ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সানা মারিনের বয়স কম হলেও অর্জনে কোনো ঘাটতি নেই। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার উঠে আসা খুবই সাধারণ একটি পরিবার থেকে। আর দশটি শিশুর মতো স্বাভাবিক ছিল না তার বেড়ে ওঠা।
অল্প বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে বিশ্বের কনিষ্ঠতম এই প্রধানমন্ত্রীর। মায়ের কাছেই বেড়ে ওঠা। চরম আর্থিক সংকট ছিল পরিবারে।
তখন ১৫ বছর বয়সে একটি বেকারিতে কাজ নেন তিনি। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাময়িকী বিক্রি করে বেড়াতেন। সেখান থেকেই উঠত হাত খরচের টাকা।
এ ছাড়াও ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। পরিবার নিয়ে কখনই গর্ব করে কথা বলতে পারেননি তিনি। সবসময় হীনমন্যতাবোধ কাজ করেছে তার ভেতর।
সানা তার পরিবারের একমাত্র সদস্য, যিনি স্কুলজীবন শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা রেখেছেন। ২০ বছর বয়সে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি।
মাত্র দুই বছরের মাথায় রাজধানী হেলসিংকির উত্তরে টামপিরি শহরের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে হেরে যান। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি শুধু জিতেই ক্ষান্ত হননি, কাউন্সিলরদের নেতা বনেও যান। তখন তার বয়স ২৭ বছর।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর দেশটির মধ্য–বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এসডিপি) তার দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। ২০১৫ সালে এমপি নির্বাচিত হন। দলে বামপন্থী হিসেবেই তার পরিচিতি।
দলের শীর্ষে পৌঁছা ছিল তার জন্য অপরিহার্য। যোগ্যতা দিয়ে তিনি দ্রুত দলের শীর্ষ নেতা অ্যান্তি রিনের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তার ডেপুটি হওয়ার পাশাপাশি খুব কাছের পাত্রে পরিণত হন সানা।
গত শীতেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন অ্যান্তি রিন। তার রক্ত জমাট বেঁধে যায়। তিনি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অথচ সেই সময় তার দল ছিল নির্বাচনী প্রচারের তুঙ্গে। এটিই সুযোগ এনে দেয় সানাকে।
পরবর্তী সময়ে অ্যান্তি রিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার দলও নির্বাচনে জয়লাভ করে। সানাকে নতুন মন্ত্রিসভায় পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু মোটেও সুখকর হলো না তার প্রথম যাত্রা। ডাক ধর্মঘটের মুখে দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন সানার সরকারপ্রধান অ্যান্তি রিন।
এটিই শাপেবর হলো সানার জন্য। দলের আস্থাভোটে জিতে যান তিনি। অ্যান্তি রিনের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৫ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একটি শিশু হিসেবে তিনি নিজেকে অদৃশ্য ভাবতেন। কারণ নিজের পারিবারিক গঠন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারতেন না।
কিন্তু রাজনৈতিক অগ্রাধিকারগুলোই তার শৈশবকে বেশি প্রভাবিত করেছে বলে তিনি দাবি করেন। এসব অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ফিনল্যান্ডের উদারকল্যাণ ব্যবস্থা ও নিম্নপর্যায়ের অসাম্য।
তিনি বলেন, আমি একটি দারিদ্র্য পরিবার থেকে এসেছি। একটি শক্তিশালী কল্যাণ রাষ্ট্র না হলে আমি সফল হতে পারতাম না, সামনে এগিয়ে আসাও কঠিন হয়ে পড়ত।