ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে। নিশ্চিত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সেখানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯। সোমবার কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ খবর প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার অনলাইন এসবিএস। এরই মধ্যে সেখানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করেছেন শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। এতে বলা হয়, মিয়ানমারে নৃশংসতা থেকে পালিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ঠাঁই নিয়েছেন বাংলাদেশের এই ক্যাম্পে। তারা সেখানে গাদাগাদি করে অবস্থান করেন। তাই স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিয়েছেন অনেক আগেই।
তারা বলেছেন, এই ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে করোনা ভাইরাস দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে এপ্রিলে এই আশ্রয় শিবিরে চলাচল বিধিনিষেধে আটকে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। সেখানে মধ্য মে’তে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। কক্সবাজার এলাকার একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাহা ভুঁইয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সংক্রমিতদের কারো অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয়। বেশির ভাগেরই খুব কম লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা তাদেরকে আইসোলেশন সেন্টারে নিয়েছি। তাদের পরিবারকে নিয়েছি কোয়ারেন্টিনে। তিনি আরো জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যেসব ক্যাম্পে শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে তিনটির সংকীর্ণ সড়কগুলো ব্লক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ এলাকায় যে ১৫,০০০ রোহিঙ্গা রয়েছেন তাদের চলাচলকে সীমিত করা হয়েছে। এর ফলে দাতব্য সংস্থাগুলোর কর্মীরা ভীতি প্রকাশ করেছেন। তারা এসব ক্যাম্পে সেবা দেন। তাদের ভয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়া কাজ করা নিয়ে। আইসোলেশনে রাখা দুটি এলাকা রয়েছে কুতুপাং ক্যাম্পে। এই ক্যাম্পে আছেন প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা।
তাহা ভুঁইয়া বলেন, যতটা দ্রুত সম্ভব আমরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি আক্রান্তদের শনাক্ত করতে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সাতটি আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে কমপক্ষে ৭০০ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া যাবে।
কক্সবাজারের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বর্তমানে প্রতিদিন ১৮৮ জনকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে এ সপ্তাহে এ সংখ্যা তারা দ্বিগুন করতে পারবেন। তিনি আরো বলেছেন, এই ক্যাম্পে যেকারো প্রবেশে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে কেউ গেলে তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। তাই আমরা খুব বেশি উদ্বিগ্ন। আমাদের আশঙ্কা এরই মধ্যে সেখানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে।
সোমবার বাংলাদেশে একদিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সংখ্যা ১৯৭৫। সব মিলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় এদিন ৩৫,৫৮৫। মারা গেছেন ৫০১ জন। এপ্রিলের শুরুতে বেশ কয়েকজন সংক্রমিত হওয়ার পরে কক্সবাজারে লকডাউন ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শরণার্থী সহ এই জেলায় জনসংখ্যা ৩৪ লাখ। কিন্তু শরণার্থী শিবিরে যেসব দাতব্য সংস্থা কাজ করে তার মধ্যে একটির একজন কর্মী সোমবার বলেছেন, তিনি ও অন্য আরো অনেকে ভীষণ উদ্বিগ্ন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমাদেরকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাই আমাদের মতো অনেক সাহায্যকর্মীকে আতঙ্ক আর পীড়া গ্রাস করেছে। আশ্রয়শিবিরে সামাজিক দূরত্ব একটি অসম্ভাব্য বিষয়। শরণার্থীদের মধ্যে এই রোগ নিয়ে সচেতনতার বালাই নেই। এ বিষয়ে দাতব্য সংস্থাগুলো তাদেরকে সচেতন করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।