চতুর্থ দফার প্রথম দিনে চট্টগ্রামের পথে ২ হাজার রোহিঙ্গা

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: চতুর্থ দফার প্রথম যাত্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ছেড়েছে। রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ও বিকেলে পৃথক ভাবে ৩৭টি বাসে এসব রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার পথে রওনা দেন সংশ্লিষ্টরা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ভাসানচরে যাবার পক্ষকালের মাথায় রবি ও সোমবার (১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি) আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচর নেয়ার প্রস্তুতির পর প্রথমদিন দুই হাজার জনকে নিয়ে গাড়িগুলো উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্ট অতিক্রম করে, এমনটি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্র মতে, চতুর্থ দফার প্রথম যাত্রা বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়। আর দ্বিতীয় যাত্রা হয় বেলা আড়াইটায়। প্রথমে ১৬টি বাসে তোলা হয় প্রায় সাড়ে ৮ শতাধিক রোহিঙ্গা। আর পরবর্তী ২১টি বাসে উঠে প্রায় সাড়ে ১১শ’ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। তাদের সাথে দুইটি খালি বাস, দুইটি এ্যাম্বুলেন্স, ৫টি নিরাপত্তা প্রটোকল, বিশেষ সংস্থার তিনটি মাইক্রো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ভাসানচরগামী রোহিঙ্গাদের মালামাল পরিবহনে সাথে রয়েছে ১১টি কাভার্ডভ্যান।

আগের মতো উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে দিনে দুভাগে ভাগ করে বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব যানবাহন আগে থকেই প্রস্তুত রাখা হয়। পুরো ৩৪ ক্যাম্প থেকেই রোহিঙ্গারা ট্রানজিট পয়েন্টে শনিবার বিকেল থেকে আসতে শুরু করে। অনেকে রবিবার সকাল ও দুপুরে এসে পৌঁছান। সোমবার যারা ভাসানচরে পথে বের হবেন তারা রবিবার সন্ধ্যা ও সোমবার সকাল-দুপুরে ট্রানজিট পয়েন্ট আসবে। দুদিনের যাত্রার জন্য প্রায় ৭২টা বাস, একাধিক কাভার্ডভ্যান ও প্রয়োজনীয় অন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবারেও স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হওয়া প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ রয়েছে। তবে, এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এরই মাঝে রবিবার দিনে পৃথক ভাবে ও সোমবারের একইভাবে স্থানান্তরের প্রস্তুতি রয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিটিংও করে।

নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝিরা বলেন, ভাসানচরে অবস্থান করা স্বজনদের জীবন চিত্র দেখে এখন অনেকে আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছে। ভাসানচরে যেতে নিজেরাই এখন তালিকায় নাম লেখান। গতবছরের ৪ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি যাদের স্বজনরা ভাসানচর গেছে, তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনেই এখন যাত্রার জন্য অপেক্ষা করেন। হাসিমুখে ট্রানজিট ক্যাম্পে আসছেন। উখিয়া-টেকনাফের প্রায় সব ক্যাম্প থেকেই রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাচ্ছেন।

ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মতে, বিশ্ব চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আলোচনা করলেও নানা তালবাহানা শুরু করে এখনো একজনকেও ফিরিয়ে নেয়নি। তার উপর সম্প্রতি সেদেশে সেনা অভ্যুত্থান হবার পর অতিসহসা নিজ দেশে ফেরার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। তাই পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে বলে মনে করছি আমরা। ভাসানচরে নির্মিত অবকাঠামো আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় ভরপুর বলে জেনেছি। তাছাড়া, আশ্রিত জীবনে বাংলাদেশ সরকার যেখানেই রাখে তাতো একই রকম। মনে করছে রোহিঙ্গারা।

সূত্র মতে, নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাও। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়ে তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। দু’বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে এর যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন।

গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ আর ২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের এক হাজার ৮০৫ রোহিঙ্গা এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তর হয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তরিত হয়েছেন। সেখানে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে সমুদ্র উপকূলে আটক তিন শতাধিক রোহিঙ্গাও রয়েছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসন নির্মাণ হয়েছে, তা আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের চেয়ে ১৮টি উন্নত সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। তাদের মধ্য থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেয়ার উদ্যোগ চলছে।

Advertisement