ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: থমকে গেছে বিএনপির ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র তোড়জোড়। সরকারবিরোধী বৃহত্তর প্লাটফরম গড়ে তোলার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে এর কোনো অগ্রগতি নেই। ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি।
উল্টো জোট ও ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে তাদের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে বলে জানান তারা।
বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধাক্কা সামলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয় বিএনপি। জোট ও শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পরিকল্পনা করে দলটি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে মাঠে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। রাজপথে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনে ফের তৎপরতা শুরু করে বিএনপি। কিন্তু নীতিগত সিদ্ধান্তের মধ্যেই আটকে আছে সবকিছু।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ মুহূর্তে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন বৃহত্তর জাতীয় জাতীয় ঐক্য।
রাজনীতিতে সুস্থ ধারা আনতে হলে আওয়ামী লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে সোচ্চার হতে হবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক থাকলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগে ভাটা পড়েছে এটা বলা যাবে না। আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করছি। সব কাজ তো সবসময় দৃশ্যমান দেখা যায় না। অনানুষ্ঠানিক অনেক কাজ করতে হয়।
তবে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই। এ ব্যাপারে বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, মূল স্টেক হোল্ডার (অংশীজন) তারা।
কিন্তু এ নিয়ে তাদের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। মনে হচ্ছে দলটির নীতিনির্ধারকরা জাতীয় ঐক্য চান না। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে বিএনপিকেই উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা বৃহত্তর ঐক্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন সেক্ষেত্রে আগানো বা পেছানোর কোনো বিষয় নেই। কারণ কাউকে তো জোর করে এনে ঐক্য করতে পারি না।
আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে এগোতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডে শুধু বিএনপি নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ। সরকারের দুঃশাসন থেকে সবাই মুক্তি চান। শুধু বিএনপি নয় দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন। সবাই মোটামুটি ইতিবাচক। তবে কবে নাগাদ এটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে সেটা বলা যাবে না।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা একাধিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এরমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের রেখে সরকারবিরোধী সব দল নিয়ে এ ঐক্য গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়।
বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং করণীয় সম্পর্কে তাদের মতামত নেয়া হবে। তাদের মতামত পাওয়ার পরই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শুরু করবে আনুষ্ঠানিক আলোচনা। পাশাপাশি তৈরি করা হবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সম্ভাব্য রূপরেখা। শুরুতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি মাধ্যমে রাজপথে নামা হবে।
সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকবে সরকারবিরোধী জনমত তৈরি। এভাবে তারা পৃথক কর্মসূচি পালন করে যাবে। এরপর সময় সুযোগমতো সব দল মিলে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ নামে একটি জোট বা প্লাটফরম তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়।
সেই প্লাটফরম থেকেই সরকারের পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলা হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি নেতারা। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
কিন্তু তাদের সেই উদ্যোগ আর বেশিদূর এগোয়নি। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। জোট ও ফ্রন্টের বাইরে কোনো দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও চোখে পড়েনি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন পেশাজীবীকে এ ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার কথা থাকলেও সেই উদ্যোগও নেই।
এ নিয়ে এখনও জোট ও ফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করেনি বিএনপি। নেয়া হয়নি তাদের মতামত। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতেই ব্যস্ত দলটির নীতিনির্ধারকরা। জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নিয়ে শিগগিরই কোনো আনুষ্ঠানিক ‘মুভমেন্ট’ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। ডান, বাম এমনকি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন।
কিন্ত শেষ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে কাদের সিদ্দিকী ইতিমধ্যে ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেছেন।