অরুপ রায়, ভারত : ইচ্ছাশক্তি , আত্মপ্রত্যয়ের দৃঢ়তা ও মহৎ উদ্দেশ্য কোন কিছুর কাছেই যে হার মানে না সেটাই পুনঃপ্রমাণিত হলো সুদূর কন্যাকুমারীর ভিন্ন ভাবে সক্ষম যুবক আর থাঙ্গারাজার করিমগঞ্জ পদার্পণে। এক ভারত বিজয়ী ভারত সংকল্প সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং সন্ন্যাসী -পরিব্রাজক রাষ্ট্রনায়ক স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণকে অনুপ্রাণিত করার মহতী উদ্দেশ্য নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ শিলা স্মারক এর ৫০ বছর পূর্তিতে গত ১১ ই সেপ্টেম্বর, কন্যাকুমারী থেকে যাত্রা শুরু করেন বিবেকানন্দ কেন্দ্র বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশনে ডিপ্লোমা প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়র এবং ভিন্ন ভাবে সক্ষম সাহসী যুবক আর থাঙ্গারাজা ।এই শুভারম্ভে ঐ দিন উপস্থিত থেকে ওনাকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন বিবেকানন্দ কেন্দ্র কন্যাকুমারীর সর্বভারতীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ভানুদাস থাকরে, হনুমন্ত রাও,শ্রী আনন্দশ্রী, রঘুনাথন নায়ার প্রমুখ ।
যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২টি রাজ্যের রাজধানীকে ছুঁয়ে মোট দূরত্ব ১৮,০০০ কিঃমি এর প্রায় ১২,৫০০ কিমি অতিক্রম করে এবং মোট ১০১ দিনের যাত্রার ৬৪ তম দিনে শনিবার করিমগঞ্জে এসে পৌঁছাতে সক্ষম হন থাঙ্গারাজা ।এখানে বিবেকানন্দ কেন্দ্র কন্যাকুমারী, করিমগঞ্জ কার্য্যস্থানের আতিথেয়তা গ্রহণ করে সরস্বতী বিদ্যানিকেতন, করিমগঞ্জ, সরস্বতী বিদ্যানিকেতন কর্ণমধু, বিজেপি কার্য্যালয়, করিমগঞ্জ, পুরসভা,করিমগঞ্জ, সার্কিট হাউস প্রাঙ্গনে অবস্থানরত প্রায় সহস্রাধিক মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ওনার উক্ত যাত্রার উদ্দেশ্য বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেন ও ওনার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন l
এদিন থাংগারাজা সহ সংযোজক এর বাড়িতে অবস্থান কালে বিবেকানন্দ কেন্দ্র কন্যাকুমারী, করিমগঞ্জ কার্য্যস্থানের “এক ভারত বিজয়ী ভারত ” এর প্রমুখ মৃণাল কান্তি দত্ত, মাগদর্শক ,দূর্বাদল দাস, সাহিত্য সেবাতলী প্রমুখ সুচন্দনা দেব সরকার ও কার্য্যকরতা পার্থ দত্ত প্রমুখ এর সঙ্গে এক একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন এবং সাংগঠনিক বিভিন্ন দিক বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেন। তবে দিনের বেলা তার সঙ্গে ছিলেন সংগঠনের জীবনব্রত কার্য্যকর্তা সুরজ মুখার্জি, বিভাস চন্দ দাস, শিবম পুরকায়স্থ প্রমুখ l
