইজ্জতি হওয়ার ভয়ে সব কিছু থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। মানুষের কর্কশতা, চরিত্রহীনতা ও অভদ্রতা তখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। যে লোক যত বড় বেয়াদব ও অমানবিক তাদের তত বড় রাষ্ট্রীয় পদে আসীন দেখতে পাওয়া যায়। নিষ্ঠুরতার চাবুকে যারা সামান্যতম নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না তাদের শান্তির দূত হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। সবচেয়ে চরিত্রহীন লোকটিকে ধর্মকর্ম রক্ষক নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি লোভী, স্বার্থপর ও পেটুকের ওপর অর্পিত হয় খাদ্যভাণ্ডারের দায়িত্ব। সবচেয়ে বড় চোরকে করা হয় অর্থভাণ্ডারের চৌকিদার আর ডাকাতকে দেয়া হয় তা পরিচালনার ভার। চরিত্রহীনতা, নোংরামি ও বিকৃত কর্মকাণ্ডে যারা সর্বোচ্চ দক্ষতা লাভ করতে পারে, তারাই মানুষের মান-ইজ্জতের রক্ষাকর্তা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নির্বোধ ও বুদ্ধিহীনেরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে আরম্ভ করে এবং জ্ঞানী-গুণীরা বোবা হয়ে প্রতিদিন ধর্ষিত হতে থাকেন।

মিথ্যা যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, সেখানে বিকৃত রুচির ভ্রষ্টাচারের অরণ্য সৃষ্টি হয়ে যায়। ফলে কিছু মানুষের কর্মকাণ্ডের চেয়ে হিংস্র পশুদের উত্তম ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে থাকে। মিথ্যুকদের নেতার আশকারা পেয়ে তার সাঙ্গপাঙ্গরা সমাজ থেকে নিয়মকানুন, ব্যক্তিগত সুখশান্তি ও বাকস্বাধীনতা ঝেঁটিয়ে কবরস্থানে পাঠানোর জন্য সর্বদা লেফট-রাইট করতে থাকে। তারা মানুষকে চুরি-ডাকাতির সুফল নিয়ে হররোজ উপদেশ দেয় এবং ধর্ষণকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে তা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কালাকানুন তৈরি করে। ফলে মানুষ সব কাজকর্ম ফেলে মিথ্যাবাদীদের ধর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে অরক্ষিত এবং অকেজো বানিয়ে কেবল নিজেদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরে সুযোগমতো মিথ্যাবাদীরা ধর্ষণ ভয়ে ভীতদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলোতে নিজেদের মিথ্যাচারের মন্ত্র সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়ে মনের আনন্দে বগল বাজাতে থাকে।
মিথ্যুকদের দ্বারা পরিচালিত সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্ষণ এবং ছলচাতুরী হলো দুটো অব্যর্থ অস্ত্র। ধর্ষণকে মিথ্যুকেরা রীতিমতো মহাকাব্য বানিয়ে ফেলে। তারা ধর্ষণ নামক শব্দটি কেবল মানুষ ও পশুদের যৌনাঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে না। তারা ধর্ষণের তৃপ্তি কেবল ইন্দ্রিয়গত সুখের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে নারাজ। তারা এটিকে মানুষের মন-মস্তিষ্ক, আহার-নিদ্রা, বিশ্রাম, সহায়-সম্পত্তি ও কর্মস্থলে মারণব্যাধি ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে দেয়। ক্ষমতাবান মিথ্যুকেরা তাদের জোর-জবরদস্তি, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই-হত্যা-গুম ইত্যাদি কুকর্মগুলোকে ধর্ষণের মতো করে প্রয়োগ করার অপকৌশল আরম্ভ করে। এর ফলে ভুক্তভোগীরা মিথ্যুকদের দেখলেই ধর্ষণ আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়ে। ধর্ষকেরা তখন মানুষের চিন্তাচেতনা ও কথা বলার শক্তির ওপর এমন বলাৎকার আরম্ভ করে, যার আতঙ্কে মানুষ রীতিমতো জড় পদার্থে পরিণত হয়।

যে মিথ্যার কারণে সমাজ-সংসার ও রাষ্ট্রে এত অনাসৃষ্টি, সেই মিথ্যা নিয়ে কিছু কথা বলা আবশ্যক। সাধারণ মানুষ মিথ্যা বলে যেসব কারণে তার মধ্যে অন্যতম হলো- নিজের অতৃপ্তি, লোভ ও লালসাকে চরিতার্থ করার বাসনা। অন্য দিকে, ক্ষমতাবানেরা মিথ্যা বলে সাধারণত নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করে প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। নিজেকে বড় করা এবং প্রতিপক্ষকে ছোট করার প্রবৃত্তি থেকেও ক্ষমতাবানেরা মিথ্যা কথা বলে। সব মিথ্যাবাদী দুটো সাধারণ কারণে নিজেদের মিথ্যার জালে জড়িয়ে ফেলে। একদল লোক রয়েছে, যারা জন্মগতভাবে খুবই বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী। কিন্তু তারা নিজেদের বুদ্ধিকে কার্যকর ও শাণিত বা চৌকস করার জন্য যে বিদ্যা দরকার তা অর্জন না করেই বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটাতে গিয়ে একের পর এক অনাসৃষ্টি ঘটাতে থাকে। এসব বুদ্ধিযুক্ত মানুষ যদি ধনী, সমাজপতি বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হন; তবে মিথ্যা ছাড়া তিনি এক মুহূর্তও চলতে পারেন না।

