আইএমএফের কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব নাকচ

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপিঋণসহ ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন দুর্বলতা রোধে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (টিএ) দিতে চেয়েছিল সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপিঋণসহ ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন দুর্বলতা হল দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এখানে বিদেশি সংস্থা কি করবে? বরং তাদের সহায়তা নিতে গেলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। কারণ তারা তো পয়সা ছাড়া কাজ করবে না। সে ক্ষেত্রে শুধু অর্থ খরচই বাড়বে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বুধবার বলেন, আইএমএফ হাজারটা পরামর্শ দিল কিন্তু তা কার্যকর না হলে খেলাপিঋণ আদায় হবে না। মূলত কেন বাড়ছে খেলাপিঋণ, এটা সবার জানা। সরকার চাইছে নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে খেলাপিঋণ আদায়ের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন দুর্বলতা দূর করবে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ শুরু করেছে। বিশেষ করে আইনি সংস্কার। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিরা বছরের পর বছর আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। তাদের ধরার প্রস্তুতি চলছে। সেজন্য ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সংজ্ঞা নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এরপর দেউলিয়া আইন সংস্কারের কাজ চলছে।

সূত্র জানায়, ২৫ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম স্ট্যাবিলিটি রিভিউ (এফএসএসআর) মিশন বাংলাদেশ সফর করে। ১২ দিনের সফরে দেশের আর্থিক খাতের কোথায় কী দুর্বলতা তা খুঁজে বের করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে মিশনটি।

বাংলাদেশে অবস্থিত আইএমএফের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে যে অস্থিরতা তা পর্যবেক্ষণ করেছে আইএমএফ।

বিশেষ করে উচ্চ খেলাপিঋণ, ঋণ অবলোপন, লোকসানি শাখা, একই ঋণ বারবার রিসিডিউল, খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিষয় চিহ্নিত করছে।

এছাড়া সুদের হার নিয়ে টানাপোড়েন, আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে বছরের পর বছর ঋণ ফেরত না দেয়া, সরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতাসহ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিভিন্ন সমস্যা শনাক্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, এর আগে ‘ব্যাসেল কোর প্রিন্সিপ্যালস ডিটেইলড অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ এর সুপারিশ বাস্তবায়ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে ৮টি বিষয়ে কী অগ্রগতি হয়েছে তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে আগেই।

এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেয়ার সুপারিশ করেছে আইএমএফ। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বর্তমানে এ ক্ষমতা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হাতে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা কমানো এবং স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম দূর করার জন্য একটি ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল’ গঠনেরও সুপারিশ করেছে।

সূত্র আরও জানায়, আইএমএফের পক্ষ থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিদ্যমান কয়েকটি ধারার সংশোধন চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ৪৬ ধারা। এ ধারায় ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

আইএমএফ আরও জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ডিন্যান্স ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন অগ্রগতি। ব্যাংকের অডিট কমিটি ও রিস্ক কমিটিতে অধিক হারে স্বতন্ত্র বা স্বাধীন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি। সরকারি পে-স্কেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন স্টাফদের সরিয়ে আনা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ম্যান্ডেটের সংশোধনী।

৬ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এ সময় সংস্থার পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা প্রদানেরও প্রস্তাব দেয়া হয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, এ মুহূর্তে কোনো কারিগরি সহায়তা নেয়া হবে না। যদি নেয়া হয় তা পরে জানানো হবে। আইএমএফের পরামর্শ আমলে নেয়া না নেয়ার পুরো এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোনো ঋণ খেলাপি যদি টাকা না দেয় তাতে আইএমএফ কি করতে পারবে? বরং সরকার যদি কোনো উদ্যোগ নেয় তাহলে টাকা আদায় করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, সহায়তার ছদ্মবেশে বিদেশি সংস্থাগুলো শুধু নিজেদের লাভই খোঁজে। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

Advertisement