এদিকে ত্রিপুরা থেকে ফিরে এসে আবার করিমগঞ্জে আসেন সোমবার l এদিন জেলা পাথারকান্দি কলেজে তাকে বিফুল অভ্যর্থনা জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র ছাত্রীর লে উপলক্ষে এক প্রকাশ্য সভায় নিজের ভারত ভ্রমণের অনেক কাহিনী তুলে ধরেন l কিভাবে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর, পাঞ্জব থেকে গুজরাট. অরুণাচল থেকে ত্রিপুরা ভ্রমণে মানুষের আদর আপ্যাযান ভালোবাসা পেয়েছেন বিশেষ করে অসম তথা উত্তর পূর্ব ভারতের প্রাকৃতিক সুন্দর্য্য মানুষের ভালো ব্যবহার তাকে আকৃষ্ট করেছে বলে জানান । এদিন দুপুরে করিমগঞ্জের জেলা শাসক এম পি আম্বামুথন. রাতাবাড়ির বিধায়ক বিজয়ী মালাকার. জেলা পরিষদের সভাপতি আশিষ নাথ পৃথক পৃথক ভাবে তাকে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা বার্তা দেন l জেলা পরিষদের সকল সদস্য আর থাঙ্গারাজার এমন উদ্যগকে অভিনন্দন জানান l
তামিল ও ইংরেজিতে দক্ষ থাঙ্গারাজা করিমগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে ওনার বক্তব্যে বলেন আমরা যদি স্বামীজির আদর্শকে জীবনে পাথেয় করে চলি তবে সমাজের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান অনায়াসে হয়ে যাবে । তিনি বলেন স্বামীজির আদর্শে দেশের যুব প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করাই তাঁর মূল লক্ষ্য ।তাই তাঁর দুপায়ের অকেজোতাকে তোয়াক্কা না করে মনে প্রচণ্ড উদ্যম নিয়ে স্কুটিকে সঙ্গী করে এই মহতী উদ্দেশ্য সাধনায় ব্রতী হয়েছেন । তিনি স্বামীজীর বার্তা ,” দেশ সমাজকে নিয়ে সঠিক ধারণা ও সত্যপোলব্দির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস পেলে আপনি যা কিছু করতে পারবেন” সর্বসমক্ষে তুলে ধরেন । যদিও এই যাত্রা পথে এখন অব্দি ওনার বিশেষ কোন অসুবিধা হয় নাই তথাপি কখনও কখনও আবহাওয়ার পরিবর্তন ও কোথাও কোথাও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা ওনাকে কিছুটা সমস্যায় ফেলে । বিবাহিত ও এক কন্যা সন্তানের পিতা থাঙ্গারাজার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ওনার স্ত্রী,দুই ভাই ও মাতা-পিতা বর্তমান । ওনার মা ও স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল এর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন ।ওনার পিতা পেশায় একটি বেসরকারি পরিবহন সংস্থার একজন মুটবহনকারী । এখানে উল্লেখ্য যে উনি ২০০৮ সন পর্যন্ত একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরিরত ছিলেন ।কিন্তু স্বামীজীর আদর্শে মনে প্রাণে অনুপ্রাণিত হয়ে চাকুরি ছেড়ে বিবেকানন্দ কেন্দ্র কন্যাকুমারীর একজন সর্বকালীন সদস্য হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন । “শান্তির দূত “হিসেবে এটি তাঁর পঞ্চম যাত্রা ।এর আগেও মোটরসাইকেল নিয়ে ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছেন এই কৃষ্ন কায় যুবকটি ।এবারের যাত্রা আগামী ২০শে ডিসেম্বর কন্যাকুমারীতেই শেষ হবে । থাঙ্গারাজা ঐদিন বিবেকানন্দ কেন্দ্র কন্যাকুমারী, করিমগঞ্জ কার্য্যস্থানের সহ সংযোজকের বাড়িতে রাত্রি যাপন করে রবিবার সকালে ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ।করিমগঞ্জ ছাড়ার প্রাক্কালে এই প্রতিবেদককে করিমগঞ্জ সফরের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন যে এখানের মানুষের আতিথেয়তায় তিনি সত্যিই অভিভূত ।তিনি করিমগঞ্জবাসীকে ওনার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা, সশ্রদ্ধ অভিবাদন ও ভালোবাসা জানিয়ে ও সকলের মঙ্গল কামনা করে করিমগঞ্জ থেকে প্রস্থান করেন ।