বোকা লোকের জন্য কখনো সখনো মিথ্যা বলা এক অনিবার্য পরিণতি হয়ে দাঁড়ায়, যদি তিনি জন্মগতভাবে অথবা কোনো পরিস্থিতির কারণে ধনসম্পত্তি, ক্ষমতা, বিত্তবৈভব বা সুনামের অধিকারী হয়ে পড়েন। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত কোনো সহায়সম্পত্তি বা সুযোগ যখন বোকাসোকাদের কবলে পড়ে তখন সেখানে মিথ্যাচার, ছলচাতুরী এবং মিথ্যাজাত নানা সমস্যা ও সঙ্কটের অভয়ারণ্যের সৃষ্টি হয়। কোনো বোকা লোক অবস্থার চাপে পড়ে অনেক সময় তোতাপাখি বা কোনো নির্বোধ সার্কাসের পশুর মতো বেশ কিছু বিদ্যা অর্জন করে ফেলেন। এসব লোক যদি দৈবক্রমে কোনো বড় পদবিতে আসীন হন বা দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তখন মিথ্যার বেসাতি ছাড়া তিনি এক মুহূর্তও বাঁচতে চান না। মনুষ্য সমাজের একটি প্রচলিত প্রথা হলো ধনবান ও ক্ষমতাবান বিদ্যাহীন বুদ্ধিমান অথবা বুদ্ধিহীন বিদ্বানদের চার পাশে ধড়িবাজ, চরিত্রহীন ও অমানুষ প্রকৃতির বিদ্যাযুক্ত বুদ্ধিমানেরা ভিড় করে নিজেদের সব বিদ্যাবুদ্ধিকে ক্ষমতা ও অর্থের কাছে বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতা ও অর্থের কেন্দ্রস্থলকে জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়েন।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম হলো- বিদ্যাবুদ্ধি ও সংযমের সমন্বয় ঘটাতে হবে নিয়মনীতি, সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে। বুদ্ধিমান মানুষ যা বোঝেন এবং যা করতে চান তা বাস্তবে রূপদান করার জন্য তাকে অবশ্যই বিদ্যা অর্জন করতে হবে। এই বিদ্যা কখনো হতে পারে প্রশিক্ষণ, কমানো বা দর্শন আবার কখনো বা অধ্যয়ন। বুদ্ধিমান লোক শুধু বিদ্যা অর্জন করলেই কাক্সিক্ষত ফল পাবেন না। অর্জিত বিদ্যার চর্চা, একই প্রকৃতির বিদ্বান ও বুদ্ধিমান লোকদের সোহবত বা সাহচর্য এবং বিদ্যা ও বুদ্ধি বিকশিত করার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র ব্যতিরেকে বুদ্ধিমান বিদ্বানের চরিত্র গঠিত হয় না। আর চরিত্র গঠন ছাড়া কোনো বিদ্বান যেমন তার বুদ্ধির ওপর অটল থাকতে পারেন না তেমনি কোনো বুদ্ধিমানও তার অর্জিত বিদ্যার ওপর নির্ভর করতে পারেন না। কাজেই একমাত্র উন্নত চরিত্রই পারে বুদ্ধিমান বিদ্বানকে সব মিথ্যাচার, প্রলোভন, ছলচাতুরী এবং অন্যান্য মিথ্যাজাত উপসর্গ থেকে বাঁচাতে।

চরিত্রবান মানুষ তা তিনি যে পেশার হোন না কেন- অথবা পদ-পদবিতে তিনি যতই অগুরুত্বপূর্ণ থাকেন না কেন তিনি নিঃসন্দেহে জমিনে মহান আল্লাহ পাকের রহমত-বরকত ও ক্ষমার উপলক্ষ হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করতে থাকেন। মিথ্যাবাদী কর্তৃক পরিচালিত সমাজ ও রাষ্ট্রে যেমন চরিত্রবানেরা টিকতে পারেন না, তেমনি চরিত্রবানদের সমাজেও মিথ্যাবাদীরা বেশি দিন বা বেশিক্ষণ শান-শওকত বজায় রাখতে পারেন না। সাধারণ চরিত্রবান এবং ক্ষমতাধর চরিত্রবানের কাজকর্মের মধ্যে কতগুলো মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ চরিত্রবানদের দায়িত্ব হলো মিথ্যাচারীকে ঘৃণা করা- তাদেরকে পরিত্যাগ করা অথবা মিথ্যাবাদী থেকে নিরাপদ দূরে অবস্থান করা। অন্য দিকে ঐশ্বর্যবান বা ধনবান এবং একই সাথে ক্ষমতাশালী চরিত্রবান লোকদের জন্য অবশ্যকর্তব্য হলো মিথ্যাবাদীকে প্রতিহত করা, মিথ্যাবাদীর লোভনীয় সঙ্গ ত্যাগ করা এবং মিথ্যাবাদীর কুকর্মগুলোর বিরুদ্ধে সমাজ-সংসারকে সাধ্যমতো সচেতন করে তোলা।

