ঘড়ির কাটা উল্টোদিকে গেলে
সব এলোমেলো হবে আবার
– জন বিগস
আশা করি আগামী ৩ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আপনি আপনার ভোট দানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অথবা নিতে যাচ্ছেন। সন্দেহ নেই এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে যখন কোন এক ক্রসরোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে এই কাজটি করতে হয়। এখানে পছন্দ মাত্র দুটি। একটি হচ্ছেন মূলধারার রাজনীতিতে থেকে আরো সামনে এগিয়ে যাওয়া, অন্যটি হচ্ছেন গন্তব্যহীন এবং শেষহীন বিশৃংখলায় ফিরে যাওয়া।
মাত্র ৩ বছরেরও কম সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের বিভিন্ন সেক্টরে আমরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছি। সরকারের কমিশনাররা বিদায় হয়েছেন, বিভিন্ন সার্ভিসে গতি ফিরেছে, প্রশাসন ও রাজনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আমরা আবার মাথা উঁচু করে চলতে শুরু করেছি।
এটি মোটেই সহজ কোন কাজ ছিলো না। টোরী সরকারের বাধ্যতামূলক ৫৮ মিলিয়ন পাউন্ড বাজেট কাটের চাপকে মাথায় নিয়ে এই কাজটি আমাকে করতে হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এলোমেলো রাজনীতি আর প্রশাসনের চ্যালেঞ্জও ছিলো বড় বাধা।
তারপরও আমি বিভিন্ন কঠিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাসিন্দাদের জন্য অতি জরুরী ফ্রন্টলাইন সার্ভিসগুলোকে রক্ষা করেছি। সামর্থ্যর মধ্যে থাকে এমন ঘরবাড়ী বানানোর ক্ষেত্রে আমরা সারাদেশের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে পুরষ্কৃত হয়েছি। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ১০০০ কাউন্সিল ঘর ডেলিভারী শুরু হয়েছে, বাড়ীর ভাড়া কমানো হয়েছে, কাউন্সিল ট্যাক্স রিডাকশন স্কিম এবং প্রাইভেট রেন্টার্স চার্টার চালু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বারার পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আমি মিলিয়ন, মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে আইনশৃংখলা বজায় রাখার সর্বোচ্ছ চেষ্টা করেছি। আমাদের যুগান্তকারী ওয়ার্ক পাথ প্রোগ্রাম বছরে ৫ হাজার বাসিন্দাকে চাকুরী এবং ট্রেনিং প্রদানের জন্য কাজ শুরু করেছে। পার্ক, আইডিয়া স্টোর, লাইব্রেরী এবং ফ্রি স্কুল মিলে বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে। সরকারের ইউনিভার্সেল ক্রেডিট এর কুফল থেকে দরিদ্র বাসিন্দাদের বাঁচানোর জন্য আমি পোভার্টি ফান্ড গঠন করেছি। ধ্বংস্তুপ থেকে উদ্ধার করে সজীব করেছি ইয়ুথ সার্ভিসকে।
আমি আমার কাউন্সিলারদের সাথে নিয়ে কাজ করেছি, কাউন্সিল অধিবেশন থেকে শুরু করে স্ক্রটুনি কমিটি, মেয়রাল এসেম্বলী ইত্যাদিতে জবাবদিহিতা করেছি। আমার অফিসের দরজা সকল মিডিয়ার জন্য উন্মুক্ত ছিলো।
মেয়র অব লন্ডন সাদিক খান এবং জিম ফিটজপ্যাট্রিক ও রুশনারা আলী এমপির সাথে পার্টনারশীপ গড়েছি।
আমি সরকারের বাজেট কাটের বিরুদ্ধে বরাবরই দাঁড়িয়েছি। স্কুল ফান্ডিং কর্তন, জিপি সার্জারী বন্ধ ইত্যাদির বিরুদ্ধে টানা ক্যাম্পেইন চালিয়েছি। কমিউনিটিকে বিভক্ত করে এমন অপশক্তির বিরুদ্ধেও কাঁধে কাঁধ রেখে আন্দোলন করেছি।
আমি আগের মেয়রের গোপনীয়তায় ভরা প্রশাসন আর বিলাসিতাকে কবর দিয়েছি। জাঁকজমক পরিহার করে টাউন হলের রাজনীতিকে করেছি আড়ম্বরহীন। বন্ধ করেছি অর্থের অপচয়। আমি প্রায় প্রতিদিন বারার অলিতে গলিতে পায়ে হেঁটেছি, ব্যবহার করেছি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, গিয়েছি অসংখ্য কমিউনিটি ইভেন্টে। মানুষের সাথে কথা বলেছি, জীবনকে কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। প্রায় ৩০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছি শক্তিশালী নেতৃত্ব। আমি গর্বিত আমার অর্জন নিয়ে। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি, আগামী ৪ বছরের জন্য রয়েছে আরো উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা।
আমরা সবাই জানি দীর্ঘকাল থেকেই পূর্ব লন্ডন হচ্ছে রাজধানীর ইঞ্জিন রুম বা চালিকা শক্তি। বৈচিত্র্য এর বৈশিষ্ট্য। এখানে তারুণ্য খেলা করে। প্রতিদিন নতুন স্বপ্ন এসে যোগ হয়। এসবের উপর ভর করে এই ইঞ্জিনকে চালু রাখতে দরকার একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব। আস্থাহীন দূর্বল নেতৃত্ব কীভাবে ভেঙ্গে চুরমার হয় তাই এখন আমরা দেখছি প্রতিদিন। এটাই যুক্তি, এটাই বাস্তবতা।
ব্যয় সংকোচন আমাদের ভোগাচ্ছে, অনিশ্চিত ব্রেক্সিট ঝুলছে মাথার উপর, বাড়ছে সার্ভিসের চাহিদা। ঘড়ির কাটা উল্টো গেলে সব এলোমেলো হবে আবার। আবার বিশৃংখলা, আবার কমিশনার, আবার নেতিবাচক প্রচারের সুযোগ করে দেয়া হবে চরম দূর্ভাগ্যজনক। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে উদ্ভট কল্পনাবিলাসী রাজনীতির চোরাবালীতে যাতে আমরা আবার হারিয়ে না যাই।
লেবার নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব সবকিছুকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আসুন এই মূলস্রোতে থেকে সামনে এগিয়ে যাই।
জন বিগস
লেবার পার্টির মেয়র প্রার্থী
২৫ এপ্রিল, ২০১৮