অহংকারের প্রদীপ জ্বালানো এক স্লোগান

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: জেমস ভাই। আমার প্রাণের জেমস ভাই। অহংকারের প্রদীপ জ্বালানো এক স্লোগান- ‘আমাদের দেশে একজন রকস্টার জেমস ভাই আছেন!’ গত দুই দশকের বেড়ে ওঠা প্রজন্মের মনের ভেতরের সুরের অনেকটা এই মানুষটিকে ঘিরে। ১৯৯৭-২০০৭/৮ এই ১০/১১ বছর আমার ব্যক্তিগত জীবনে দিন-রাত সকাল সন্ধ্যা দুটি মানুষকে ঘিরে শুরু হতো কিংবা শেষ। সেই দুই প্রাণের মানুষ একজন আইয়ুব বাচ্চু আরেকজন জেমস।

আজ আমার ভালোবাসার এক পাখি চলে গেছে। এবি বস। আরেক কাণ্ডারি আছেন। তাই ইদানিং মনে হয় আমরা কেন সবাই মিলে এই মানুষটিকে নিয়ে আয়োজন করি না। চলে যাবার পর অতি হাহাকারের উৎসব হবে জানি। কিন্তু আমাদের উচিত তাকে নিয়ে এখনই এক বড় আয়োজন করার।

আসলে, আমরা তো সকলে এখন নিজের বিজ্ঞাপনেই ব্যস্ত। ফেসবুক আসার পরে আরো! তাই বোধ হয় মহসমুদ্রকেও আয়োজন করা ভুলে গেছি/যাচ্ছি আমরা। তাকে নিয়ে এক অনবদ্য শ্রদ্ধা স্মরণ হোক। এ আমার ব্যক্তিগত চাওয়া!

ব্যক্তিগতভাবে জেমস ভাই আমাকে ভীষণ আদর করেন। কিন্তু তার ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গি আলাদা। মাঝে মাঝে স্মৃতি হাতড়ালে মনে হয়- খুব বেশি ভালো না বাসলে তো এমন ঘটনা হতো না- তার সঙ্গে আমার।

কত স্মৃতির কথা বলবো! একটি শেয়ার করি এখন।

একবার চিটাগাং ক্লাবে জেমস ভাইয়ের কনসার্ট। অন্যান্য শিল্পীরাও রয়েছেন। কনসার্টের শেষ ও সেরা চমক যথারীতি নগরবাউল জেমস। আমি সাধারণত গ্রিনরুম বা বাইরে পাইচারি করি। দর্শকদের কৌতুহলগুলো দেখি। দারুণ লাগে। তেমনই দেখছিলাম। স্টেজে গান চলছে অন্যদের। হঠাৎ পার্ক করা একটি জিপ থেকে একজন বেরিয়ে এলো। ‘আপনাকে জেমস ভাই খুঁজছেন। ঐ গাড়িতে বসা।’ কনসার্টে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা জেমস ভাইয়ের জন্য। কারণ, তাকে গ্রিনরুমের বাইরে পেলে ভক্তরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে। তাই স্টেজের কাছে এলেও লুকিয়ে থাকতে হয় তাকে।

ফেসবুকের যুগ তখনও আসেনি। তখনও শ্রোতা দর্শক ছোট্ট একটা নোটবুক আর কলম নিয়ে কনসার্টে ঢুকতো! তখন তাদের নাম ছিল ‘অটোগ্রাফ শিকারী’। আজ তারাই সেলফিবাজ।

যাইহোক আমি চুপচাপ, জিপের দরজা খুলেই দেখি জেমস ভাই আয়েশী হেলান দিয়ে আছেন।

– তানভীর চল। একটু হাওয়া খেয়ে আসি।

– আপনার তো আরেকটু পর স্টেজে উঠতে হবে।

– আরে চল না ব্যাটা…। এ শহরে তো জ্যাম নেই। (আমি মনে মনে বলি! আমার না যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। সারাশহরে সারারাত ঘুরলেও তো না করবো না আমি)
আমরা ক্লাব থেকে বের হলাম। আমার হাত ধরলেন। ঠিক হাত ধরা বলে না। হাতের ওপরে বারকয়েক বাড়ি মারলেন। সাধারণত কাঁধে চাপ দেন জেমস ভাই আমার।

