কবিতায় ভাষা বন্দনা

কবিতা -একুশ যেন
কবি – খালেদ চৌধুরী

একুশ যেন
আগুনঝরা ফাগুনের
লাল পলাশের গান
একুশ যেন
নিথর দেহের পাথর চোখের
প্রজ্জ্বলিত আহবান।

একুশ যেন
স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের
অনাবিল মিলন মেলা
একুশ যেন
বোবা মুখের সুখের-দুঃখের
প্রাণ খুলে কথা বলা।

একুশ যেন
পথ দেখানো – স্মৃতি মাখানো
রক্তিম ইতিহাস
একুশ যেন
হার মানা সেই দুর্বৃত্ত আর
বিজাতীয় কিছু লাশ।

সিলোটী ছড়া
আবদুল বাসিত মোহাম্মদ
====================
হুরু থাকতে একুশ আইলে
বিয়ানতু বেলা
কালা ব্যাজ বুকো লাগাই
খালি পাওর মেলা ।

পাড়ার হক্কল জুয়ান বুড়া
বাচ্চা-কাচ্চা মিলি
এক আতো দেশোর ফেলেগ
আরেক আতো কালা ফেলেগ
করতাম কিল্ কিলি
দু:খে আমরার বুকটা কাঁপতো
করতাম না অবহেলা ।

তখন আছিল শোক দিবস
ভাষা দিবস , রাস্ট্রভাষা বাঙলা চাই
বাঙলা ছাড়া ইংলিশ সাইনবোর্ড
আমরা রে ভাই মানি নাই
আন্তর্জাতিক দিবস অইয়া
হক্কল এখন খুশ
রাইত বারোটা এক মিনিটো
বাড়ি যায় গি জুস ।

জুতা পাওয়ে আটোইন সবে
গান গাইয়া গাইয়া
ফটো তোলার লাগি পাগল
শোক গেছে লুকাইয়া ।

খালি পাওয়ে সম্মান দেখাই
কালা ব্যাজে শোক
বিয়ানতু বেলা অইলে ভালা
কয় যে হক্কল লোক ।

দিলু নাসের

এই দেশটাকে আমি খুব ভালোবাসি
চারিদিক ঘেরা সবুজের সমারোহ
হাওর – সাগরে নীল জল রাশি রাশি
নদী ও পাহাড়ে জড়ানো মায়ার মোহ।

এদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি
কীযে অপরূপ চেয়ে থাকি অবিরত
কাদামাটি জলে করি তাই হাঁটাহাঁটি
যেদিকে তাকাই লাগে স্বপনের মতো।

মাথার উপরে সাদা মেঘমালা ভাসে
নিচে বিলে ঝিলে শাপলা মেয়ের হাসি
পুর্নিমা চাঁদ- তারা ঝিলমিল আকাশে
মনেপ্রাণে তাই এদেশেকে ভালোবাসি।

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের দেশ
এদেশের বুকে বহু বীর শুয়ে আছে
তাদের কাহিনী বলেও হবে না শেষ
আমার অনেক ঋণ এদেশের কাছে।

যত দূরে যাই থাকি তবু কাছাকাছি
এ মাটির বুকে বার বার ফিরে আসি
প্রকৃতির টানে প্রাণে প্রাণে মিশে আছি
তাইতো এদেশ প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।

বিশ্ব ভুবনে নেই আর কোন দেশ
যেখানে এমন শ্যামলীমা পরিবেশ
পৃথিবীর পথে ঘুরে ঘুরে আমি তাই
মাতৃভুমি বাংলার গান গাই…।

