তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দেশ ও বিদেশের লাখো মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) থেকেই ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা দলে দলে আসতে থাকেন। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে ইজতেমা মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়দানের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জায়গা ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। এবার ইজতেমা ময়দানকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। প্রচণ্ড শীত ও শৈতপ্রবাহ উপেক্ষা করে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের চটের ছাউনীর নিচে অবস্থান নিয়েছেন।
১৬০ একর খোলা ময়দানে বাঁশের খুটির ওপর পাটের চট দিয়ে টানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনেরছাউনি দিয়ে আবাসস্থল করা হয়েছে। করোনার কারণে দুই বছর ইজতেমা বন্ধ থাকার পর এবছর ইজতেমায় বেশি সংখ্যক মুসল্লি যোগ দেবেন বলে আশা করছেন ইজতেমার আয়োজকরা।বুধবার বিকাল পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে ২৫টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি মেহমান ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার আয়োজক কর্তৃপক্ষ। আগামী দুই দিনে আরো বিপুল সংখ্যক মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা। ইজতেমা ময়দানের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুরের খাবারের জন্য রান্নার আয়োজন করছেন মুসল্লিরা। অনেকে নিজের বিছানাপত্র ঠিকঠাক করছেন। কেউ আবার ইবাদতে মশগুল। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে চলবে তিনদিনের ইজতেমার সকল কার্যক্রম। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) আখিরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা। টাঙ্গাইল থেকে আসা মুসল্লি আশরাফ আলী জানান, এক চিল্লা শেষ করে বুধবার (১০ জানুয়ারি) ইজতেমা ময়দানে চলে এসেছি। এখানে ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের জন্য কিছু মেহনত করছি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনের জন্য মেহনত করছি। ইহকাল আমরা যেভাবে কাটাচ্ছি তাতে পরকালের জন্য কতটুকু আমল ও সঞ্চয় করতে পেরেছি তার জন্য চিন্তা করছি। নিজের ইমানকে আরও মজবুত করছি।
রংপুর থেকে আসা ইব্রাহিম মিয়া জানান, ইজতেমায় এসে বিভিন্ন বিষয়ে ওপর আলোচান শুনে নিজের ইমানকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করি। আখেরাতের পুঁজি কিভাবে আরও বাড়ানো যায় তার জন্য মেহনত করে যাচ্ছি। এদিকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তা দেওয়ার সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। ইজতেমায় আসা, থাকা ও যাওয়া এ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে সার্বিক পরিকল্পনা নেওয়াহয়েছে।এছাড়া ইজতেমায় আগত সাধারণ মানুষের ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের সুবিদার্থে আমরা ম্যাপ তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকারের নির্দেশনা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পরিকল্পনা করে কোন বিভাগের গাড়ী কোথায় পার্কিং করা থাকবে এসংক্রান্ত নির্দেশনা, কোন রাস্তা কখন খোলা বা কখন বন্ধ খাকবে সে নির্দেশনাও প্রাদান করা হয়েছে। ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষন করবে ইইনশৃংখলা বহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাক ও পোশাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ইজতেমা মাঠ পরিদর্শনে এসে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের এই সব কথা বলেন।