ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: করোনা ভাইরাস এশিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহভাবে যেসব দেশকে আঘাত করেছে তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। এখানে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এ যাবত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে প্রতিদিনের সংক্রমণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৫৩। জুলাইয়ে এখানে সংক্রমণ ‘পিক’-এ পৌঁছে। এখন সংক্রমিতের সংখ্যা কমেছে শতকরা ৪০ ভাগের কিছু কম। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়ে আরো বলেছে, বাংলাদেশে করোনা মহামারির গতি ধীর হয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাকের উৎপাদনকারী এই দেশটি আবার মারাত্মক মন্দার মুখোমুখি। কারণ, এরই মধ্যে তাদের মূল বাজার ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয়দফা করোনা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
এই দেশটি করোনা নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি করলেও গার্মেন্ট খাতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলছেন, তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক খুচরা ক্রেতারা অর্ডার বিলম্বিত করছে অথবা দাম কম দাবি করছে। এর ফলে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। কমপক্ষে ১০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিককে কাজ থেকে বাইরে রাখা হয়েছে, না হয় লেঅফ ঘোষণা করা হয়েছে। ইউনিয়ন নেতাদের মতে, এর মধ্যে আবার জুলাইয়ের পর তিন ভাগের প্রায় এক ভাগকে কাজে নেয়া হয়েছে।
শনিবার করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে এশিয়ায়। এর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চল করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় অঞ্চল হিসেবে উঠে এসেছে। রয়টার্সের হিসাবে দেখা গেছে, ভারতে ধীরগতি ও দ্রুত সংক্রমণের হার কমে যাওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বে করোনা ভাইরাসে যে ৪ কোটি ২১ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তার চার ভাগের প্রায় এক ভাগই এশিয়ার। এখানে মারা গেছেন কমপক্ষে এক লাখ ৬৩ হাজার। সারাবিশ্বে করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন তার মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগই এই এশিয়ার। রয়টার্স এই রিপোর্ট করেছে বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাবের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বাস্তবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা পরীক্ষায় ঘাপলা আছে। অনেক দেশে কম করে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দেখানো হয়েছে।
এশিয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চলে কয়েক সপ্তাহে করোনা মোকাবিলায় অগ্রগতি দেখা গেছে। ভারতের মতো দেশে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে। পক্ষান্তরে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় তা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে শতকরা প্রায় ২১ ভাগই ভারতের। আর মৃতের শতকরা ১২ ভাগ ভারতীয়। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র চীন ও নিউজিল্যান্ডে। সেখানে করোনার বিস্তার দ্রুততর হতে পারেনি। রয়টার্সের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বে করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। ভারতে দিনে গড়ে কমপক্ষে ৫৭ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে আক্রান্তের শতকরা হার ৫৮। ভারতে গড়ে প্রতিদিন করোনায় মারা যাচ্ছেন ৭৬৪ জন। এ অবস্থা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। বিশ্বে প্রতি ১৩টি মুত্যুর মধ্যে ভারতে একটি।
ভারতে প্রায় ৭৮ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই তারা অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ লাখ মানুষ। ভারতে মারা গেছেন প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা ২ লাখ ২৪ হাজার ১২৮। তবে যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতে কমে আসছে। তা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের আশঙ্কা ভারতে এই সংক্রমণের গতি আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, সেখানে পুজোর ছুটি ও সামনে শীতকাল। এ সময়ে মারাত্মক দূষণ দেখা দেয়। এ সময়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রদাহ ও জটিলতা দেখা দেয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গত সপ্তাহে করোনায় ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে ফিলিপাইনকে ছাড়িয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়া। সেখানে গত সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তারা করোনাকে নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছে। আগামী বছর তারা অনধিক-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক। তাই দেশটির সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে করোনা টিকা পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও এই টিকা আসেনি বাজারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বছরের শুরুর দিকে পাওয়া যেতে পারে এ টিকা।
ওদিকে এক মাসের মধ্যে গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করে ফিলিপাইন। ফলে রাজধানী ম্যানিলায় আগামী ৩১ শে অক্টোবর পর্যন্ত আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
এশিয়ায় এমন ফল দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা সোমবার ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাকে এশিয়ার এসব দেশের উদাহরণ কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন।