রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘মৌখিক অনুমতি’ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাতের মধ্যে লিখিতভাবে তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি পাওয়া যাবে বলেও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।ইতিমধ্যে তাকে বিদেশে নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে যুক্তরাজ্যে যাবেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৬ মে) দুপুরে এ কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার এক স্বজন।তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার একটি ফ্লাইটে বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকা ত্যাগ করতে পারেন।
তিনি বলেন,গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন জমা দেন।পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, সরকার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে। রাতেই আবেদন আইন সচিবের কাছে পাঠানো হয়।এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ম্যাডামকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে সবুজ সংকেত (ইতিবাচক সাড়া) পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আজকে রাতের মধ্যে সরকারের পক্ষে থেকে লিখিত অনুমতি পাওয়া যাবে।তিনি আরো বলেন, শুক্রবার (৭ মে) ম্যাডামকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ ইতোমধ্যে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি শেষ।
এদিকে সকালে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী জটিলতা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন দিকে টার্ন নেয়। খালেদা জিয়ার যে বয়স, তার বিভিন্ন রোগ আছে, এর আগে তিনি প্রায় তিন বছর কারাগারে ছিলেন, এখনো তিনি অন্তরীণই আছেন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার কিছু জটিলতা হয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার মানবিক কারণে তার বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে এবং এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আক্রান্ত হওয়ার ২৫ দিন পর বৃহস্পতিবার সেরে উঠেছেন বিএনপি নেত্রী।করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর শুরুর দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থেকেই চিকিৎসা নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বিএনপি থেকে একাধিকবার বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হলেও তেমন কোনো জটিলতা নেই খালেদা জিয়ার।
১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয় খালেদা জিয়ার। সে রিপোর্ট ভালো আসে বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই রিপোর্টও পজিটিভ আসে।এরপর ২৭ এপ্রিল সিটি স্ক্যান করানোর জন্য আবার এভারকেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি প্রধানকে। তার চিকিৎসায় গঠন করা হয় একটি মেডিক্যাল বোর্ড। এতে হাসপাতালটির সাতজন চিকিৎসকের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত তিনজন চিকিৎসককেও রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খবরাখবর রাখছেন লন্ডনে থাকা তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানও।খালেদা জিয়ার শরীরের অবস্থা গত সোমবার সকালের দিকে অবনতি হলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। গত বুধবার খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো হয়। এরপর থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।