মানবজাতির হাজার বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রাজনীতি-কেন্দ্রিক বিদ্যাবুদ্ধিযুক্ত চরিত্রবান মানুষের সমাবেশ ঘটলে দেশ-জাতি, মাটি-মানুষ, প্রকৃতি-পরিবেশ এবং সর্বোপরি ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অধ্যায় রচিত হয়। অন্য দিকে, রাজনীতিতে যদি মিথ্যাবাদীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় তবে দেশ-রাষ্ট্র ও সমাজে যত অর্থবিত্তই থাকুক না কেন তা হাবিয়া দোজখে রূপান্তরিত হয়। আর এসব কারণেই বাংলা ব্যাকরণের একটি জনপ্রিয় বাগধারায় বলা হয়েছেÑ রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। আমাদের দেশের নাটক-সিনেমা ও গল্প-কবিতায় আমরা অত্যাচারী শাসক, জাহেল আমলা-কামলা, অবিবেচক কাজী, অসৎ দ্বাররক্ষী, দুর্নীতিবাজ কোতোয়াল ও সৈনিকের কুকর্মের কার্যকারণের বহু ঘটনা শুনেছি। আমরা এমন দৃশ্য বহুবার দেখেছি যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী, রাজপুত্র, রাজকন্যা ও রানীদের চরিত্র ও আচার-আচরণ ও কথাবার্তা দ্বারা রাজা, রাজ্য ও রাজধানীর হাল-হকিকত বুঝে গেছি।

রাজনীতির বাইরে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য, কৃষি, পরিবার, সমাজ এবং ধর্মকর্মেও বিদ্যাহীন বুদ্ধিমান অথবা বুদ্ধিহীন বিদ্বানরূপী মিথ্যাবাদীদের আধিপত্যের কুফলে পৃথিবীর জমিন-আকাশ-বাতাস, মানবকুল ও জন্তু-জানোয়ারেরা মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি। হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা যুগে যুগে গবেষণা করে বের করেছেন, রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রস্থলই হলো সব শুভকর্মের সূতিকাগার অথবা কুকর্মের আধার। তারা আরো বের করেছেন, রাজা, বাদশাহ, আমির-ওমরাহদের সঙ্গপাঙ্গ, কর্মচারী ও চাকর-বাকরদের চরিত্র দেখেই রাজার চরিত্র এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, উত্তম শাসকেরা সব সময়ই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ, শ্রেষ্ঠতম কিতাব ও বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে রাজদরবার আলোকিত করেছেন। অন্য দিকে শারাবি, কাবাবি, জাহেল-কমবখত নাজায়েজ রাজরাজড়া দুনিয়ার যত্তসব অশ্লীল, মন্দ, পূতি-দুর্গন্ধময় লোকজন, পশু-পাখি, হাতিয়ার, সঙ্গীত-নৃত্য ও বস্ত্র-অস্ত্র দিয়ে রাজদরবার, বিচারালয়, দেবালয়সহ জনসমাবেশের স্থলগুলোকে কলঙ্কিত করেছে।

ইতিহাসের উল্লিখিত ধারাপাতের আরো একটি অধ্যায় হলো- সমসাময়িক দুনিয়ার রাজনীতিতে উত্তম রাজপুরুষেরা যেমন একসাথে আবির্ভূত হন, তেমনি মন্দ রাজারাও একই সাথে আবির্ভূত হয়ে থাকেন। পৃথিবীতে যখন আকবর দি গ্রেট ছিলেন তখন পৃথিবীর অন্য অংশে সুলেমান দ্য গ্রেট, এলিজাবেথ দ্য গ্রেট, শাহ আব্বাস প্রমুখ মহামানবেরা রাষ্ট্রযন্ত্রের ন্যায়ের দণ্ড একই উচ্চতায় তুলে রেখেছিলেন। অনুরূপভাবে হিটলার, মুসোলিনি, স্টালিন প্রমুখ নৃশংস শাসকেরা যেমন সমসাময়িক ছিলেন, তেমনি স্বার্থের তাগিদে তারা পরস্পরকে কুকর্মে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন একেবারে উলঙ্গ হয়ে এবং উল্লম্ফন সহকারে। পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ, জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, ওলি-আল্লাহ, গাউস-কুতুব এবং পরহেজগার বান্দারা পৃথিবীর রাজদরবারগুলোর দিকে তাকিয়ে রাজা-বাদশাহদের হাল-হকিকত দেখে কখনো বা কৃতজ্ঞতার অশ্রু বিসর্জন করেন, পরম প্রভুকে ধন্যবাদ জানান অথবা আল্লাহর দরবারে উত্তম নেতার জন্য অশ্রুজলে ফরিয়াদ জানাতে থাকেন।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

Advertisement