‘ক্যাসিনো সম্রাটের’ গ্রেফতার প্রসঙ্গে যা বললেন কাদের

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: রাজধানীতে ক্লাব বিজনেসের আড়াতে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটেকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ (দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী) অভিযান শুরু হলো এক সপ্তাহ হলো। এই সময়ের মধ্যে কি সবাই গ্রেফতার হবেন? যাদের নাম আসছে পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছু তো যাচাই-বাছাই করতে হবে। আর যারা গ্রেফতার হয়েছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তারা কি কম অপরাধী? তাদের ক্রিমিনাল অফেন্স (ফৌজদারি অপরাধ) কি সাধারণ কোনো অপরাধ? কাজেই এখানে কেউ পার পাবেন না। আমি এটা বলতে পারি, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা গা-ঢাকা দিয়েছে তাদের রেহাই নেই হুশিয়ার করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অভিযান মাত্র শুরু হয়েছে। কিছু কিছু বিষয় আছে যা সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেখছে এবং খোঁজ খবর নিচ্ছে। আবার অনেকে তো গা-ঢাকা দিয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের অনেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং যারা নিজেদের আড়াল করে রেখেছে, তাদের খোঁজা হচ্ছে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

যুবলীগের আলোচিত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট গা-ঢাকা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি জানি না কে কে গা-ঢাকা দিয়েছেন। আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা গা-ঢাকা দেয়াদের খুঁজছেন। যারা গা-ঢাকা দিয়েছেন তারা কোথায় যাবেন?’

সূত্র বলছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে জুয়ার আস্তানাগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার জুয়াজগতের অঘোষিত সম্রাট হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট। রাজধানীতে একাধিক অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এরইমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সম্রাটের শীষ্য ও অনুগামী হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে বুধবার রাতে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্ক ভর করে সম্রাটের মনে।

বুধবার রাতে গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনি মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট। এটি ছাড়াও ঢাকার কয়েকটি ক্যাসিনো থেকে চাঁদার ভাগ আসে তার কাছে।

১৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাত থেকে ক্যাসিনোগুলোয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপরতা শুরু করে। সম্রাটের কাকরাইলের আস্তানায় ডিবি ও র‌্যাব সদস্যরা তল্লাশি শুরু করলে ক্যাসিনো জগতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একে একে জুয়ার আস্তানাগুলো বন্ধ হতে শুরু করে।

সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি টাকার বস্তা নিয়ে সিঙ্গাপুর যান জুয়া খেলতে। সেখানে মাসে ১০ দিন সময় কাটান। এছাড়া টেন্ডারবাজিতেও কেতাদূরস্ত সম্রাট। টেন্ডার হলেই গ্রেফতার যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের কাছ থেকে যুবলীগের কমিশন হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ পেতেন যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদা দাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। যুবলীগের কয়েক নেতা সম্পর্কেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পর বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে গ্রেফতার করল র‌্যাব।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে।

আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরও দমন করা হবে।

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ওইসব কথা বলেছিলেন বলে জানান অনেক নেতা।

যুবলীগের একটি সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে অভিযোগের খবর আসার পর প্রথম পর্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে শোকজ করা হয়। এর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবারও তাদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। পরে বহিষ্কার করা হয় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে।

Advertisement