জুয়েল রাজ

একুশের জয়গান

তোর জন্যই কবিতা লিখি

তোর জন্য গাই গান।

তোর জন্যই আউল বাউল

প্রেমের অভিধান।

তোর জন্য লিখে রাখি

লক্ষ অভিমান

বুকের ভিতর সাত সাগরের

উতাল পাতাল টান।

তোর জন্য  বলতে পারি

ভালোবাসি  জান।

তুই  আমার জীবন মরণ

সাত রাজার ধন মান।

তোর জন্য সংসদ ভবন

সকাল সন্ধ্যা ব্যস্ত।

তোর জন্যই খবরের কাগজ

নইলে আর কি ছাপতো।

তোর জন্যই রুনা, সাবিনা

গলাতে সুর তোলে

তুই না হলে এসব লোকে

কবেই যেতো ভুলে।

তোর জন্য মিছিল, শ্লোগান

তোর জন্য কবি।

তুই না হলে সব ইতিহাস

দেয়ালে বাঁধা ছবি।

তোর জন্য বুকের রক্ত

রাজপথে দেয় ঢালি।

তোর জন্য  সাজিয়ে রাখে

ভালোবাসার থালি।

তোর জন্য মুক্ত আকাশ

তোর জন্য নেই শ্বাস।

তোর জন্য প্রেমে ভাসি

আমি বারোমাস।

তোর জন্যই বাংলা পেলো

একটি স্বাধীন দেশ

তুই না হলে পরাধীনতা

হতো কি আর শেষ।

তোর জন্য সংবিধান,আর

রাজা উজির সব

তোর জন্যই  টক শো জুড়ে

হাজার কলরব।

তোর জন্য পদ্মা মেঘনা

ঢেউ তুলে তার জলে।

তোর জন্য বাউরী বাতাস

খেলে রঙিলা পালে।

তুই হলে মা জন্মধাত্রী

রক্ত ঋণে বাঁধা প্রাণ।

তোর জন্য মা প্রভাত ফেরী

হাজার কলতান।

তোর জন্যই বঙ্গবন্ধু

রেসকোর্সে উঠে গর্জে।

তোর জন্যই সাত কোটি প্রাণ

এক হয় শোর্য বীর্যে।

তোর জন্য ত্রিশ লক্ষ প্রাণ

জীবন করে দান।

তোর জন্য সূর্য্য উঠে

গায় মানুষের জয়গান।

একুশ মানেই মাথা নতো না করা

এইতো  বীজমন্ত্র।

একুশ বেয়েই  বাংলাদেশ

স্বাধীনতা গণতন্ত্র।

 

শব্দের বীজ যখন অঙ্কুরিত হয়//

কবি শামীম আহমদ

আমার চিন্তা চেতনায় যখন
শব্দের বীজ অঙ্কুরিত হয় ,
আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি
খুলে দেই বুকের কপাট ,
মেলে ধরি আকাশের দিকে অন্তর দৃষ্টি

অবাক বিস্ময়ে দেখি
অঙ্কুর থেকে চারাগাছ হয়ে বেড়ে ওঠা
সবুজ পল্লবের কোলাকুলি ,বাতাসের সাথে-
করে মিতালি ,
ছন্দে ছন্দে তুলে ঝিরিঝিরি গুঞ্জন আনন্দে ;

আমি কোথায় যেনো হারিয়ে যাই,নদীর মতো
নদী যেমন অজানায় ছুটে চলে,কখনো উত্তাল
কখনো শান্ত,কখনো ভাসিয়ে দেয় দশ দিগন্ত ;
দেওয়ার আনন্দে হয় উল্লাসিত ভাঙনের কষ্টে
ঘুমিয়ে থাকে জলের উপর,ঠিক আমিও
না দেওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে অক্ষরের প্রতিমা
গড়ি শব্দে শব্দে ,
জীবনকে আঁকি মহাকালের পিটে ।

শব্দের বীজ থেকে চারা তারপর বৃক্ষ হয়ে
বেড়ে ওঠার অপেক্ষায় বসে থাকি অনাগত
ভবিষ্যতের পানে চেয়ে ।
যদি কলি থেকে ফুল তারপর ফল
পাখি এসে গান ধরে আনমনে,মনের আনন্দে ।

(নোটঃপ্রিয়জনদের হাতের পরশে মননের প্রকাশ)কৃতজ্ঞতা

Advertisement