ফারজানা ইসলাম লিনু
একবার বেড়াতে আসা আমাদের পাশের বাড়ির এক মহিলার অনেক গুলো বাচ্চা দেখে হুরু দাদী জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কোলের বাচ্চাটার বয়স কত?
মহিলার উত্তর ছিল, এই বরইয়ের দিনের আগের আমের দিনের আগে যে বরইয়ের দিন আছিল তার আগের আমের দিনের পরের বাইরা (বর্ষা) মাসো আমার পুড়ির জন্ম হইছে। এখন তুমি রেগো দাদী হিসাব করি লাও কয় বছর অইলো।
আর্যভট্ট বা ভাষ্কর আচার্য ব্যর্থ হওয়ার মত কঠিন এই হিসেব বের করতে হুরু দাদী মুখে অপারগতা প্রকাশ না করলেও প্রসঙ্গ পালটে অন্য কথায় চলে গেলেন। নাছোড়বান্দা হয়ে লেগে থেকে বয়স বের করার কুল কিনারা করতে না পেরে হাল ছেড়ে দেই আমরা। কিন্তু বাচ্চাটার বয়সের সেই অংকটা ভুলতে পারিনা। অনেকবছর পর আজ ঘটনাটা প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে গেল।
চার দশক আগে জন্ম নেয়া আমাদের প্রজন্মের বাচ্চাদের জন্মের দিন তারিখের হিসেব রাখার প্রয়োজনীয়তা তেমন গুরুত্বপুর্ণ ছিল না। কিছু বছর দেশের স্বাধীনতার সাথে হিসেবটা মেলানো থাকলেও স্বাধীনতার বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেটাও একসময় অকেজো হয়ে যায়। কাউকে জন্মতারিখ জিজ্ঞেস করলেই সেরেছে, গেল বার, তেসলা বার, চৌসলা বার, আমের দিন, তুফানের দিন, বরইয়ের দিন, ভুইছালের বছর ইত্যাদি অনেক কিছু মিলিয়ে নিজ দায়িত্বে বয়সের হিসেব বের করতে হত। এই সব জটিল হিসেব থেকে মুক্তি পেতে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছামত একটা বয়স বসিয়ে দিতেন সব ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি তালিকায়। ক্লাস ফাইভের সেন্টার পরিক্ষার ফর্ম ফিলাপের সময় আমার জন্ম তারিখের ঘরে ইচ্ছামত সন তারিখ বসিয়ে দেয়া হয়েছে অভিভাবকদের অজান্তে। সার্টিফিকেটের জন্মের তারিখের সাথে আসল জন্মদিনের একটা অমিল বহন করে আসছি সেই থেকে। এস,এস,সি পরিক্ষার প্রবেশপত্রে দেখে ব্যাপারটা আব্বার নজরে আসে। আব্বা বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে যাওয়াতে কিছু করার ছিলনা।
যদিও আমার আম্মা একটা ডায়রিতে আমাদের জন্মের ক্ষণ, তারিখ লিখে রেখেছিলেন অতি যত্ন করে।
“১৪ই নভেম্বর, ১৯৭৬ সাল”।
সেই হিসেবে আজ আমার জন্মদিন। দু দুটো জন্মদিন হলেও পারিবারিকভাবে জন্মদিন পালনের রেওয়াজ না থাকাতে জন্মদিন কখনো পালন করা হয়নি। জন্মদিন আসলে আব্বা তো মুখ গম্ভীর করে বলতেন, জীবন থেকে একটা বছর ঝরে পড়লো তার জন্য দুঃখ করা উচিত। এত আনন্দ উল্লাস করে জন্মদিন পালন করা তো বোকামি ছাড়া কিছু না। যদিও প্রায় জন্মদিনে পার্সেল করে বই পাটাতেন। একবার কুরিয়ারের প্যাকেট খুলে পছন্দের কয়েকটা বই পেলাম। অনেকগুলো বইয়ের ভেতর “একালের রূপচর্চা ” নামে একটা বই ছিল। তিনটি পর্বে বিভক্ত বইটাতে ত্বকের যত্ন, চুলের যত্ন ও সুস্বাস্থ্যের কুটিনাটি কোন বিষয় বাদ পড়েনি। কৈশোরে পা দেয়া আজন্ম রোগা, পাতলা মেয়ের স্বাস্থ্যগত উন্নতি বিধান ও কোঁকড়া চুল সোজা করতে এটা ছিল আব্বার ক্ষুদ্র এক