ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বাপ-দাদার কবরের ওপর বসতি স্থাপন ঠেকানোসহ এর পবিত্রতা রক্ষায় যুগ যুগ ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তাদের উত্তরসূরিরা। বিক্ষোভ মিছিল করে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। কাজ না হওয়ায় নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিয়ে কয়েকবার বাড়ি ঘড় ভেঙে দেওয়াসহ উচ্ছেদও করেন এলাকাবাসী। দখল ঠেকাতে গোরস্তানের চারপাশে দেওয়া হয়েছে প্রাচীর। তার পরেও থেমে নেই ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জের ঐতিহাসিক পীরডাঙ্গী গোরস্তানের দখল কার্যক্রম। কিছু ব্যক্তি রাতারাতি সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে কবরস্থান দখল করে বসতি গড়ে তুলেছেন আর সেই এলাকায় চলে মাদক কারবারসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড। এতে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে কবরবাসীর উত্তরসূরীদের মাঝে। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে আবারো গণবিস্ফোরণ।
ভূমি অফিস সুত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ পৌর শহর সহ পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও পাকা সড়কের উভয় পাশের শত শত একর জমি গোরস্তান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে যুগযুগ ধরে। রঘুনাথপুর, জগথা, পালিগাও, ভেলাতৈড়, ভাকুড়া, খালপাড়া, চন্ডিপুর, বাগমারাসহ উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষকে মৃত্যুর পর দাফন করা হয় এ গোরস্তানে। এ গোরস্তানেই রয়েছে বেশ ক’জন পীরের মাজার। এই বিশাল গোরস্তানের মধ্যে পৌর শহরের পীরডাঙ্গী গোরস্তান অংশের উভয় পাশে পাকা সড়ক রয়েছে। এ জন্য এই অংশের প্রতি দৃষ্টি অনেকের। আগে জনসংখ্যা কম থাকার কারণে গোরস্তানের বিশাল অংশ ফাঁকা পড়ে থাকলেও এ এলাকায় উপজেলা পরিষদ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস গড়ে ওঠায় কদর বাড়তে থাকে এলাকাটির। কিছু লোক পীরডাঙ্গী গোরস্তানের পৃর্বাংশে দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসতি গড়ে তোলে। হাসপাতাল গেটে বসে কিছু দোকানপাট। স্বজনের কবরের ওপর বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করায় একসময় ইকরামুল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কিছু বাড়ি-ঘর সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ পর্যায়ে উচ্ছেদ করা হয় কিছু বাড়ি। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারো গোরস্তানে গড়ে ওঠে অবৈধ বসতি। যা সরানোর জন্য প্রশাসনের নিকট বহু আবেদন করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আইনি জটিলতার কথা বলে ধামাচাপা পড়ে তা। কয়েক বছর আগে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে গোরস্তানের অবৈধ বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়। তাতেও থেমে থাকেনি দখল কার্যক্রম। রাতারাতি বাড়ি-ঘর উঠতে থাকে গোরস্তানে।
দখল ঠেকাতে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজউদ্দীন আহম্মদ গোরস্তানের চারপাশে সীমানাপ্রাচীর দেওয়ার উদ্যোগ নেন। গোরস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে নির্মাষ করা হয় সীমানাপ্রাচীর। এর পরও গোরস্তানের পূর্বাংশে সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি। কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এর মাটি। অব্যাহত রয়েছে জবরদখল। অভিযোগ রয়েছে, প্রাচীরের ভেতরে গড়ে ওঠা এই বসতির বেশির ভাগ বাড়িতে রাতের বেলায় চলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। বসে নেশার আসর। বিক্রি হয় মাদকদ্রব্য। চলে জুয়া খেলা। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করাসহ তাদের সরাতে গোরস্তান রক্ষা কমিটির ব্যানারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট স্মারকলিপি দেওয়া হয়। প্রতিবাদসভা হয়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এতে মুসল্লিরা ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছের বলে জানান গোরস্তান রক্ষা কমিটির মুখপাত্র মো. রফিকুল ইসলাম রফিক। সম্প্রতি হাসপাতালের সামনে গোরস্তানের প্রাচীরের ভেতরের কিছু অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয় ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা। পূর্ব পাশের বসতি নিয়েও চরম অসন্তোষ রয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আবারো বড় ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
পৌর মেয়র কশিরুল আলম বলেন, গোরস্তানের পবিত্রতা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। এ বিষয় প্রশাসনসহ এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে বসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডাব্লিউ এম রায়হান শাহ বলেন, গোরস্তান দখল ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।