কোকেনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন আকরাম!

জীবনের এক পর্যায়ে জীবন ঘাতক মাদক কোকেনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন কিংবদন্তী ক্রিকেটার পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম। ২০০৩ সালে ১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানা বাঁ-হাতি পেসার আকরাম নিজেই জানিয়েছেন ক্রিকেট থেকে অবসরের পর কোকেনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে প্রথম স্ত্রী হুমার মৃত্যুর পর মাদকের পথ থেকে সরে আসেন এ লিজেন্ড।বৃটিশ দৈনিক সানডে টাইমসকে ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তান দলের সদস্য আকরাম বলেন, তার মাদকে আসক্তের বিষয়টি বুঝতে পারতেন হুমা। পাশে থেকে এ খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেস্টাও করেছেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি।নিজের আত্মজীবনী সুলতান আ মেমোয়ার’এ তার জীবনের ভয়াবহ অধ্যায়ের কথা তুলে ধরেছেন আকরাম।২০০৯ সালের অক্টোবরে মাত্র ৪২ বছর বয়ে মৃত্যু হয় হুমার। স্ত্রীর মৃত্যুর পর কোকেন ছাড়নে আকরাম।১০৪ টেস্টে ৪শর বেশি উইকেট নেয়া আকরাম বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় খ্যাতির ধরনটা সর্বগ্রাসী,প্রলুব্ধ করে এবং মনকে বিপথে ঠেলে দেয়।ক্রিকেট থেকে অবসরের পর মাদকের ফাঁদে পড়ে যান আকরাম।

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বেশি খেলার চাপ থেকে মুক্ত থাকতে এটি ছিল অ্যাড্রেনালিনের একটি বিকল্প।’
মাত্র ৩০ বছর বয়সে ডয়াবেটিস ধরা পড়া আকরাম জানান, ইংল্যান্ডে একটি পার্টিতে তাকে অফার করা হয়েছিলে। সেটাই ছিল তার প্রথম কোকেন গ্রহণ করা।আকরাম বলেন, ‘ এরপর থেকেই এটা গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যায় আমি বুঝতে পারলাম প্রচন্ড চাপ সামলাতে নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে এটা প্রয়োজন।দুই ছেলে তাহমুর এবং আকবরের সঙ্গে ইংল্যান্ড এবং লাহোর উভয় জায়গায়ই থাকতেন হুমা। গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত থাকায় বিশ্বের এক প্রান্ত তেকে অন্য প্রান্তে ঘুড়ে বেড়ানোর কারণে পরিবার তেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন আকরাম।আকরাম বলেন, ‘এটি (কোকেন) আমাকে অস্থির করে তুলেছিল।তিনি আরও বলেন, ‘এটি আমাকে প্রতারক করে তুলেছিল। আমি জানি, ঐ সময়ে প্রায়ই একাকী থাকতো হুমা। সে করাচিতে বাবা-মা এবং ভাইবোনদের কাছে ফিরতে চাইতো। আমার ইচ্ছা ছিলো না। কেন? আমি একা করাচি যেতে পছন্দ করতাম। কাজে যাবার মত প্রতিদিনই একবার করে নিয়মিত পার্টিতে যেতাম।এক দিন আমার মানিব্যাগে একটি কোকেনের প্যাকেট পায় হুমা।’ এরপর তার সাহায্য নিতে আমি রাজি হলাম।তিনি আরও বলেন, ‘কোকেন নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আমি নিজেকে সামলাতে পারতাম না। আমি ঘুমাতে পারতাম না, খেতে পারতাম না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’
লাহোরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে যাবার কথা জািনয়ে আকরাম বলেন, ‘এটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল। কেননা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই ডাক্তার ডলারের চুক্তি করে নিয়েছিল। ছিলো। একটি বিল্ডিংয়ে পাঁচটি ঘর, একটি মিটিং রুম এবং একটি রান্নাঘর ছিলো।তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার একজন ছলনাকারী মানুষ ছিলেন। চিকিৎসার পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে আত্মীয়দের থেকে আলাদা করতে কাজ করেছিলেন।চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়নি এটি পরবর্তীতে আরও বেশি বেড়ে যায়। ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন এটি আবারও শুরু হয়।
টুর্নামেন্ট শেষ হবার দুই সপ্তাহ পর মারা যায় হুমা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর কোকেন ত্যাগ করেন আকরাম।
তিনি বলেন, ‘হুমার মৃত্যুর পর অনেক কষ্টে আমি মাদক ছেড়েছি। হুমার মৃত্যুর পর অস্ট্রেলিয়ান সানিয়েরা থম্পসনকে বিয়ে করেন আকরাম।বর্তমানে তাদের ঘরে আছেন একমাত্র কন্যা আয়িলা । আকরাম বলেন,জীবনের সেই ভয়ানক একটা অধ্যায় কাটিয়ে এসেছেন তিনি এবং এরপর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাননি তিনি।আমি কখনই পেছনে ফিরে তাকাইনি।

Advertisement