প্রয়াস। এম্নিতেই প্রতি নভেম্বরে আব্বা তল্পিতল্পা নিয়ে বাড়িতে লম্বা ছুটি কাটাতেন। কারন ছিল আমাদের বার্ষিক পরিক্ষা ও অগ্রহায়ণ মাসের ধান তোলা। প্রতিটা পরিক্ষা দুই বার দিতাম। একবার স্কুলে, একবার ঘরে। স্কুলের প্রশ্ন দিয়ে দ্বিতীয় দফা ঘরের পরিক্ষা একটু বেশি ভালো হত। পরিক্ষার সময় যাতে ঠান্ডা বা পেট ব্যাথা জনিত কোন অসুখ বিসুখ কাছে ভিড়তে না পারে সে জন্য আমাদের উপর চলত তুলসিপাতা, বাসকপাতা, পুটিপাতা, কেশুতপাতা, বনজামির, আমলকি, হরিতকির নির্মম ভেষজ থেরাপি। দাঁতগুলো যাতে সুরক্ষিত থাকে তার জন্য কচি পেয়ারা পাতা ও লজ্জাবতি গাছের ডাল শিকড় জাল দেয়া বিদঘুটে তেতো স্বাদের পানি দিয়ে কুলি করানো হত। রূপচর্চার বইয়ে বর্নিত নিত্যনতুন রূপচর্চা ও স্বাস্থ্য চর্চা আব্বার তালিকায় যুক্ত হওয়াতে আমাদের আরাম হারাম হয়েছিলো পরের কয়েক বছর। যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে প্রায়ই ইচ্ছে করতো বইটা ছুড়ে ফেলে দেই। সময়ের হিসেব বড় বিচিত্র। বইটা এক সময় আমার কাছে সেরা উপহারের স্বীকৃতি পেল। যক্ষের ধনের মত সযত্নে তুলে রাখি বইটা।
আমার যেদিন জন্ম হয় সেদিন ছিল আমাদের মিনু চাচার বিয়ে। বেচারা একটু পর বিয়ে করতে যাবেন। মুখের অর্ধেকটা শেভ করেছেন,আরো অর্ধেকটা বাকি। অমনি আমার মায়ের প্রসব বেদনা শুরু হলো। তাৎক্ষনিক অন্য কাউকে না পেয়ে মিনু চাচা কে পাঠানো হল গ্রামের সবচেয়ে পুরনো ও সুদক্ষ ধাত্রীকে আনতে। ধাত্রী আসতে না আসতেই পিতামাতার চতুর্থ সন্তান ও প্রথম কন্যা সন্তানের পৃথিবীতে আগমন ঘটে। সবচেয়ে বড় ভাইয়ের বয়স ষোল বছর হলেও আমার তরুণী মায়ের ত্রিশ হতে তখনো বাকি। আম্মার তিন পুত্র সন্তানের জন্ম আমাদের নানা বাড়িতে হলেও আমার জন্ম বাড়িতে হয়। প্রতিবার পুত্র সন্তানের খবর পেয়ে আব্বা অনেক গড়িমসি করে আসতেন। এইবার টেলিগ্রাম মারফত কন্যাসন্তানের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে চলে আসলেন কারন আব্বার অনেক বেশি কন্যা সন্তান প্রীতি ছিল। আমার জন্মের আগে কয়েকবার কন্যাশিশু দত্তক পর্যন্ত নিতে চেয়েছিলেন। আমাদের মসজিদের হুজুর একবার আমাদের ভাইবোনদের কন্যাসন্তানাধিক্য দেখে আমাকে বলেছিলেন, তোমার আব্বার দোয়া তোমাদের উপর লেগেছে। তাইতো তোমরা কন্যা সন্তানে ভরপুর।
যাই হউক কন্যা সন্তান জন্মের আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হলনা। প্রসবত্তোর কি এক জটিলতায় মাসখানেক পর আমার আম্মা হঠাৎ করে অনেক অসুস্থ হয়ে যান। জটিল হার্টের অসুখে অনেকটা ধরাশায়ী। সিলেটে এসে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা নিয়ে আমার আম্মা অবশেষে সুস্থ হয়ে উঠেন। দ্বিতীয়বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার লম্বা এক গল্প প্রতিটা জন্মদিনে আমাকে শুনতে হতো। মহাসমারোহে আয়োজন করে গল্পটা বলা হলেও শুনা হত বড়ই আলস্যে। এক গল্প বছর বছর শুনতে কি আর ভালো লাগে? ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে শুনি আর বলি এক গল্প আর কত শুনবো?
