পাবলিক মিটিংয়ে পূর্বের ভুলের জন্যে ইনার নর্থ লন্ডন চীফ করোনারের এ্যাপোলজি!

কামাল মেহেদী ।। ২০১৩ সালের মে মাসে ইনার নর্থ লন্ডনের সিনিয়র করোনার হিসেবে যোগদানের পর গত চার বছরে তিন বার হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জে পরাজিত হয়ে অবশেষে পাবলিক কনসালটেশন সভায় এ্যাপোলজি জানিয়েছেন সিনিয়র করোনার মেরি হেসেল। ক্যামডেন, টাওয়ার হ্যামলেটস, হ্যাকনি এবং ইজলিংটন বারা নিয়ে গঠিত ইনার নর্থ লন্ডন কনরোনার সার্ভিস। ইনার নর্থ লন্ডন কনসোর্টিয়ামে আউট অব আওয়ার এবং উইকএন্ড সার্ভিস নন ইনভেইসিভ পোস্ট মর্টেম পদ্ধতি চালু এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে মরদেহ রিলিজের জন্যে দাবী জানিয়ে আসছেন এই চার বারার জুইশ এবং মুসলিম কমিউনিটির মানুষ। তবে সভায় টাওয়ার হ্যামলেটসের জুইশ এবং মুসলিম কমিউনিটির পক্ষে কাউন্সিল বা রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক কোনো সংগঠনের প্রতিনিধিকে কথা বলতে শোনা যায়নি।

https://britbangla24.com/news/34999

বৃহস্পতিবার কেমডেন টাউন হলে এই পাবলিক কসনালটেশন মিটিং ডাকেন ইনার নর্থ লন্ডনের সিনিয়র করোনার ম্যারি হেসেল। বিকাল ৬টায় পাবলিক মিটিং শুরু করেন তিনি। এরমধ্যে প্রায় আধাঘন্টার বেশি সময় নিয়ে নিজের বক্তব্যই তুলে ধরেন। একটি লিখিত প্রটৌকল বানানোর পক্ষে সবার মতামত কামনা করেন তিনি। একই সঙ্গে এক ঘন্টার বুকিংয়ের কথা বলে সাতটার সময় মিটিং শেষ করতে হবে বলেও সময় বেধে দেন। তবে কেমডেনের ডেপুটি লিডারের অনুমতি সাপেক্ষে মিটিং চলে প্রায় আটটা পর্যন্ত।

সিনিয়র করোনার মেরি হ্যাসলের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বশেষ জুডিশিয়াল রিভিউ হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। রিভিউ শেষে হাইকোর্টের মতামতে জানানো হয়, সিনিয়র করোনারের মেরি হেসেলের পলিসি বেআইনী। তিনি মানবাধিকার ও সমধিকার আইন লঙ্ঘন করছেন বলেও হাইকোর্টের মতামতে উল্লেখ করা হয়। সিনিয়র করোনার মেরি হেসেল ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে সার্ভিস দিতে চান। চার বারার জুইশ এবং মুসলিম কমিউনিটির মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে বৃটেনের জাস্টিস মিনিষ্ট্র প্রণীত গাইড লাইন মানতে রাজী নয়। গাইড লাইনে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যে পরিস্কার করে উল্লেখ রয়েছে। হাইকোর্টের মতামত প্রকাশের পর নিজের অবস্থান বিবেচনা করার জন্যে লন্ডন মেয়র সাদিক খানও ইনার নর্থ লন্ডনের সিনিয়র করোনার মেরি হেসেলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কমিউনিটির সঙ্গে মিলে কাজ করতে অসুবিধা হলে প্রয়োজনে অন্যত্র বদলে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তখন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগসও।

