কতোটা পথ পেরোলেই তবে পথিক বলা যায়

আ স ম মাসুম : সিরিয়া থেকে আগত শরণার্থীদের যাত্রা ছিলো সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরী হয়ে অষ্ট্রিয়া থেকে জার্মানী। কিন্তু অক্টোবরের মাঝামাঝি হঠাত করেই বন্ধ করে দেয়া হয় হাঙ্গেরী-সার্বিয়ার সীমান্ত। আটকা পড়ে হাজার শরণার্থী! প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় শরণার্থীদের জন্য হঠাতই যেনো ত্রানকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়ে আসে ক্রোয়েশিয়া! সেই ডেভর সুকারের ক্রোয়েশিয়া! বিশ্ব ফুটবলের খবর রাখেন যারা তাদের মনে নিশ্চয়ই জ্বলজ্বল করছে ১৯৯৮ সালের বিষ্ময় হয়ে উঠে আসা পশ্চিম ইউরোপের দেশটির তৃতীয় স্থান দখলের কথা, ভুলে যাবার কথা নয় বাঘা বাঘা সব খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে ডেভর সুকার নামের এক অখ্যাত খেলোয়ারের গোল্ডেন বুট জিতে বিশ্ব পরিচিতি পান!

সেই ডেভর সুকারের দেশ ক্রোয়েশিয়া হয়ে উঠে শরণার্থীদের ট্রানজিট কান্ট্রি। ইউরোপের দেশ হয়েও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে না ঢুকায় ইউরো সেখানে অচল হলেও সেখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অনেক বড় বড় দেশের চেয়ে মানবিকতার চাকা সচল রয়েছে।

কথা হয় একজন শরণার্থী তরুন ইবাইজার সাথে, ৪ দিন হাঙ্গেরীর বর্ডারের অনিশ্চয়তায় আটকে থাকা ইবাইজা জানায় – ক্রোয়েশিয়া যদি ট্রানজিট রুট না খুলে দিতো তাহলে হাজার হাজার শরণার্থীর ভবিষত কি হতো সেটা বলাই বাহুল্য!

ইবাইজার সাথে থাকা আরেক তরুন মালিক বলে, শুধু যদি বর্ডার বন্ধ করতো তাহলেও ঠিক ছিলো, যেভাবে আমাদের কুকুর বেড়ালের মতো লাঠি চার্জ করেছে সেটা অবর্ননীয়! সেই তুলনায় ক্রোয়েশিয়ায় আমাদের সাথে অন্তত মানুষের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।

আথিতেয়তার দিক থেকেও ক্রোয়েশিয়া অনেক এগিয়ে গ্রীস, ম্যাসেডিানিয়া, সার্বিয়ার তুলনায়। যেখানে ম্যাসেডোনিয়াতে ৬ ইউরোর টিকেট শরণার্থীদের কাছে বিক্রি করা হয় ২৫ ইউরোতে , যেখানে ম্যাসেডোনিয়া থেকে সার্বিয়ার ৫ মিনিটের রাস্তা ঘুরে যেতে হয় ১২ কিলোমিটার পায়ে হেটে সেখানে সার্বিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়াতে ঢুকলেই দেখা যাচ্ছে অন্য পরিবেশ! ক্রোয়েশিয়ার সরকার শরণার্থীদের মনে করছে মেহমান, আর তেমন নির্দেশেই কাজ করে যাচ্ছে তাদের পুলিশ আর আর্মি। প্রতিদিন তাই ৫ থেকে ৭ হাজার শরণার্থীদের যতো কম সময়ের মধ্যে স্লোভেনিয়ার উদ্দেশ্য ছেড়ে দেয়ার কাজই করছেন তারা। শরণার্থীদের অনেকেই জানেন না ডেভর সুকারের নাম, জানেন মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমারদের নাম। তবে এখন তারা জেনে গেছেন ক্রোয়েশিয়া নামের একটি দেশ জানে সব হারা মানুষদের মানুষ বলে গন্য করে! শরণার্থীদের বাসে সাংবাদিক উঠার নিয়ম নেই, তাই জানার সুযোগও নেই সেই বাসে কি বেজে উঠে কবির সুমনের সেই অমর গান –  কতোটা পথ পেরোলেই তবে পথিক বলা যায় / কতোটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার ডানা / কতো অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়… যে গান কবির সুমন গেয়েছিলেন ৯০ দশকে, সেই গানের নির্মম প্রতিচ্ছবি হচ্ছে ২০১৫ সালে।  ঘর সর্বহারা মানষদের সার্বিয়া-ক্রোয়েশিয়ার বর্ডার সিড থেকে বাসে করে ৬ ঘন্টার জার্নির পরবর্তী গন্তব্য স্লোভেনিয়া-অষ্ট্রিয়ার বর্ডার স্পিলফিল্ড, মানে নো ম্যানস ল্যান্ডে!

 

 

Advertisement