ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: যারা চীনের অর্থনীতিতে জোরালো প্রবৃদ্ধি দেখতে অভ্যস্ত তারা হয়তবা এ বছর থমকে যাবেন। প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি সংকোচিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। গত নভেম্বরে শুরু হওয়া মহামারি কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে দেশটি মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে শিল্প কারখানা সবই বন্ধ করে দেয়। ক্রমান্বয়ে এখন তা খুলতে শুরু করেছে। এখন একটি মন্দা এড়ানোর জন্য নীতিগত সহায়তার পাশাপাশি অর্থনীতিতে প্রণোদনা দিচ্ছে।
২০০৭ সালে যখন বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় তখনও দেশটির অর্থনীতি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু সরকারের একটি বিশাল প্রণোদনার মধ্যদিয়ে সেই সংকট কাটানো সম্ভব হয়েছে। এবারও সেই সাফল্যের পথেই হাটছে দেশটি। ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরতার সঙ্গে লকডাউন পালন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে দেশটি অনেকটা এগিয়ে। অন্য দেশগুলোর তুলনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার অনেক কম।
চীনের পরিস্থিতিতে কম্পানিগুলো কিভাবে ব্যবসা শুরু করেছে এ নিয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে নিক, স্টারবাকস ও ডিজনের মতো কম্পানিগুলো। নিক জানায়, চীনের সংকটের উল্টোপিঠে তারা দেখেছে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ভালো উপায় শিখেছে। যা অন্যান্য দেশগুলোও অনুস্বরণ করতে পারে। এ সপ্তাহে গাড়ি কম্পানি ফক্সভাগেন যখন জার্মানির ওফসবার্গে তাদের বৃহৎ কারখানাটি খুলে দিল তারা জানাল, চীনের ৩৩ কারখানার ৩২টিতে যেভাবে ব্যবসা শুরু করেছে সে অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাচ্ছে।
ব্যবসায়ী নেতা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কম্পানিগুলো নতুন যে কৌশল গ্রহণ করছে তাতে জীবন আগের মতো স্বাভাবিক হবে না। কিন্তু আমরা যেভাবে কাজ করি, কেনাকাটা করি এবং ব্যবসা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা করি এ সংকট তা স্থায়ীভাবে বদলে দেবে। আইবিএম চায়নার সিইও অ্যালেইন বেনিচো বলেন, ‘এটাই হচ্ছে নতুন স্বাভাবিকতা। এ মুহুর্তে আমরা যেভাবে কাজ করছি তাতে বদলে যাবার অনেক আহবান আছে।’
উদ্ভাবন ও ব্যবসা বাণিজ্যে উদীয়মান অনুশীলন নিয়ে কাজ করেন ডেসপিনা ক্যাটসিক্যাকিস। যিনি বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট ফার্ম কুশম্যান ও ওয়াকফিল্ডের একজন অংশীদার। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী কম্পানিগুলোকে আহবান জানিয়েছে কাজে ফেরার জন্য। আমস্টারডামে কুশম্যান ও ওয়াকফিল্ডের অফিসে একটি ‘জীবনযাপন ল্যাবরেটরি’ করা হয়েছে। যেখানে চীন ও পুরো বিশ্বের কারখানাগুলোতে কাজকর্মের নতুন নতুন রীতি, ব্যবসায়ী ও কর্মীদের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত করা হচ্ছে এবং নতুন ধারণা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ক্যাটসিক্যাকিস জানান, এ ল্যাবের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে মানুষকে সমাধান নিয়ে ভাবতে আগ্রহী করে তোলা। কিভাবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষাকে একটি আবশ্যকীয় কাজে পরিণত করবে, কিভাবে কারখানা ভবন প্রস্তুত করতে হবে, এবং মানুষকে সত্যিকার অর্থে ভিন্ন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে তোলা।
করোনা সংকটের কারণে জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে চীনে সাংগহাই বেঞ্চমার্ক স্টকের সূচক পড়েছে ১৩ শতাংশ। এটি ২০০৮ সালের সংকটের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু ২৩ মার্চ থেকে অর্থনীতি খুলতে শুরু করার পর থেকে সংহাই সূচক ৭.৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে চীন এখনও রপ্তানি সেভাবে শুরু করতে পারেনি। কারণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলো এখনও করোনা নিয়ে লড়ছে। আশার বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করতে শুরু করায় চীনের রপ্তানিও শুরু হবে।
ফলে প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকোচিত হলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এই সম্ভাবনাই তৈরি হচ্ছে। সেটা সম্ভব হবে বিপুল অংকের প্রণোদনার মধ্যদিয়ে। যে সব দেশ করোনা মহামারি পেরিয়ে অর্থনীতি এগিয়ে নিতে চায় তাদের জন্য চীন মডেল হতে পারে।