ব্রিটবাংলা ডেস্ক : ব্যয় কমাতে গিয়ে ২০১০ সালে টোরি ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৬শ ৬৭টি পুলিশ স্টেশন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে ব্রিটেনে। বিদায়ী বছরে করোনা মহামারীর কারণেও কিছু পুলিশ স্টেশন অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। সেগুলো আর খোলা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুলিশ স্টেশনগুলোর সামনেই ঘটছে ছুরিকাঘাতের মতো ঘটনা। বিক্রি হওয়া পুরনো স্টেশনগুলোতে গাজা চাষের ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশ স্টেশনগুলো বন্ধ করে দিয়ে অপরাধীদের স্বাধীনতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ডেইলি মেইলের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের সবচাইতে বড় পুলিশ বাহিনী লন্ডনের মেট পুলিশের প্রায় ১০৬টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ৩৬টি স্টেশন নিয়ে কাজ করছে মেট্রপলিটন পুলিশ। ২০১০ সালের পর থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন পাউন্ডের প্রোপার্টি বিক্রি করেছে মেট পুলিশ। ক্লিভল্যান্ড কনস্ট্যাবোলারি পুলিশ বাহিনীর ১৮টি স্টেশনের মধ্যে খোলা রয়েছে মাত্র ২টি। ডার্বিশায়ার পুলিশের ২৫টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র ৪টি এবং ওয়েস্ট মিডল্যান্স পুলিশের ৩৩টি স্টেশন বন্ধ করা হয়েছে। বিক্রি করা হয়েছে ২৬টি স্টেশন। খোলা রয়েছে মাত্র ১১টি।
ভার্চুয়াল পুলিশের উপর নির্ভর :
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের পর প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটা করে পুলিশ স্টেশন বন্ধ হয়েছে। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে বর্তমানে প্রায় ৬শ পুলিশ স্টেশন রয়েছে। বৃস্টলের বাথ, সেন্ট আলবন্স এবং এলি’র মতো শহরগুলোতে ফ্রন্ট কাউন্টারসহ পুলিশ স্টেশন নেই। ক্যামব্রিজশায়ারের এলিতে পুলিশের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার মতো একটি স্টেশনও নেই। বড় ধরনের অপরাধের ঘটনা না ঘটলে পুলিশের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হলে ইয়েলো পেইজ থেকে নাম্বার খুঁজে নিতে হয় এই শহরের মানুষকে। নটিংহ্যামশায়ারে ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি স্টেশনে ওয়েবক্যাম বসিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। হার্টফোর্ডশায়ারে প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষের জন্যে মাত্র ৩টি স্টেশন খোলা রয়েছে। ২০১০ সালের পর এই এলাকার অন্তত ১০টি পুলিশ স্টেশন বন্ধ করা হয়।
ক্যানাবিস ফার্ম :
বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু কিছু পুলিশ স্টেশনে এখন গাজার চাষও হচ্ছে। ওল্ডহ্যামের ফেইলসওয়ার্থ পুলিশ স্টেশনটি ২০১৩ সালে বন্ধ করার পর ১শ ৯০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি করা হয়েছিল। এই স্টেশনটি খোলা হয়েছিল ১৮৯২ সালে। ২০১৯ সালে এই পুরনো এই পুলিশ স্টেশনের প্রথম তলা থেকে গাজার বাগান উদ্ধার করা হয়। অন্তত ১ হাজার গাজার চাড়া উদ্ধার করা হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়নের বেশি বলে পুলিশের ধারণা।
এছাড়া ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া উত্তর-পূর্ব লন্ডনের উইঞ্চমোর হিল পুলিশ স্টেশনটি ২০১৫ সালে ৯শ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি করা হয়। স্টেশনটিকে পরবর্তীতে ছ’ তলার ফ্ল্যাট বানানো হয়। গত বছর পুরনো এই স্টেশন থেকে গাজা চাষের অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিল্ডিংটি গ্রেইড ২ লিস্টেড।
এদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুলিশ স্টেশনের সামনেই জীবন দিচ্ছে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
আহমেদ বাকের :
গত শুক্রবার রাতে পুশ্চিম লন্ডনের প্যাডিংটন গ্রীন পুলিশ স্টেশনের সামনে ছুরিকাঘাতে প্রাণ দিয়েছে ১৯ বছর বয়সী আহমেদ বাকের। ২০১৮ সালে এই পুলিশ স্টেশনটি বন্ধ করা হয়। দু বছর আগে বাকেরের একজন আত্মীয় ১৭ বছর বয়সী জোসেফকেও এই এলাকায় ছুরিকাহত করা হয়েছিল।
বন্ধ হওয়ার পর অন্তত তিন সপ্তাহ এই স্টেশনটি স্কোয়াটারের দখলে ছিল।
হোমলেস মার্ডার :
২০১৭ সালে বন্ধ হওয়ায় ইস্ট লন্ডনের প্লাস্টো পুলিশ স্টেশনের সামনে একটি চার্চের সিড়িতে ঘুমানোর অভিযোগে হোমলেস এক মহিলাকে লাঞ্জিত করে হত্যা করা হয়। তিনি তিন সন্তানের মা ছিলেন। তাকে হত্যার অভিযোগে ২২ বছর বয়সী এক ব্যক্তির ১৭ বছরের জেলদন্ড হয়েছে গত বছর। প্লাস্টো পুলিশ স্টেশনটি বর্তমানে ব্যাক অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করছে পুলিশ।
মোহাম্মদ আল জুফারিয়া
২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া উত্তর পশ্চিম লন্ডনের ওয়াল্ডস্টোন পুলিশ স্টেশনটি বন্ধ করা হয়। চার বছর আগে এই স্টেশনটি ৯শ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি করা হয়। এই স্টেশনের খুব কাছেই ২০১৭ সালে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ৩৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ আল জুফিয়ারি। তাকে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তির ১৮ বছরের জেল হয়েছে।