https://britbangla24.com/news/22072

পাবলিক মিটিংয়ে আসা কাউন্সিলর এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সর্বশেষ হাইকোর্টের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্নবানে বিদ্ধ করেন সিনিয়র করোনার মেরি হেসেলকে।
কেমডেনের বাসিন্দা রবার্টো পাবলিক মিটিংয়ে আসার সময় সঙ্গে হাইকোর্টের সেই মতামতের কপিটিটিও নিয়ে আসেন। তিনি ক্ষোব্ধ কন্ঠে বলেন, কমিউনিটির মানুষ কি চায় সেটাও যেমন চীফ করোনার জানেন তেমনি সরকারী গাইড লাইনে কি বলা আছে সেটাও তিনি জানেন। সূতরাং এখানে নতুন করে কমিউনিটির মানুষের মতামতের আর প্রয়োজন নাই।
ন্যাশনাল ব্যারিয়াল কাউন্সিল অব ইউকের চেয়ার এবং গার্ডেন অব পিসের ডাইরেক্টর মোহাম্মদ ওমর বলেন, আজকের এই মিটিংয়ের দরকার ছিল না। সবকিছু জেনে শুনে চীফ করোনার মিটিং ডেকে লিখিত প্রটৌকল বানাতে চান, এটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়। মিটিংয়ে এসেছিলেন স্টামফোর্ডহীলস এ্যাডাথ বারিয়াল সোসাইটির মূখপাত্র রাব্বি এশার গ্যাট। তার পরিস্কার কথা, এই চীফ করোনারের চলে যাওয়া উচিত।
তবে সভায় তোপের মুখে পড়ে পূর্বের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্যে তিন বার এ্যাপোলজি জানান সিনিয়র করোনার মেরি হেসেল। পূর্বের মতো আর কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলেও সভায় আশ্বাস দেন তিনি। এছাড়া নন ইনভেইসিভ অর্থাৎ স্ক্যানিং সিস্টেম চালুর প্রস্তুতি চলছে বলে সভায় জানালেও আউট অব আওয়ার এবং উইকএন্ড সার্ভিস চালুর ক্ষেত্রে রিসোর্স অর্থাৎ স্টাফ স্বল্পতার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু কেমডেনের কাউন্সিলর আব্দুল হাই এতে আপত্তি তোলেন। তিনি জানান, আউট অব আওয়ার এবং উইকেন্ড সার্ভিসের জন্যে চার বারার পক্ষ থেকে করোনার অফিসকে সব ধরনের সমর্থনের কথা ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিস বাড়াতে হলে কেমডেন কাউন্সিল থেকে তারও প্রস্তাব দেওয়া আছে।
ইনার নর্থ লন্ডন করোনার সার্ভিসে আউট অব আওয়ার এবং উইকেন্ড সার্ভিস এবং নন ইনভেইসিভস সার্ভিসের দাবীতে ২০১৩ সাল থেকে ক্যাম্পেইন শুরু করেন কেমডেন কাউন্সিলের লিড মেম্বার কাউন্সিলর আব্দুল হাই।
করোনার অফিস বা সিনিয়র করোনার জবাবদিহী করে মিনিষ্ট্রি অব জাস্টিসের কাছে। তবে করোনার অফিসারদের বেতন থেকে শুরু করে করোনার অফিসের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ করে স্থানীয় কাউন্সিল। টাওয়ার হ্যামলেটস, ক্যামডেন, হ্যাকনি এবং ইজলিং কাউন্সিল ইনার নর্থ লন্ডন করোনারের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ করে। এই চার বারার মধ্যে ক্যামডেন হল লিড বারা। এ কারণে এই ক্যাম্পেইনে লিড করছে ক্যামডেন।
সিনিয়র করোনার মেরি হেসেলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে তিনটি জুডিশিয়াল রিভিউতেও চার বারার কয়েকশ হাজার পাউন্ড ব্যয় হয়েছে। পরামর্শ সভায় ক্যামডেন, হ্যাকনি, ইজলিংটন কাউন্সিলর এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সিনিয়র করোনার মেরি হেসেলকে প্রশ্নবানে বিদ্ধ করলেও টাওয়ার হ্যামলেটসের কোনো প্রতিনিধিকে কথা বলতে শুনা যায়নি ওই সভায়। ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ছিল পরামর্শ সভা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ক্যামডেন টাউন হলে চলে ইনার নর্থ লন্ডন করোনারের পাবলিক কনসালটেশন মিটিং। এই মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্যে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্যে পাবলিককে সচেতন করা হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোনো কাউন্সিলর সেখানে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি।

https://britbangla24.com/news/22072

একই সন্ধ্যা প্রায় পৌঁনে নটার দিকে বেথনালগ্রীনে ফিতা কেটে একটি রেষ্টুরেন্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাহী মেয়রের সঙ্গে তখন ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আসমা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
শুধু ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি নয়, টোরি, লিবডেম, টাওয়ার হ্যামলেটস পিপল এলায়েন্স, এসপায়ার, প্রায় চল্লিশটি মসজিদ নিয়ে গঠিত কাউন্সিল অব মস্কসহ রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক কোনো সংগঠনের কোনো প্রতিনিধিকেই বারার জুইশ এবং মুসলিম কমিউনিটির পক্ষে কথা বলতে শুনা যায়নি ইনার নর্থ লন্ডন করোনারের এই সভায়।

Advertisement