গোলাপগঞ্জে কাউন্সিলে কমিটি না হওয়ায় উত্তেজনা সড়ক অবরোধ

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি : গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের বহু কাংখিত কাউন্সিলে শেষ পর্যন্ত কমিটি হয়নি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারেনি তাদের পছন্দের প্রার্থী। এতে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অবরুদ্ধ করে রাখে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে। শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনার মধ্যে পুলিশি প্রহরায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপজেলা প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন। নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে জড়ো হয়ে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়। বিষয়টি গোলাপগঞ্জের আওয়ামী পরিবার ছাড়াও সর্বমহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

দীর্ঘ ১৪ বছরপর গতকাল বুধবার গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিলের দিন তারিখ নির্ধারণ হয়। এ কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে এমন স্বপ্নে আওয়ামীলীগ পরিবারের নেতাকর্মীরা বেশ উৎফুল্ল ছিলেন। বিগত কিছুদিন ধরে আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছিল। গতকাল বেলা ১২টায় পৌরসভা প্রাঙ্গনে সম্মেলন শুরু হলে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে ত্যাগী নেতাদেরকে সভাপতি, সেক্রেটারী ও অন্যান্য পদে নির্বাচন করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় অধিবেশন সম্পন্নের জন্য উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন নির্ধারণ করা হয়। এরই আলোকে উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও পৌরসভার কাউন্সিলারগন কাংখিত প্রার্থীকে সভাপতি ও সম্পাদক করার জন্য ভোটের প্রস্তুতি নেন। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন উদ্যোগ নেন সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে। এসময় উপজেলা সম্মেলন কক্ষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে কোন সমঝোতা হয়নি। এ সময় বাইরে অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের কাছে খবর আসে ভোট ছাড়াই বিশেষ ক’জন লোক দিয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমন খবর প্রচারিত হতে থাকলে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে। এসময় অনেকেই স্থানীয় এমপি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে উদ্দেশ্য করে নানা মন্তব্য করতে থাকেন। এক পর্যায়ে নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে চলতে থাকে নানা শ্লোগান। বিষয়টি অনুধাবন করে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের প্রহরায় নুরুল ইসলাম নাহিদসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরে গোলাপগঞ্জে দুটি বলয়ে কাজ করেছিল। একটি হচ্ছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অনুসারী গ্রুপ, অন্যটি হচ্ছে নাহিদ বিরোধী গ্রুপ। নানা কারণে নাহিদ বিরোধী গ্রুপ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শক্ত অবস্থানে চলে আসে। সম্প্রতি সম্মেলনের পূর্বে উপজেলার বাঘা, ফুলবাড়ি, আমুড়া ইউনিয়নসহ কটি ইউনিয়নে কাউন্সিল হলে বেশিরভাগ পদে নুরুল ইসলাম নাহিদ বিরোধীরা জয়লাভ করে। সভাপতি পদে বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ ও সেক্রেটারী পদে নুরুল ইসলাম নাহিদের সবচেয়ে কাছের লোক হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন প্রার্থী ছিলেন। অপরদিকে নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সভাপতি পদে প্রার্থী হন গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ লুৎফুর রহমান ও সেক্রেটারী পদে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলেন লুৎফুর রহমান ও শাহাব উদ্দিনের পক্ষে এমন কথা সম্মেলনের পূর্ব মুহুর্তে সকলের মুখে শোনা যায়।

এদিকে উপজেলা প্রাঙ্গন থেকে হাজারও ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী পৌর শহরে মিছিল সহকারে এসে জড়ো হয়ে তারা মিছিল দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা সিলেট জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়। এতে দুদিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।

Advertisement