সিলেট অফিস :: গেল কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিস্তার ঘটেছে ইয়াবার। এই মরণনেশায় আসক্ত হচ্ছে কিশোর, তরুণ, যুবক সবাই। সিলেট অঞ্চলে বছর দুয়েক আগেও ইয়াবার প্রভাব তেমনটা ছিল না। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে এখানে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। বেশ কিছু দিন ধরে সিলেট সীমান্তকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এর ফলে এ অঞ্চলের সর্বত্র ইয়াবার বিস্তার ঘটছে দ্রুত।
র্যাব ও পুলিশ সূত্র বলছে, সিলেটে এখন প্রায় প্রতিদিনই ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। একশ-দুইশ পিস ইয়াবাসহ মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়ছে হরহামেশা। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, গেল কিছুদিন ধরে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার বড় বড় চালানও ধরা পড়ছে।
র্যাব ও পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, গত প্রায় এক মাসে সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ধরা পড়েছে। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় চালান ধরা পড়ে গত ১২ অক্টোবর। ওইদিন বিকালে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট এলাকা থেকে ১৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই যুবককে আটক করে র্যাব। এছাড়া গেল ২ অক্টোবর বিয়ানীবাজার থেকে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ পুলিশ দুজনকে আটক করে।
এর বাইরে গেল প্রায় এক মাসে বড় চালানের মধ্যে ছিল গত ১৮ অক্টোবর নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে দুই হাজার ১৯৭ পিস ইয়াবাসহ দুজনকে আটক, ১০ অক্টোবর দুই হাজার পিস ইয়াবাসহ এক যুবক আটক, ৯ অক্টোবর জৈন্তাপুরের হরিপুর বাজার থেকে ৯৭৪ পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক, ৪ অক্টোবর নগরীর শাহপরানের ইসলামপুর বাজার থেকে তিন হাজার ৩৮৮ পিস ইয়াবাসহ এক যুবক আটক। সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যার পর গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমনিয়া বাজার থেকে ৯০৫ পিস ইয়াবাসহ এক যুবককে আটক করে র্যাব।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়েই ভারত থেকে ইয়াবা ঢুকছে সিলেটে। তবে ইয়াবার বিরুদ্ধে তাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
র্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান সিলেটভিউকে বলেন, ‘জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ওপার থেকে সিলেটে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ইয়াবার চালান আটক করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু নিম্নস্তরের ব্যবসায়ীই নয়, ইয়াবার মূলহোতাদেরও ধরছে র্যাব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগেও বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট ছিল চট্টগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা। তবে সেখানে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং গেল বছর মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের পর মাদক কারবারিরা পাল্টে ফেলে রুট। তারা ইয়াবা পাচারের জন্য বেছে নেয় সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা তৈরির বড় বড় কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ওই এলাকা থেকে ভারতের মণিপুর, ইম্ফল ও শিলচর হয়ে ইয়াবার চালান আসে দেশটির করিমগঞ্জে। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তের ঠিক ওপারে অবস্থান করিমগঞ্জের। সেখান থেকেই জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল, সুলতানপুর ইউনিয়নের অজরগাঁও, ইছাপুর, সুলতানপুর, সহিদাবাদ ও ভক্তিপুর, বারঠাকুরী ইউনিয়নের লাড়িগ্রাম ও ছালেহপুর, জকিগঞ্জ ইউনিয়নের সেনাপতির চক, মানিকপুর ও ছবড়িয়া, কসকনকপুর ইউনিয়নের বলরামেরচক ও উত্তর আইয়র দিয়ে বানের জলের মতো ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। এছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্য হয়ে আসাম ও মেঘালয় রাজ্য দিয়ে মাদক কারবারিরা ইয়াবা নিয়ে আসছে সিলেট সীমান্তের ওপারে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে পাচার করা হচ্ছে বাংলাদেশে।
সূত্র মতে, জকিগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতের অংশে ইয়াবা তৈরির ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এ বিষয়টি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকেও জানিয়েছে। তবে বিএসএফ বরাবরই বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, ইয়াবা ব্যবসার সাথে রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরাও জড়িয়ে পড়ছেন। ইয়াবা পাচারের ঘটনায় জকিগঞ্জের খলাছড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহীন আহমদ এবং ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা আছে। তারা গ্রেফতারও হয়েছিলেন। গেল ২৬ এপ্রিল জকিগঞ্জ পৌর যুবলীগের সদস্য শাহরিয়ার রহমানকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছিল।