উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে সরকারের কাছে আবার আবেদনের প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইনের কোথাও আবেদন পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। যদি থাকে আপনি আবার দরখাস্ত ও পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন তাহলে আমি আর আইন পেশা করবো না। বুধবার জাতীয় সংসদে ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এরআগে সকাল ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।সংসদে আলোচনায় বিএনপির সাংসদ হারুন অর রশীদ বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলছে, মানুষের আইনের অধিকার সমতা। ৪৯ অনুচ্ছেদে বলছে, রাষ্ট্রপতি দণ্ডিত ব্যক্তির ক্ষমা করে দেয়ার সুযোগ। এই আইনের বিষয়ে সংবিধানের যে অসঙ্গতিটা যে রয়েছে..।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সাংসদ হারুন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার নিয়ে যে কথাগুলো আসছে, ৪০১ ধারা অনুযায়ী কি বলা হয়েছে, এটা আপনার ও নির্বাহী বিভাগের প্রধানের এখতিয়ার। উনি যেকোন শর্তে দণ্ডিত ব্যক্তি পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করতে পারেন। আমরা দেখেছি, মন্ত্রীরা বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কটাক্ষ ও কটুক্তি করছেন। উনি কি অসুস্থ নয়। এটা কি জাতির কাছে প্রমান করতে হবে। আজকে কি ভয়াবহ অসুস্থতার রয়েছে। আজকে আমি প্রধানমন্ত্রীর দাবি করছি, ৪০১ বিধান অনুযায়ী সুযোগ আছে। এই সুযোগটি আপনি দেবেন। তাহলে জাতি আপনার প্রতি কৃর্তজ্ঞ থাকবে।পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উনারা আবেদন করলেন। আমার দেখা আবেদনে, এটার কোন ধারাই ছিলো না। উনারা আবেদনে বলেছিলেন, উনাকে বিদেশ নিয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমি অনুমতি দিলাম তখন দুটি শর্ত দিয়েছিলাম। একটা হচ্ছে, তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। আরেকটা হচ্ছে, তিনি দেশে থেকে চিকিৎসা নেবেন। এই দুটি শর্তে ৪০১ ধারায় তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়।
তিনি বলেন, একটা দরখাস্ত যখন গ্রহণ হয়ে যায় সেই দরখাস্ত কি আবার পুনর্বিবেচনা করা যায়? উনারা তো এই কথাটা বলে উনাকে মুক্ত করে এনেছেন। এখন আবার বলছেন, বিদেশ যেতে হবে। আবার দরখাস্ত করবে। এটা কি রকম কথা, ওই দরখাস্ত তো শেষ। ওই দরখাস্তের উপর তো আর কেউ কিছু করতে পারবে না। আইনটা পড়েন। আইনের ৬টি উপধারা আছে। এর মধ্যে যদি কোথাও থাকে, আপনি আবার দরখাস্ত করতে পারবেন এবং পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন তাহলে আমি আর আইন পেশা করবো না।আইনমন্ত্রী বলেন, এখানে বলা আছে, শর্ত বা শর্ত ছাড়া এবং চিকিৎসা। মাননীয় স্পিকার উনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। উনার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিলো। উনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। চিকিৎসা পাননি কোথায়? কারা বলছেন চিকিৎসা পাননি। আর এমন নজির উনারা দেখাতে পারবেন না যে, আমরা বাধাগ্রস্ত করেছি। তাহলে উনারা চিকিৎসা পাননি এমন কথা বলেন কেনো? শুধু রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি করলে তো হবে না।হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সংসদ আইন পাশ করছি। আইন অঙ্গনের অবস্থা ও প্রয়োগের অবস্থা বিবেচনায় দাবি রাখে। প্রতিনিয়ত পত্রিকায় দেখছি, খুন হওয়া ব্যক্তি ৪ থেকে ৫ বছর কারাগারে বন্দি। যে অপরাধি যে কারাগারের ভেতরে অবস্থা করছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন। এখন পর্য ন্ত এটার কোন নিষ্পত্তি হয়নি।
বিএনপির এই সাংসদ বলেন, ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভায় বোমা হামলা হয়েছিল। সেটা নিয়ে একটা মামলাও হয়েছিল। সেই মামলায় ২০১৯ সালে, কোন আহত ও কিছু নেই- সেই মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং ২৫ জনকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। আরো প্রায় ১৩ জনকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। জামিনযোগ্য অপরাধে কিভাবে আজকে মানুষকে কারাগারে রাখা হয়েছে। সাতক্ষীরার আরো একটি মামলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলায়। সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছে। কোন বিচার নেই। সেটা ২০২১ সালে বিচার শুরু করলেন। জামিনযোগ্য অপরাধ। হাইকোর্ট জামিন দিলো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম শুনলেই চমকে যাচ্ছে।তিনি বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রীর নামে কোন সমালোচনা হলেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মামলা করছে। সঙ্গে সঙ্গে আদালত গ্রহণ করে সমন জারি করে আদালতে ঢুকাচ্ছে। এই যে আইনের অপপ্রয়োগ ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে মাননীয় স্পিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন প্রশংসার দাবি রাখেন। আর সমালোচনাও অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।সাংসদ হারুন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের মেয়াদ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। আপনি পৌর সভায় ভোট করছেন। কিন্তু এই ভোটটা এখন পর্যঢন্ত স্থগিত রেখেছেন। এটা উদ্বেগের।এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আগে সংবিধান পড়ুন। এরপর বলুন।