আলোকিত ও উন্নত সিলেট গড়ার অভিযাত্রায় ড. মোমেনের এক বছর

সিলেট অফিস :: টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে একবছর পূর্ণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত ড. এ কে আব্দুল মোমেন বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

নির্বাচনে ড. মোমেন ‘আলোকিত ও উন্নত সিলেট গড়া’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একবছরে তা মূল্যায়ন করা কঠিন হলেও নিজের ভিশন বাস্তবায়নে পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছেন মোমেন- এমনটা বলছেন বিশ্লেষকরা।

ড. মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে কূটনীতির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সিলেটের উন্নয়নের কথা ভাবছেন। এজন্য শুরুতেই বলেছেন, তাঁর পররাষ্ট্রনীতি হবে- ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’।

বাংলাদেশে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা’র মতো বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুরু থেকেই বিশে^র বিভিন্ন দেশে ছুটে গেছেন বাংলাদেশ সরকারের এ মন্ত্রী। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনেও সক্ষম হয়েছেন এই কূটনীতিক। বিশ^বাসীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন- রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না গেলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের এই নেতা প্রবাসীদের নিয়ে বেশি ভাবেন। তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর বিমানবন্দরগুলোতে প্রবাসী হয়রানি রোধে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিত করতে দূতাবাসগুলোতে ২৪ ঘন্টা হটলাইন চালু, ‘দূতাবাস’ অ্যাপস চালু, প্রবাসীদের জন্য ‘লাইফ চেঞ্জার’ স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ জনবান্ধব দূতাবাস গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

তাঁর অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে সিলেট-ঢাকা ছয়লেন সড়ক নির্মাণ কাজ বেশ এগিয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এ কাজের টেন্ডার হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর প্রকল্পের আওতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সিলেট নগরজুড়ে ইতোমধ্যে ১১০টি অত্যাধুনিক আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

ড. মোমেনের প্রচেষ্টায় সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। তাঁর প্রচেষ্টা ও পরামর্শে সিলেটে ‘নগর এক্সপ্রেস’ চালু হয়েছে।

সিলেটবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তাঁর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে চা-নিলাম কেন্দ্র স্থাপন এবং সিলেটে শ্রম আদালত অনুমোদিত হয়েছে।
আধুনিক নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি একনেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে ১২শ’ ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রচেষ্টার অন্যতম বড় সাফল্য। সিলেট সিটির ইতিহাসে এতবড় বাজেটের প্রকল্প এর আগে কখনো অনুমোদন পায়নি।

শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া সিলেটকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জানিয়েছেন, দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম বছরেই নিজ নির্বাচনী এলাকায় (সিলেট মহানগর ও সদর উপজেলা) পাঁচটি হাইস্কুল, চারটি মাদরাসা ও দু’টি কলেজ এমপিওভূক্ত হয়েছে।

এলজিইডি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরী ও সদর উপজেলায় প্রায় একশ’টি প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

ড. মোমেন বলেন, সিলেট বিভাগে ১২৮টি কলেজের উন্নয়নে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আড়াই থেকে আট কোটি টাকা পর্যন্ত অনুদানের ব্যবস্থা করেছি। আমরা চাই, সিলেটে বেশি বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক। প্রয়োজনমত নতুন স্কুল গড়ে তোলা হোক।

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত বাস্তবায়নে তিনি জোরালো প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এর জায়গা নির্ধারণ হয়েছে, অস্থায়ী অফিসে কার্যক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর থেকে মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমও চালুর কথা রয়েছে।
সিলেট জেলা হাসপাতাল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

ড. মোমেন বলেছেন, ওসমানী মেডিকেলে আইসিইউ তিন ইউনিট থেকে ২০ ইউনিটে উন্নীত হয়েছে। নতুন করে পৃথক নবজাতক ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। ১০তলা নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। এটি চালু হলে রোগিদের ভোগান্তি কমবে।

গত একবছরে সিলেট শহর ও সদর উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনে কালভার্ট, ড্রেনেজ নির্মাণ, ছড়া ও খাল খনন ছাড়াও লালমাটিয়ায় ডাম্পিংগ্রাউন্ডে ক্লিনিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার স্থাপন, নগরীতে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে নদীর তীর সংরক্ষণ ও খাল পুনঃখনন ও সংস্কার, সমাজসেবা কার্যালয় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও হিজড়া ভাতা, উপবৃত্তি, জটিলরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা, চা শ্রমিকদের জন্য খাদ্য সহায়তা উল্লেখযোগ্য।

বর্তমান সরকারের একবছর ও নিজের দায়িত্বগ্রহণের একবছর পূর্তি উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন নির্বাচনি এলাকা সিলেটসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমার যতসব সফলতা সেটা বর্তমান সরকারের সফলতা। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছিলেন বলে সিলেটবাসী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নতুন সরকার গঠন আমাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। এর সকল কৃতিত্ব বর্তমান সরকার ও সরকার প্রধানের।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। সিলেটের যেকোন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক থাকার কারণে।’

এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আলোকিত ও উন্নত সিলেট গড়া আমার স্বপ্ন। ইতিমধ্যে অগ্রাধিকার প্রকল্পের অনেক কিছুই দৃশম্যান হয়েছে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সকলে মিলে সিলেটকে এগিয়ে নিতে চাই।’

Advertisement