ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভারতের কেরালার সাধারণ গৃহবধূ জলির কীর্তি ঘুম কেড়ে নিয়েছেন পুলিশের। ১৭ বছর ধরে স্বামীসহ পরিবারের ৬ জনকে ঠাণ্ডা মাথায়, দীর্ঘ পরিকল্পনা করে খুন করেছেন তিনি। এই সিরিয়াল কিলিংয়ের তদন্ত করতে নেমে পুলিশের চোখ চড়ক গাছ। উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, জলি সাইকোপ্যাথ। কিন্তু ঠিক কী কারণে এতগুলি লোককে প্রাণে মারলেন তিনি?
পুলিশের দাবি, জলি প্রথম খুন করেছিলেন ১৭ বছর আগে। ২০০২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জলির শাশুড়ি ৫৭ বছরের আন্নাম্মা টমাস। মাটন স্যুপ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হয় তার। মনে করা হয়েছিল, সেটি স্বাভাবিক মৃত্যু। এর ছয় বছর পরে আন্নাম্মার স্বামী টম মারা যান। ২০১১ সালে মৃত্যু হয় জলির স্বামী রয় টমাসের। ময়নাতদন্তে বিষক্রিয়ার বিষয়টি সামনে এসেছিল। তার তিন বছর পর একইভাবে মৃত্যু হয়েছিল আন্নাম্মার ভাই ম্যাথুর। স্বামী রয়ের মৃত্যুর পর তার কাজিন সাজুকে বিয়ে করেছিলেন জলি। ২০১৬ সালে সাজুর প্রাক্তন স্ত্রী এবং দু’বছরের মেয়ে অ্যালপাইনের মৃত্যু হয়। এখানেই শেষ নয়, পরিবারের আরো দুই শিশুকেও সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি, বিষপ্রয়োগ করেছিলেন ননদের খাবারেও।
কেরালা পুলিশের তদন্তকারী অফিসার কে জি সিমন বলছেন, প্রাক্তন শ্বশুর-শাশুড়ি টম টমাস ও আন্নাম্মা টমাস খুনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। পরিবারের সর্বময় কর্তা ও কর্ত্রীকে সরিয়ে দিলে চালকের আসনে বসা যাবে এমনটাই ভেবেছিলেন জলি।
২০১১ সালে জলির প্রাক্তন স্বামী রয়কে বাথরুমে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার পাকস্থলীতেও সায়ানাইড পেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কোনো অতিরিক্ত তথ্য না পেয়ে তদন্ত মাঝপথেই বন্ধ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। সকলে সিদ্ধান্তে আসেন, আর্থিক সমস্যার জেরেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন রয়।
জলির ছেলে রোজো পুলিশকে জানিয়েছেন, আন্নাম্মা ও টমের বাড়ির দলিলও নকল করেছিল জলি। অর্থাৎ রয়দের সম্পত্তির মালিকানা পাওয়াই ছিল জলির মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণেই জলি সরিয়েছেন একের পর এক আত্মীয়কে।
অথচ যাতে ঘুণাক্ষরে কারও সন্দেহ না হয় তাই নিজেকে কোঝিকোড় এনআইটির লেকচারার বলে দাবি করতেন তিনি। আসলে জলি বাণিজ্য শাখায় স্নাতক। এনআইটির জাল পরিচয়পত্রও বানিয়েছিলেন। রোজ একজন কর্মচারীর মতো এনআইটি ক্যাম্পাসে যেতেন তিনি। এনআইটির ক্যান্টিন কর্মীরা তাকে রীতিমতো চিনতেন।
এই সবের মধ্যেই চলেছে একের পর এক খুনের পরিকল্পনা। তিনটি মৃত্যুতে সন্দেহ দানা বাঁধে আন্নামার ভাই ম্যাথুর মনে। ম্যাথু অতিসক্রিয় হয়ে উঠলে বিপদ, তাই তাকেও সরিয়ে দেয় জলি।
সম্পত্তির দখল পেতে কোনমতেই পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। এই উদ্দেশ্যে জলি ভেবেচিন্তেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রয়ের খুড়তুতো ভাই সাজুর সঙ্গে। ক্রমে তিনি সরিয়েছেন সাজুর প্রাক্তন স্ত্রী ও মেয়েকে। জল খেতে গিয়ে হেঁচকি উঠে মারা যায় ছয় বছরের অ্যালপাইন। তার শেষ লক্ষ্য ছিল ননদ ও পরিবারের দুই শিশু। তবে ননদকে খুনের চেষ্টা ব্যর্থ হতেই সতর্ক হয়ে যায় জলি।
বুধবার রয় টমাসের এক কাকিমা এলসাম্মা সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, আরো দুটি খুনের পিছনেও জলির হাত রয়েছে। ২০০২ সালে তার ছেলে বাইক অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান। রয়ের এক তুতো ভাইও গলায় দড়ি দেন। এই দুটি মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলেই মনে করেন তিনি।
এই সিরিয়াল কিলিংয়ের রহস্য ভেদ করতে ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে কেরল পুলিশ। ইতিমধ্যে খুনের দায় স্বীকারও করেছেন জলি। পুলিশ জানাচ্ছে, এতবড় হত্যাকাণ্ড জলি একা ঘটাননি। তাকে প্রথম থেকে সাহায্য করত এক আত্মীয় এমএস ম্যাথু। ম্যাথুই ছিল সায়ানাইডের জোগানদার। সায়ানাইড আসত প্রজিকুমার নামক এক স্বর্ণকারের কাছ থেকে। পুলিশ তাঁদের দু’জনকেও গ্রেপ্তার করেছে।
এ তদন্তের অগ্রগতি ইতিবাচক। তবে জলির অপরাধের কূল কিনারা পেতে যে ঘাম ছুটছে গোটা কেরালা পুলিশের, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।