আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানুন: রাষ্ট্রপতি

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এই সংক্রামক ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুক্রবার (১৪ মে) ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।এর আগে সকাল ১০টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে পরিবারের সদস্য এবং ‘অতি প্রয়োজনীয়’ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে করোনায় বিশ্বব্যাপী ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন দিয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাই জীবন-জীবিকাকে সচল রাখতে হলে আমাদের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।’রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আতঙ্কিত না হয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। আর এ জন্য দরকার দেশের প্রতিটি নাগরিককে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অর্থাৎ মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। ঈদের আনন্দঘন এ দিনে আমি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’অন্য সময় জাতীয় ঈদগাহে জামাতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির ঈদ উদযাপন শুরু হয়। নামাজ শেষে বঙ্গভবনে ফিরে পরিবারের সদস্য এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। মহামারির জন্য গত বছরের মতো এবারও সেসব কিছু হবে না।

অন্য সময় ঈদের দিন বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপ্রধান। স্ত্রী রাশিদা খানমসহ পরিবারের সদস্যরাও সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। সারি বেঁধে সবাই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।শুভেচ্ছা বিনিময়ের ফাঁকে ঈদের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি। করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণে কোনও আনুষ্ঠানিকতাই নেই বঙ্গভবনে।ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মাসব্যাপী সিয়াম পালন শেষে আমরা আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। ঈদ মুসলমানদের জন্য সর্ববৃহৎ আনন্দ-উৎসব। ঈদ উপলক্ষে ধনী-দরিদ্র, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে, সব স্থানে। কিন্তু এ বছর এমন একটা সময়ে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে, যখন গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চরমভাবে বিপর্যস্ত। করোনার কারণে দেশের জনগণের জীবন-জীবিকাও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জীবন বাঁচানো প্রথম অগ্রাধিকার হলেও জীবন বাঁচিয়ে রাখতে জীবিকার গুরুত্বও অনস্বীকার্য।’

দেশে কোভিড-১৯-এর টিকার সংকট দ্রুত সমাধান হবে আশা প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি বিপন্ন মানুষের সহায়তায় সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। করোনার টিকা প্রদান ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে টিকা কার্যক্রমে সাময়িক সমস্যা হলেও সরকার সর্ব্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি আশা করি, এ সমস্যারও আশু সমাধান হবে, ইনশাআল্লাহ।সমাজের অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ঈদুল ফিতর আমাদের আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। আমাদের চারপাশে অনেক অসহায় ও বিপন্ন মানুষ রয়েছে। তারা যেন ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সাধ্যমতো চেষ্টা চালাতে হবে।তিনি বলেন, ‘আমি আশা করবো সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ অসচ্ছল ও অসহায় মানুষের সাহায্যে সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখবে। ঈদ সবার জন্য বয়ে আনুক অনাবিল সুখ আর আনন্দ। মহান আল্লাহ আমাদের মহামারি করোনার হাত থেকে রক্ষা করুন, আমিন।’

Advertisement