‘ইসি বাস্তবে প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি, সংস্কার প্রয়োজন’

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ‘নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবে এই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশত হয় তাহলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে।’

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২০ উপলক্ষে আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহায়ক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ, শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না-এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশত হয় তবে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের তিন বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। বাকি দুবছর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে নিয়ে রাজধানীবাসীর উৎসুক্য, উদ্বেগ অন্তহীন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতোই এতে সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ।’

অতীতের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘অতীতে যেসব সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, তাতে প্রথম কুমিল্লা ও রংপুর সিটি নির্বাচনে আমাদের সফলতা ছিল। কিন্তু বেশিদিন আপনার রূপে আপনি বিভোর থাকা হলো না। পাঁচটি সিটি নির্বাচনের তিনটির বিষয়ে আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বরিশাল সিটি নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি। কিন্তু এই তিন সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। আসন্ন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিগত ওই তিন সিটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’

রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি কোনো নিরাশার কথা শোনাতে চাই না। এই নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও অন্যান্য সহায়ক কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করবেন, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অরিহার্য। দক্ষতা দিয়ে আপনারা নির্বাচনের সব অন্তরায় দূর করে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে শূন্য সহিষ্ণু নীতি দেখাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার শিথিলতাও সহ্য করা হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নির্বাচনে ইভিএম’র ব্যবহার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ঢাকার উভয় সিটি নির্বাচনে যেভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যদি সফলকাম হতে পারি তবে পরবর্তীতে সর্বক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইভিএমে ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।’

মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। নির্বাচনে ভোটারদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।’ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র হরণকারীদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

Advertisement