মা জননী আমার বলেন, যত দিন বেঁচে আছি তত দিন শুনাবো।
১৯৯৪ সাল,অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি। বাড়ি ছেড়ে এসেছি কয়েক মাস আগে। আমার ক্ষীণকায় শরীর আর কোঁকড়ানো চুল নিয়ে আম্মার চিন্তার অন্ত নাই। আম্মা প্রতিমাসে দুটো করে চিঠি লিখেন। চিঠিগুলোর ভাষা প্রায় একই রকম। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিও, নামাজ পড়িও, চুলে তেল দিও। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি মাসের দ্বিতীয় চিঠি আসে। আম্মা লিখলেন, “তোমার জন্মদিনের কথা আমার মনে আছে। এইবার তোমার আঠারো বছর পূর্ন হলো। বয়সের তুলনায় বড় হও নাই। খাওয়া দাওয়া করিও, নিজের যত্ন নিও।”
কি বলেন মহিলা? বড় হই নাই!
অনেক বড় হইছি। লম্বায় আম্মাকে ছাড়িয়েছি। একা একা বাড়ি যেতে পারি, নিজে বাজার করে রান্না করতে পারি। গায়ে খালি দলা দলা গোস্ত থাকলে মানুষ বড় হয়। যত্তসব! চিঠিটা পড়ে বড় অযত্নে ট্রাংকে তুলে রাখি আর মনে মনে বলি যাক বাঁচা গেল পুরনো গল্পটা এইবার শুনতে হবে না।
মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধান, কি করে যেন সব পালটে গেল। আমার মায়ের হাতের শেষ লিখা এই চিঠির মুল্য বেড়ে গেল। অযত্নে অবহেলায় ফেলা রাখা চিঠিটা ট্রাংকের চিপা থেকে খোঁজে বের করে আব্বার দেয়া একালের রূপচর্চা বইয়ের ভেতর ভাজ করে রাখি দ্বিগুণ যত্নে।। জন্মের সময়ের গল্পটা বার বার শুনতে চাই আম্মার মুখে। যদিও সে সুযোগ হাতছাড়া হলো চিরতরে। হারিয়ে যাওয়া বাকি চিঠি গুলো খুঁজি পাগলের মতো।
আম্মার বিদায়ে স্কুল পড়ুয়া ছোট বোনকে নিয়ে শুরু হয় আমার ব্যতিক্রমী মেস জীবন। আনন্দময়ী হোস্টেল নামক মেস হয়ে যায় আমাদের দুই বোনের মোটামুটি স্থায়ী ঠিকানা। সবাই মাসে দুই মাসে বাড়ি গেলেও আমরা খুব ঠেকায় না পড়লে যাই না। আনন্দ উল্লাসের একটা উপলক্ষ খুঁজি আমরা। প্রতি মাসে হোস্টেলের কারো না কারো জন্মদিন থাকে। ঘরোয়াভাবে ভাবে হলেও বিপুল উৎসাহে পালিত হয় জন্মদিনের অনুষ্ঠান। দু চারদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত প্রস্তুতি। জন্মদিন পালনের ক্ষন নির্ধারন হত রাত বারোটায়। কখনো চাঁদনী রাতে ছাদের কোনায়, কখনো রুমের বাতি নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে পালিত হয় আমদের জন্মদিন। কেক কাটা, উপহার বিনিময়, হালকা খাবারের আয়োজনে দিনটা কেটে যেত আমাদের। আটপৌরে জীবনের বড়সড় এই আনন্দের দিনটাকে নিয়ে অতি