ব্রিটবাংলা ডেস্ক : অনিয়ম, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা দুর্নীতির অভিযোগে নেতা বা সদস্য বহিস্কার হন। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের পুরো দুটি শাখাই বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা সম্ভবত ইংল্যান্ডে এটিই প্রথম। সদস্যপদ গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগে দলের ইস্টহ্যাম এবং ওয়েস্টহ্যাম শাখার পুরো সাংগঠনিক কার্যক্রমই স্থগিত করেছে লেবার পার্টি। সদস্যরা দলীয় সিন্ধান্ত মেনে চুপ করে বসে রয়েছেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি লেবারের এটি পুরনো খেলা। এথনিক মাইনোরিটি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পর ইংল্যান্ডের সবচাইতে বেশি বহুজাতিক মানুষের বারা নিউহ্যামে এই খেলা শুরু করেছে লেবার পার্টি।
সদস্যপদ নিয়ে অনিয়ম এবং ভোটে প্রতারণার অভিযোগ ছিল নিউহ্যাম লেবারপার্টির দুটি শাখার বিরুদ্ধে। পুলিশ ভোটে প্রতারণার অভিযোগটি পর্যালোচনা করে এ নিয়ে আর তদন্ত করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে সদস্যপদ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে শাখা দুটির সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে লেবার পার্টি। ইমেইলের মাধ্যমে স্থানীয় সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সদস্য বা স্থানীয় লেবার রাজনীতিকদের এ নিয়ে বলাও বিশেষ কিছু নেই। কারণ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অবশ্যই মানতে হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সমর্থক স্বীকার করেছেন, নিউহ্যামে সদস্যপদ নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে। একই ঘরে অসংখ্য সদস্য রয়েছেন। এমন অভিযোগ শুনা গেছে, সদস্যরা নিউহ্যামের বাসিন্দাই না, কিংবা তারা ভিন্ন ওয়ার্ডে থাকেন কিন্তু রাজনৈতিক ফাঁয়দা হাসিলের জন্যে অন্য ওয়ার্ডের একটি ঠিকানায় তাদের সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। সমান অভিযোগে টাওয়ার হ্যামলেটসেও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল লেবার পার্টি।
নিউহ্যামে ইংল্যান্ডের সবচাইতে বেশি বহু জাতিক মানুষের বসবাস। ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে পাকিস্তানি, ভারত এবং বাংলাদেশীদের আনাগোনা বেশি।
সেই ষাটের দশক থেকেই নিউহ্যাম লেবারপার্টির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। ২০০২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়র ছিলেন লেবারের স্যার রবিন ওয়েলস। ১৮ সালের নির্বাচনে লেবারের নতুন মেয়র হন রুখসানা ফাইয়াজ। বারার ষাট জন কাউন্সিলও নির্বাচিত হন লেবার পার্টি থেকে। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে, এন্টি মুসলিম, এন্টি সেমিটিজমের অভিযোগ উঠে। তবে এন্টি মুসলিম ইস্যুটি আভ্যন্তরিনভাবে সামাল দিতে পারলেও এন্টি সেমিটিজমের অভিযোগে দুজন কাউন্সিলরকে দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে হয়েছে। এছাড়াও গত জানুয়ারীতে আরোপিত পার্কিং ট্যাক্সের সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য বিরোধীতা করেছেন প্রায় ৩০ জন কাউন্সিলর। সব মিলিয়ে নিউহ্যাম লেবারে কিছুটা প্রকাশ্য বিশৃঙ্খলা ছিল। স্থানীয় লেবারপার্টির স্থগিতাদেশের মধ্যই আগামী ৬ মে‘র রেফারেন্ডামে কমিটি সিস্টেম এবং মেয়রাল সিস্টেমের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেচে নিতে হবে নিউহ্যামবাসীকে। আর ২০২২ সালের স্থানীয় নির্বাচনে পার্টির পক্ষ থেকে যে প্রার্থী আরোপ করা হবে তাও প্রায় নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মতে, এককভাবে দখলে থাকা এথনিক মাইনোরিটি অধ্যুষিত বারাগুলোতে লেবারপার্টির এমন আচরণ এর আগেও দেখা গেছে। পার্শ্ববর্তী বাঙালী অধ্যুষিত বারা টাওয়ার হ্যামলেটসেও লেবার পার্টির প্রার্থীর আরোপের রাজনীতি দেখেছে কমিউনিটি। এবার নিউহ্যামেও তা দেখতে হবে। তবে কারো কারো মতে, কনজারভেটিভ বা লিবডেমের ভেতরে অন্যান্য সমস্যা থাকলেও সদস্যপদ নিয়ে এমন অবস্থার কথা শুনা যায় না। লেবারপার্টিতে বিশেষ করে এথনিক কমিউনিটি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় তা হচ্ছে বেশি।
৬ মে নিউহ্যামের একটি ওয়ার্ডে উপনির্বাচন হচ্ছে। তাতে এরিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী আরোপ করা হয়েছে।