চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি কোরবানীর পশু প্রস্তুত

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার পশুহাটগুলো। সেইসাথে বেড়েছে পশু বেচাকেনা। তবে পশু আমদানী বেশী হওয়ায় দাম তুলনামূলকভাবে কম। জেলার শিয়ালমারী, ডুগডুগি, মুন্সীগঞ্জ, গোকুলখালী, নয়মাইল এবং আলমডাঙ্গা পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে, এ জেলার পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে শুরু করেছে।জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় ১১ হাজার ১৬০ টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৯৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৫ হাজার ১৯৫ টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২ হাজার ৫০৪ টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ২৭০ টি। এসব খামারে কোরবানী উপলক্ষে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৩১ হাজার ৮৭১টি, মহিষ ১৩৮টি, ছাগল ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬টি ও ভেড়া ১ হাজার ৫২৭টি। এবার জেলায় কোরবানীর চাহিদা রয়েছে ৮৭ হাজার ৭৯৬ টি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২০ হাজার ৭৪৫ টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২২ হাজার ৮২৫ টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭ হাজার ৭২৬ টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৬ হাজার ৫০০ টি। এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৬২ হাজার ৭৭৬ টি কোরবানীযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৬২০ টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৪ হাজার ৪৫৭ টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১১ হাজার ৩১৮টি ও জীবননগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৩৪১ টি। এসব পশু দিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটানো যাবে।

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর আরও জানায়, এ অঞ্চলের খামারীরা মূলত শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু পালন করেন। গরুর খাবার হিসাবে দেওয়া হয় খড়, খৈল, ঘাস, ভুট্রা, চালের খুদ ইত্যাদি। গরু মোটাতাজাকরণ করার জন্য হরমোন জাতীয় কোন ওষুধ ব্যবহার করেন না খামারীরা। জীবননগর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের খামারী আবুল কালাম বলেন, খামারে মোট ২০টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে ১৮ টি গরু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। একই উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের খামারী রহিম শেখ বলেন, আমার খামারে বর্তমানে ১০টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি গরু বিক্রি করেছি। বাকী গরু ঈদের মধ্যে বিক্রির আশা করছি। আলমডাঙ্গা উপজেলার খামারী হাবেল উদ্দীন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর কেজিতে খাবারের দাম ১৫-২০ টাকা বেশি। প্রতিটি গরুর পেছনে মাসে খাবার বাবদ ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের খামারী সানোয়ার হোসেন জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুই বছর কোরবানীর পশুর হাটগুলো বন্ধ থাকায় ন্যায্য দামে গরু বিক্রি করতে পারিনি। তবে পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় খুব সহজেই রাজধানীর পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে যেতে পারবো। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, জেলায় এবার কোরবানীর জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। জেলার চাহিদা পুরণ করে প্রায় ৬২ শতাংশ পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারীদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, ভারতের গরু যেন কোনোভাবেই আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুই বছর লকডাউনে বন্ধ ছিলো জেলার পশুহাটগুলো। এ বছর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বেচা বিক্রি চলছে জেলার ৬টি পশুহাটে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর লাভের মুখ দেখবেন খামারীরা। এছাড়া ফেরিঘাটে ভোগান্তি এড়াতে পদ্মাসেতু দিয়ে কোরবানীর পশুবাহী পরিবহণ রাজধানীর পশুহাটে নিতে খামারীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

Advertisement