কি ঘটবে ট্রাম্পের ভাগ্যে!

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসনের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর একটায় কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হচ্ছে। তত্ত্বগতভাবে এই অভিশংসন বা বিচারে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন। কিন্তু ট্রাম্প সম্ভবত তা হবেন না। কারণ, সিনেটে রয়েছে তার দল রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ। তারাই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ঘুষ গ্রহণ, উচ্চ পর্যায়ের অপরাধ ও অশোভন আচরণের অভিযোগে একজন প্রেসিডেন্ট বা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্তকর্তাদের বিরুদ্ধে এভাবে অভিশংসন প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার রীতি আছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এর প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগে অভিশংসন প্রস্তাব আনা হয়েছে। প্রথমত, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তাকে ব্যবহার করে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজে নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি এক্ষেত্রে ইউক্রেন সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি যেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করেন এ জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। জেলেনস্কি যাতে এই তদন্তে বাধ্য হন তাই তাকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রে বহু কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সস্তা দর কষাকষি করতে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

দ্বিতীয়ত, অভিশংসন প্রস্তাবের শুনানিতে গত বছর প্রথমে তিনি হোয়াইট হাউজের স্টাফদের সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানান। ডেমোক্রেটদের অভিযোগ, এর মধ্য দিয়ে সিনেটে বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প। তবে কোনো অন্যায় করার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প। তিনি ও তার আইনি টিমের সদস্যরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে যে ঠুনকো অভিযোগ আনা হয়েছে তা সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন। এক্ষেত্রে তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলারের তদন্তে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন বলে যে অভিযোগ আছে, তার কোন ভূমিকা নেই।

২০১৯ সালের আগস্টে একজন হুইসেলব্লোয়ার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে এ নিয়ে তদন্ত হয়। শুনানি হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসন করার পক্ষে প্রস্তাব পাস হয় প্রতিনিধি পরিষদে। এই মাসে ওই প্রস্তাব সিনেটে পাঠানো হয়েছে। যদি সেখানে ভোটে হেরে যান ট্রাম্প, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তার ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবে। সেক্ষেত্রে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে তেমনটি হওয়ার কথা নয়। কারণ সিনেটে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় তিনি রক্ষা পাবেন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে অভিশংসনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল আর দু’জন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। ১৮৬৮ সালে এ অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যানড্রু জনসন। আর ১৯৯৯ সালে অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তবে দু’জনেই রক্ষা পেয়েছেন।

এবার কিভাবে অভিশংসনের বিচার করা হবে তা নির্ধারণ করবেন দুজন ব্যক্তি। তারা হলেন সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিশ ম্যাকলেন এবং ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার। সিনেটে আসন আছে মোট ১০০ টি। এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৭ জন সিনেটর যে পক্ষে অবস্থান নেবেন অভিশংসন প্রস্তাবের ভবিষ্যত তাই হবে। যদি তারা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন তবে ক্ষমতার ইতি ঘটবে ট্রাম্পের।

Advertisement