লন্ডন, ২৪ অক্টোবর : ইস্ট লন্ডন মসজিদর উদ্যোগে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো নবম মুসলিম চ্যারিটি রান । ৫ শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে ২৪ অক্টোবর, রোববার পূর্ব লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পর্কে এই চ্যারিটি রান অনুষ্ঠিত হয় । সকাল ৯টা থেকেই ছুটে আসতে থাকেন কমিউনিটির নানা বয়সের শিশু-কিশোর, তরুণ যুবক ও বয়োবৃদ্ধরা। সকলেরই গন্তব্য ছিলো ভিক্টোরিয়া পার্ক । নির্ধারিত স্থানে পৌছলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে মুসলিম চ্যারিটি রানের মনোগ্রাম-খচিত স্পেশাল টি-শার্ট দেয়া হয় । মূল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে আশরাফ আলীর নির্দেশনায় দীর্ঘক্ষণ চলে শরীরচর্চা । এরপর সকলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান ।
ঘড়ির কাটা যখন ১০টায় ছুঁই ছুঁই, তখন সকলেই গিয়ে দাঁড়ালেন স্টার্টিং পয়েন্টে। ১০টা ২৭ মিনিটে বেজে উঠলো হুইশেল। শুরু হলো ৫ কিলোমিটার দৌঁড়। মাত্র ২২মিনিটে পাঁচ কিলোমিটার রুট ঘুরে এসে প্রথম হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি করেন ৩৫ থেকে ৫০ বয়স ক্যাগারিতে অংশগ্রহণকারি আবুল তাহিদ । অন্যান্য বিজয়ীরাও আধঘন্টার আগেই পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসেন । আর এভাবেই ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও বিভিন্ন চ্যারিটির জন্য ফান্ডরেইজ করলেন অংশগ্রহণকারীরা।
২০১২ সালে শুরু হওয়া এই চ্যারিটি রান প্রথম তিন বছর ‘রান ফর ইউর মস্ক’ নামে পরিচালিত হয় । সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে কিছু পরিবর্তন এনে ক্যাম্পেইনের নামকরণ করা হয় মুসলিম চ্যারিটি রান। প্রথম তিন বছর শুধু ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজ করা হয় । আর ‘মুসলিম চ্যারিটি রান’ নামকরণের পর থেকে ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজিংয়ের পাশাপাশি অন্যান্য চ্যারিটি সংস্থার জন্যও ফান্ডরেইজ করছেন অংশগ্রহণকারীরা। মহামারির কারণে ২০২০ সালে মুসলিম চ্যারিটি রান অনুষ্ঠিত হয়নি।
চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫টি ক্যাটাগরিতে ৫ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় । এদের মধ্যে অনুর্ধ ১২ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন আব্দুল ওয়াহেদ। তিনি মাত্র ২৫ মিনিট ৫ সেকেন্ডে পাঁচ কিলোমিটার রুট ঘুরে আসেন। তাছাড়া ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন আহমেদ দাইয়ান। তিনি ২৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিযোগিতা শেষ করেন। এরপর ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন মাজিন আবদু । তিনি ২০ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে ৫ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করেন। ২৫ থেকে ৩৪ বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন আতিফ হোসাইন । তিনি ২২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হন। ৩৫ থেকে ৫০ বছর ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হন আবু তাহিদ । তিনি মাত্র ২২ মিনিটে দৌড় সম্পন্ন করেন। তাছাড়া সর্বশেষ ৫১ ও ততোর্ধ বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন মুর্শেদ আহমদ । তিনি ২২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে দৌড় সম্পন্ন করেন । প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে মুসলিম চ্যারিটি রানের মনোগ্রামখচিত ক্রিস্টাল ট্রফি তুলে দেয়া হয়।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিনিয়র ফান্ডরেইজিং অফিসার তজম্মুল আলীর উপস্থাপনায় পুরষ্কার বিতরনী পর্বে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব খান এবং ইমাম ও খতীব শায়েখ আব্দুল কাইয়ূম।
এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নির্বাহী মেয়র জন বিগস মুসলিম চ্যারিটি রানের মাধ্যমে কমিউনিটির বিভিন্নস্তরের মানুষকে ভালোকাজে সমবেত করার জন্য ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষ শরীরচর্চায় উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থার জন্য ফান্ডরেইজ করতে পারছে। এ বছর ২০টি চ্যারিটি সংস্থা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত । তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমরা গত দেড় বছর এক দুঃসহ সময় পার করেছি । এখন আমরা মুক্তজীবনে চলাফেরা করতে পারছি। তবে আসন্ন শীতে আবারো করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকে জনসমক্ষে চলাচলের সময় সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, শুরু থেকেই মুসলিম চ্যারিটি রানকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল সার্বিক সহায়তা দিয়ে আসছে। আগামীতে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মুসলিম চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই রান কমিউনিটির মানুষের একটি বার্ষিক মিলন মেলায় রূপান্তরিত হয়েছে। কমিউনিটির মানুষের সহযোগিতায় এই চ্যারিটি রান আগামীতে আরো সম্প্রসারিত হবে ইনশাল্লাহ।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ূব খান সমাপনী বক্তব্যে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, মুসলিম চ্যারিটি রান কমিউনিটির জন্য একটি আনন্দঘন কর্মসূচি। এ বছরের আবহাওয়া ছিলো দৌঁড়ের জন্য যথোপযুক্ত। খুব গরম নয়, আবার ঠাণ্ডাও নয়। অনেকেই স্বপরিবারে পার্কে এসেছেন। আনন্দ উপভোগ করেছেন। এটা আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি বলেন, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা একদিকে যেমন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজ করতে পারছি, অপরদিকে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উদ্ধদ্ধ হচ্ছি। মুসলিম চ্যারিটি রান আমাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণ বয়ে আনছে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম এর মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পুরস্কার বিতরনী পর্বের সমাপ্তি ঘটে। মোনাজাতের পুর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, যদিও আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে মুসলিম চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণ করে থাকি, তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকা উচিত এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন। বেশি সাওয়াবের উদ্দেশ্যে যেমন আমরা পায়ে হেঁটে মসজিদে যাই, দৌড়ের ক্ষেত্রেও তেমনই সাওয়াবের উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
৯ বছর যাবত মুসলিম চ্যারিটি রান সফলতার সাথে আয়োজন করায় চ্যারিটি রানের মূল অর্গানাইজার, ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিনিয়র ফান্ডরেইজিং অফিসার তজম্মুল আলীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, চ্যারিটি রান উপলক্ষে ভিক্টোরিয়া পর্কে রাখা হয়েছিলো খেলাধূলার নানা সামগ্রী। শিশু কিশোরেরা প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় পরিবারের সাথে আনন্দে আনন্দে কাটায়। তাছাড়া ছিলো ফ্রি হেলথ চেকের ব্যবস্থা। অংশগ্রহণকারিদের অনেকেই হেলথ স্টলে নিজের শারিরীক চেক-আপ করান ।
এবার ২০টি চ্যারিটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান মুসলিম চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণ করে। চ্যারিটিগুলো হলো: ইস্ট লন্ডন মস্ক, মুনতাদা এইড, হিউম্যান অ্যাপিল, ওয়ান ন্যাশন, হ্যামলেটসওয়ে মসজিদ, লনলী অরফ্যান, হাগস, স্টেপনী শাহজালাল মস্ক, গ্লোবাল রিলিফ ট্রাস্ট, লন্ডন ইসলামিক স্কল, গ্লোবাল ডেভোলাপমেন্ট ফাউন্ডেশন, হিউম্যান এইড ইউকে, গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট, লাইমহাউজ মসজিদ, ইয়াসীন ইয়ুথ, গিফট অব নলেজ, হিউম্যান কেয়ার ইনিশিয়েটিভ, লন্ডন ইস্ট একাডেমী এন্ড আল-মিজান স্কল, হেলপ ইয়াতিম, বক্সার ফিপটিন একাডেমি।
স্পনস ও সাপোর্টার ছিলো লঞ্চগুড ফান্ডরেইজিং প্লাটফর্ম, আল-খায়ের ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন ও হাশম্যাট হেলথ লিমিটেড, মুসলিম মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, রিকানেকটিং আওয়ার কমিউনিটি থ্রো কাইন্ডন্যাস ও ইস্ট লন্ডন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ প্রিভেনশন।