– কেমন চলছে তোর লেখালেখি। .. এরপর অনেক কথা। কত প্রসঙ্গ।

আমরা একটা টং দোকানের কাছে এসে চা আনিয়ে খেলাম। জেমস ভাই সিগারেট ধরালেন। বাইরে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। জেমস ভাই আর আমি মিনিট পনের জিইসি মোড় চত্বর ঘুরে চেরাগী পাহাড় ..ঘুরে টুরে আবার ক্লাবে ঢুকলাম।

জেমস ভাই এসেই মঞ্চে উঠলেন। আমি দূর থেকে উন্মাতাল ঢেউ গুনছি তখন। একজীবনে যেমন কত কত কনসার্টে এরকম ভক্তদের উচ্ছ্বাসের ঢেউ গুণেছি। দেখেছি। স্টেজে তখন জেমস ভাই এক অন্যমানুষ।

তখন বিশ্বাস হয় না। মানুষটি আমায় চেনেন!

ভালোবাসেন।

আদর করেন।

ধমকান!
আমি এক জীবনে মূলত বাচ্চু ভাই, জেমস ভাইদের সান্নিধ্যটাই খুব দারুণ ভাবে উপভোগ করেছি। তাদের সঙ্গে দিনযাপন করলে খিদা লাগতো না ! আক্ষরিক অর্থেই নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতাম। আহা! কী এক অদ্ভুত মোহ জুড়ে আছে আমার জীবনে এই দুই মানুষ। মহামানুষ!

তখন তাদের দিয়ে গান গাওয়ানোর তাগিদ বা সুযোগ সন্ধানী মন আমার কখনও ছিল না। এখন অনেক ছোট ভাইদের যেটা দেখি। এটাকে আমি অবশ্য পজিটিভলিই দেখি। কারণ এমন সুযোগ সন্ধানী হতে পারলে তো বাচ্চু ভাই-জেমস ভাইয়ের কণ্ঠে আমার অনেকগুলো গান থাকতো।!

কিন্তু আমি যে তাদের সামনে গেলে..আড্ডা দিয়েই জীবনকে ধন্য মনে করতাম। বাড়িতে ফিরে স্বপ্নেও তাদের দেখতাম। মোহটা আমার এমন পর্যায়ের ছিল। আছে!

আমি শুধু তাদের সঙ্গে সময় কাটায়েই পূর্ণ করতাম আত্ম অনুরাগ। বিশ্বাস করুন এখনও তাই! এই যে পাশে থাকার অনুভব এখনও গুনি! তবুও এর ভেতরে ক্যামনে ক্যামনে আমার বেশ কিছু গান তিনি গেয়েছেন।

কিন্তু সে হিসেবের চাইতেও আমার কাছে বড় বিষয়, ‘জেমস ভাই আমাকে চেনেন। ভালোবাসেন। এই গভীর বিশ্বাসটা আমার এই মফস্বলী মনকে ধন্য করে।’

ভালোবাসি জেমস ভাই আপনাকে অনেক। অনেক! বলে লিখে এসব বোঝাতে পারবো না।

আর বাচ্চু ভাই চলে যাবার পর যেন দুটো মানুষের জন্য হাহাকার আর ভালোবাসা আপনার উপরেই উপচে পড়ে বারবার। বারবার। খুউব। আর তো জায়গা নেই আমার। অনুভবের। অভিমানের !!

বারবার মনে হয় আপনাকে ছুঁয়ে দেখে আসি। অনেকটা সময় বসে থাকি আপনি আমি চুপচাপ! সুস্থ থাকবেন। ভালো থাকবেন অনেকদিন। মিস করি সেই অনবদ্য কাল থেকে আজো একইরকম।

খুব জলদি দেখা হবে ..গুরু! এই পৃথিবীতে আপনার আগমন দিবসটি শুভ হোক। শুভ জন্মদিন।

Advertisement