ব্রিট বাংলা ডেস্ক : এবার কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের (সিএমএসএমই) জন্যও একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধন যোগানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিলের ৫০ শতাংশ অর্থের জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে এ তহবিল গঠন করা হয়েছে।
এ তহবিলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সিএমএসএমই খাতে চলতি মূলধন ঋণ সুবিধা প্রদানে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’। এর আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা৷
আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় সিএমএসএমই শিল্পের জন্য চলতি মূলধন ঋণ জোগানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ব্যবহার নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল, এ তহবিলের পুরোটাই বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব উৎস থেকে বিতরণ করতে হবে।
তবে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে থাকায় ঋণ বিতরণে অনাগ্রহ দেখাতে পারে- এমন আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল জোগান দিতে এই পুনরর্থায়ন স্কিম গঠন করা হলো। এর ফলে বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব উৎস থেকেই বিতরণ করতে হবে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, আর্থিক সহায়তা প্যাকেজে তারল্য সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে বড় ও সেবা শিল্পে চলতি মূলধন জোগানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ১৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে। এ তহবিলের মেয়াদ হবে তিন বছর। এ তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে অর্থ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আরোপিত হবে।
প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দকৃত তহবিলের বিপরীতে ৫০ শতাংশ অর্থ এই স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে। এ স্কিমের আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা দেওয়া হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও একই সুবিধা মিলবে। তবে গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা সর্বোচ্চ তিন মাসের বেশি হতে পারবে না। এর আওতায় পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
এতে আরো বলা হয়, ব্যাংকগুলোকে দেওয়া পুনঃঅর্থায়নকৃত অর্থ সুদসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব থেকে কেটে নেওয়া হবে। এলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসেবে পর্যাপ্ত তহবিল সংরক্ষণ করতে হবে।
এছাড়া পুনঃঅর্থায়নকৃত অর্থ উদ্দেশ্যবহির্ভূত অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সে পরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত সুদহারের অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এককালীন আদায় করতে পারবে।
এর আগে সিএমএসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ব্যবহার নিয়ে গত ১৩ এপ্রিলের সার্কুলার জারি করা হয়। এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ আওতায় ২০ হাজার কোটি টাকার ওই তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন উদ্যোক্তারা। তবে সরকারের দেওয়া ৫ শতাংশ ভর্তকীসহ ব্যাংক সুদপাবে ৯ শতাংশ। কোন ঋণ খেলাপি এবং খেলাপি হিসেবে সুবিধা নিয়েছেন এমন কেউ প্রণোদনার ঋণ পাবেন না। করোনার ক্ষতি কাঠিয়ে উঠার উদ্দেশ্যে গঠিত এই তহবিলের ঋণ বিতরণে কোন ধরনের অনিয়ম হলে প্রদত্ত সুবিধা বাতিল করা হবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সিএমএসএমই খাতের উৎপাদন ও সেবা উপখাতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে ব্যবসা ভিত্তিক মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে।
এই প্যাকেজের আওতায় উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা উপখাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বাৎসরিক মোট ঋণে আনুপাতিক হার হবে যথাক্রমে ৫০, ৩০ ও ২০ শতাংশ। বাৎসরিক মোট ঋণের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ গ্রাম অঞ্চলে এবং কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে। এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে সরকার ভর্তুকি দেবে এক বছর।
গত ২৪ এপ্রিল আর্থিক সহায়তা প্যাকেজে তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বড় সেবাশিল্পে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩০ হাজার টাকার তহবিলের ৫০ শতাংশ অর্থের যোগান দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করে।