:: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী ::
ইদানিংকালে বাংলাদেশে রিলিফ বন্টনে একটি নতুন শব্দ যুক্ত হয়েছে “চাউল চোর“। নতুন এজন্য বলেছি, কারণ আগে রিলিফ ছিল গম, আর তাই রিলিফ চোরদের বলা হতো “গম চোর” আর এখন যোগ পাল্টেছে, গমের বদলে রিলিফ এসেছে চাউল। তাই এর চোরদের বলা হচ্ছে চাউল চোর। সোশ্যাল মিডিয়াতে যে ভাবে প্রচার হচ্ছে, মনে হচ্ছে এই প্রথম আমাদের দেশে এই চোরদের আগমন ঘটেছে। অতীতে কখনো এই চোরদের দেখা মেলেনি। আসলেই কি তাই? উত্তর না। এই চোররা দীর্ঘদিন ধরে তাদের এই আস্তানা ঘরে তুলেছে। জনপ্রতিনিধির নাম দিয়ে যুগ যুগ ধরে তারা এই অপকর্মটি করে যাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হলো এখন এতো প্রচারের কারণ কি? এর কারণ খুব সহজ, জনগণ এখন কিছুটা হলেও সজাগ হয়েছে। প্রশাসন তৎপর রয়েছে আর সর্বোপরি সোশ্যাল মিডিয়ার সুযোগে আমরা খুব সহজে খবরটি পেয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত চাউল চোরদের সংখ্যা ৩০০ জনের নিচে। চাউল চোররা যে শুধু মাত্ৰ জনপ্রতিনিধি তা নয় উনাদের নামের পাশে রয়েছে দলীয় অনেক পদ পদবি।
বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যা জানার জন্য গুগলের বাটনে ক্লিক করেছিলাম। গুগলের তথ্যমতে বাংলাদেশে রয়েছে ৪,৫৫০ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান আর প্রতিটি চেয়ারম্যানের সাথে রয়েছে ১২ জন মেম্বার। তার পরে রয়েছে ৩৯২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উনার সাথে রয়েছে ২ জন করে ভাইস চেয়ারমান। তাছাড়া দেশে রয়েছে ৩৮৫ পৌরসভা আর পৌরসভায় রয়েছে নির্বাচিত কাউন্সিলর, ৬৪ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আর তারমধ্যে ১৫ জন করে কমিশনার। আর সর্বোপরি ৩০০ জন এমপি আর ৫০ জন মহিলা এমপি। সব জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যা ক্যালকুলেটরে সংকুলান করা কঠিন। যদি এখন পর্যন্ত ৩০০ জন চাউল চোর ধরা হয় তাহলে সংখ্যা অনুপাতে এই চোরদের সংখ্যা কিন্তু খুব নগন্য। এই চাউল চোররা মহা দুর্যোগে গরিবের মুখের আহার কেড়ে নিচ্ছে।
তারা চুরি করে একদিকে সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের বদনাম করছে আর সেই সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদ পদবি ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলকেও কলুষিত করছে। সুতরাং এখন প্রশ্ন হলো, এই চোরদের দমন করবেন কিভাবে?
আমি মনে করিনা এই ৩০০ জনের পরে বাংলাদেশে আর কোন চাউল চোর নাই। আমার ধারণা এই চাউল চোরের সংখ্যা অনেক। কিছু সংখ্যা আমাদের দৃশ্যমান আর কিছু সংখ্যা অদৃশ্য। তবে সবাই যে চাউল চোর সেটা আমি মনে করি না। এর মধ্যে অনেক ভালো মানুষও রয়েছে তবে চোরদের সংখ্যা কম না।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই সকল চোরদের ধমনের কিছু বিষয় নিয়ে আমি আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।
নির্বাচনের সময় টাকা খেয়ে ভোট না দেয়া:
বাংলাদেশে প্রতিটি নির্বাচনে প্রাথীর একটা বাজেট থাকে। বাজেট ছাড়া কেউ প্রার্থী হলে সে ভোটে জিততে পারেনা। নির্বাচনে টাকা বিলি করা হয়। নির্বাচনের আগে ভোট কেনা বেচা হয়। আপনি যদি টাকা খেয়ে ভোট দেন, তাহলে টাকা দিয়ে পাশ করা ঐ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দুর্নীতির বিরোধিতা করবেন কেন? আপনিতো জেনে শুনে একজন দুর্নীতিবাজকে ভোট দিয়েছেন। সুতরাং এই চাউল চোরদের নির্মূল করতে হলে আমাদের ভোটের সময় সঠিকভাবে ভোট দিতে হবে।
সামাজিক সচেতনতা:
প্রতিটি এলাকায় যুব সমাজ রয়েছে। তাদের উচিত হবে বন্টনের সময় চেয়ারম্যান অফিসে উপস্থিত থেকে খুঁজ খবর রাখা। বিশেষ করে ইউনিয়নে কতটুকু বরাদ্ধ এসেছে এবং মানুষ কতটুকু পাচ্ছে।
কালো বাজারে কেনা বেচা বন্ধ করা:
চাউল চোররা চুরি করে কোননা কোনভাবে বিক্রি করে। জনগণই আবার সেই চাউল ক্রয় করে। প্রতিটি এলাকায় এই সকল চাউল কেনা বেচা জনগণের স্বার্থে জনগণের উচিত বন্ধ করা। সেটা ব্যক্তি হোক কিংবা কোন ব্যবসা প্রতিষ্টান হোক।
চোরদের তথ্য প্রকাশ করা:
চাউল চোর ধরার সাথে সাথে তার নাম ও ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা।
তবে আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে সকল জন প্রতিনিধিদের কথা বলার। বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে এখন জন প্রতিনিধি দেখলেই মানুষ সন্দেহের চোখে দেখে। সুতরাং জনপ্রনিধিরা তাদের মান সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসা জরুরি।
লেখক : ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
কলামিস্ট, কন্ট্রিবিউটর ব্রিট বাংলা। প্রিন্সিপাল সলিসিটার, কেসি সলিসিটর্স, ইউকে।