সন্তর্পনে দু লাইন লিখে রাখি নিজের ডায়েরিতে। বয়স বাড়ার চিন্তা নামক সিন্দাবাদের ভুত তখনো চেপে বসেনি ঘাড়ে। মাত্রাতিরিক্ত আনন্দের জোয়ারে খালি মনে হত ইশ জন্মদিনটা আবার আসতে কত্ত দেরী। উপহার প্রদানও ছিল অনেক মজার। নিজের না পড়া বা নতুন বের হওয়া বই উপহার হিসেবে প্রাধান্য পেত বেশি। একঢিলে দুই পাখি আর কাকে বলে। উপহারও দেয়া হল সেইসাথে বইটা নিজেরও পড়া হল। এখনও বইয়ের তাকে আপনজনদের দেয়া উপহারগুলো মনে করিয়ে দেয় বর্ণীল সেসব দিনের কথা।
একবার আমার বোন সোমা গেল চিটাগাংয়ে সেজো খালার বাসায়। কাগজে মোড়ানো একটা জিনিস আমার জন্য নিয়ে আসে সেজো খালার বাসা থেকে। আমাকে দিয়ে বলে, এই নাও তোমার জন্মদিনের উপহার। স্বভাব সুলভ বিরক্তিতে প্যাকেট খুলে আমি তো হা। আম্মার কোলে ছয় সাত মাস বয়সের আমি। সেই কঠিন অসুখ থেকে আরোগ্য লাভ করে বাড়ি যাওয়ার আগে সিলেটের বিখ্যাত বর্মণ স্টুডিওতে এই ছবিখানা তুলেছিলেন আম্মা। আমার জন্মের পর এটাই ছিল আমার প্রথম ছবি। দীর্ঘ অসুস্থতার ছাপ আম্মার চোখেমুখে, তারপরও অনেক প্রানবন্ত আমার আম্মা। অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও এই মুল্যবান উপহার আমি সযত্নে তুলে রেখেছি আজও।
পুত্রকন্যাদের ভুলোমনা বাবার আমাদের কারো জন্মদিন মনে থাকেনা। মাঝেমাঝে ছেলেমেয়েরা কোন ক্লাসে পড়ে তাও মনে করিয়ে দিতে হয়। কিন্তু ছেলেমেয়েদের চাপে পড়ে সবার জন্মদিন মনে না রেখে উপায় নেই। বেচারা আমাদের সবার জন্মদিনে মাঝরাতে একটা কেক নিয়ে হাজির হন। ছেলেমেয়েরা তখন থাকে গভীর ঘুমে। কেকটা যথারীতি তুলে রাখা হয় ফ্রিজে। পরের দিন সকালে যে যার মত বেরিয়ে পড়ি। ফিরে এসে কোন এক সুবিধাজনক সময়ে কাটা হবে জন্মদিনের বাসি কেক। কিন্তু সব সদস্য একত্রিত হলেও পুত্রকন্যার বাবাকে পাওয়া যায় না সময় মত। তাই বিরস মুখে বাচ্চারা কেক কাটে বাবাকে ছাড়াই। এমনকি বাপের জন্মদিনেও বাপকে ছাড়া কেক কাটার ইতিহাস আছে আমাদের।
আমার জন্মদিন আমার বাচ্চাদের কাছে সেই শিশুকাল থেকেই বিরাট ব্যাপার। রাত বারোটা থেকে শুরু হয় শুভেচ্ছা জানানো চলতে থাকে সকাল অবধি। কখনো জার ভর্তি ভালোবাসা,কখনো কার্ড ভর্তি ভালোবাসা আবার কখনো নিজের হাতে তৈরি কেক ভর্তি ভালোবাসা। নিজের হাতে আঁকা ছবির সাথে দুই চার লাইনের ভালোবাসাও বাদ পড়ে না। বিচিত্র সব ভালোবাসার মুগ্ধতায় আপ্লুত হলেও আব্বার চেয়ে কঠিন মুখ বানিয়ে বলি জীবন থেকে একটা বছর কমে গেল এজন্য এত আনন্দ ফুর্তির কি হল?
