ব্রিট বাংলা ডেস্ক : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আজ সোমবার (৩০ মার্চ) করোনাভাইরাসসংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে করা ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
ফ্লোরা বলেন, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো একজনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। নতুন এই করোনা রোগী একজন নারী। তাঁর পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরে জানানো হবে। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা আইডিসিআর-এর হটলাইনে মোট কল পেয়েছি চার হাজার ৭২৫টি। এর সবই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য। গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ১৫১টি নমুনা পরীক্ষা করেছি। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৯৭টি কোভিড ১৯ সংক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি ১৫৩টি। এর মধ্যে অন্যান্য যেসব জায়গায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে সেসব ল্যাবরেটরিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সর্বমোট এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩৩৮টি। এর মধ্যে আমরা এ পর্যন্ত রোগীর করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত করেছি ৪৯টি। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় আরো একজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে শনাক্ত করা হয়েছিল গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের মধ্যে আরো চারজন করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন। সর্বমোট করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৯ জন। যে চারজন সর্বশেষ করোনা মুক্ত হয়েছেন তাদের একজনের বয়স ৮০ বছর। আর দুইজন আছেন ষাটোর্ধ। অর্থাৎ সবাইকে মনে রাখতে হবে বয়োজ্যেষ্ঠ মানেই কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে বয়োজ্যেষ্ঠদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে যে ৩৬ জন ছিলেন গতকাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁদের ভেতর করোনা সংক্রমণ না থাকায় সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩২ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আইসোলেশনে গেছেন ছয়জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন মোট ৬২ জন। এ পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৩ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, নমুনা সংগ্রহ করে যেসব পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে আইইডিসিআর, জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডি)-এর তথ্য সংযোজিত হয়েছে।
আইইডিসিআর পরিচালক আরো বলেন, এ পর্যন্তু আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের আদেশ-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় জনস্বার্থে যে আদেশ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়, সেগুলো আপনারা অবশ্যই মেনে চলবেন। এরইমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশির সময় বাহু কাপড় টিসু ইত্যাদি ব্যবহার করুন। সাবান পানিতে কিছুক্ষণ পরপর দুই হাত ধুতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ নাক মুখ স্পর্শ করবেন না। অবশ্যই ঘরের ভেতর থাকবেন। কারো সঙ্গে হাত মেলানো, কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকবেন। যাঁদের বয়স ষাটের বেশি, যাদের শরীরে দীর্ঘ মেয়াদি রোগ রয়েছে তারা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
এর আগে গতকাল রবিবার আইইডিসিআর’র ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস পরিচালক বলেছিলেন, এরইমধ্যে আমরা ৭১০ জন চিকিৎসক এবং ৪৩ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি কোভিড ১৯ বিষয়ে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশের ৬৪টি জেলার সদর ও জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার এবং ঢাকার যেসব হাসপাতালকে আমরা সংযুক্ত করেছি সেসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এ ছাড়া এরইমধ্যে দেশের প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
এমআইএস পরিচালক আরো বলেছিলেন, গতকাল (২৮ মার্চ) আমরা প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছি। আমরা আশা করছি, আজ (২৯ মার্চ) থেকে এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা তাঁদের নিজ নিজ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং যেখানে সন্দেহভাজন কোভিড ১৯ রোগী পাওয়া যাবে, তাদের বাড়িতে যাবেন এবং নমুনা সংগ্রহ করবেন। আমাদের অনুরোধ, সন্দেহভাজন রোগীরা যেন হাসপাতালে চলে না আসেন। তারা আমাদের হটলাইনে যোগাযোগ করলে আমরা ওই এলাকার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের কাছে যাবো।