ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল বাঁচাতে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব ও ডিসিদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে যেন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয় সে জন্য দেশবাসীকে দোয়া করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর ১৮ লাখ মানুষকে ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে যেন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয় সে জন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব ও ডিসিদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক লীগের সম্মেলনে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছি। আমাদের মানুষের জানমাল বাঁচাবার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ইতোমধ্যে আমরা ট্রাস্ট ফান্ড করে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে বাংলাদেশ যেন রক্ষা পায় সেই কর্মসূচি আমরা বান্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, পৃথিবীতে বাংলাদেশই মনে হয় একমাত্র দেশ, যেখানে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগের শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। আজ রাতেই এটি বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের উপকূলের কাছেই চলে এসেছে অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৫ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এজন্য অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ৯ ও কক্সবাজার ৪ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, সকালে বাংলাদেশের উপকূলের ৪শ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করেছে বুলবুল।
ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ দেখে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, স্পষ্টত এটি বাংলাদেশের খুলনা উপকূল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শনিবার সকাল ৮টায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ৯ ও কক্সবাজার ৪ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টির বিষয়ে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের কাছ দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে।
আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দোয়া করবেন ঝড়ে যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। ঝড়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ঝড় মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব রকম প্রস্তুুতি নেয়া আছে। ঝড় পরবর্তী সময়ে ত্রাণসহ সব প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।
এ দিকে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তাদের প্রতি এবং তা অনুসারে তারা কাজ করছেন। গতকাল সারাদিন এক ঘণ্টা পর পর তিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো শুনেছেন। গত এক দশকে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশে। শনিবার সন্ধ্যায় আঘাত হানতে যাওয়া বুলবুলও শক্তিশালী।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। এত বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূণিঝড় ‘বুলবুল’ এর সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলার জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১৩টি উপকূলীয় জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ( জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মরত সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীর ছুটি (সাপ্তাহিক ও সরকারি) বাতিলসহ কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশনা দিয়া আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। জেলা গুলো হলো সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্ণীপুর, খুলনা, চাঁদপুর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম।
এক পৃথক আদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলাসহ মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষাকরতঃ যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান এবং প্রয়োজনে ঘূণিঝড় পরবর্তী রাস্তা-ঘাট/কালভার্ট সংস্কার/ মেরামতপূর্বক সচল রাখার কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে উপদ্রুত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
তাছাড়া দুর্গত এলাকায় সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে সমন্বয়পূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।