বছর দুয়েক হল চল্লিশ পেরিয়ে আমি চালশেতে। তাই সুমনের চালশের গানটা জন্মদিনে বড্ডো বেশি কানে বাজে।
“চোখের সঙ্গী হবে চশমা,চল্লিশ পেরুলেই চালশে।”
চশমা এখনো সঙ্গী না হলেও বর্ধনশীল ধুসর চুলের বৃদ্ধি ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মাথার তালু ছাড়িয়ে বিস্তৃতি ঘটেছে কপালের আশেপাশে। লুকিয়ে রাখার চেষ্টায় পুরোপুরি না হলেও ব্যর্থ অনেকটা। ধুসর চুল গুলোর কৌতুহলী উঁকি ঝুঁকি আর ভালো লাগেনা। জন্মদিন পালন করে চালশেটা জানান দিতে আমি বারন করি আমার ছেলেমেয়েদের। কিন্তু কে শুনে কার কথা। চালশে মায়ের জন্মদিন পালন করতে তোড়জোড় না করলেই নয়। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে আমার প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা। জন্মদিনের যে কোন মুহুর্তে সবাই দলবেঁধে হাজির হয় সারপ্রাইজ দিতে। ওদেরকেও মুখ কালো করে বলি জীবন থেকে একটা বছর কমে গিয়েছে, মনটা খুব খারাপ। তাই এসব আজাইরা আনন্দ আমার ভালো লাগেনা। খবরদার আর কখনো আমার জন্মদিনে আনন্দ ফুর্তি করবে না। তারপরও ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু বাচ্চা যাকে প্রত্যেক দিন দু বার না হলেও একবার ধমক দেই যৌক্তিক কারনে, সে সবার আগে শুভেচ্ছা ও শুভকামনার বার্তা নিয়ে হাজির হয়। ছোট্ট কাগজে চমৎকার সব ভালোলাগার কথা লিখে দিয়ে যায় অকপটে। মিশ্র অনুভূতিতে মনটা ভারাক্রান্ত হয়। বাড়ে বেঁচে থাকার আকুতি।
দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করার কারনে সহকর্মীরা আপনজনের জায়গাটা দখল করে নিয়েছেন। এরমধ্যে তিনজনের পর পর তিন দিনে জন্ম। তাই একসাথে কেক কাটাও হয়েছে কয়েকবার। অন্যান্য সহকর্মীদের ভালোবাসা, শুভকামনা ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে কাটে জন্মদিনের মুল্যবান সময়টুকু।
চালশেতে এসে মনেপ্রাণে চাই দিনটাকে একেবারে ভুলে যেতে। কিন্তু সবার প্রগাঢ় ভালোবাসায় সে উপায় নেই। ফেসবুকের ওয়াল বন্ধুদের জন্য খোলা থাকায় এখানেও চলে অবিরাম শুভকামনা আর শুভেচ্ছার বৃষ্টি।
এতশত ভালোবাসায় আশারা ডালপালা ছড়ায়। বাড়তি বয়সের যন্ত্রনাময় নির্লিপ্ততা কেটে যায়, ছুটে পালায় চালশের পানসে ভাব। ভালো লাগা আর মুগ্ধতায় বয়স বাড়ায় কষ্ট লাঘব হয়। আত্মবিশ্বাসের সাথে বাড়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা। চালশের পরে আসবে পাঞ্চশে, তারপর আরো। সব হিসেব তুচ্ছ করে পরানের গহীন ভেতর থেকে বেঁচে থাকার বল্গাহীন আকুতি দিনকে দিন বেড়ে চলছে। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি অনন্তকাল না হউক স্বল্পকালের বেঁচে থাকাটাও হয় যেন কর্মের আনন্দের।