“জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?”

ভাবা যায় ধর্ষণই একমাত্র অপরাধ যেখানে ভিকটিমকে দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়? কই, আমার বাড়ীতে ডাকাতি হলে তো আমাকে দোষী বানানোর চেষ্টা করা হয় না? আমি কেন বাড়ীতে অত্যাধুনিক তালা লাগালাম না, আমি কেন টাকাগুলো আলমারীতে না রেখে মাটির তলায় রাখলাম না — তার জন্যে কি আমাকে  কখনো দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়? তাহলে কোনো মেয়ে ধর্ষিতা হলে তার চরিত্র কেমন ছিল, ধর্ষকের সঙ্গে তার পূর্ব পরিচয় ছিল কিনা, মেয়েটি সূর্য ডোবার আগে বাড়ী ফিরল কিনা, মেয়েটি ‌হিজাব করল কিনা – এসব প্রশ্ন আসবে কেন?

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম মেয়েটির চরিত্র খারাপ। তারপরও ঐ চরিত্রহীনা মেয়েটিকেও যদি  জোরপূর্বক বিবস্ত্র কোরে intercourse  করা হয় – তাহলে সংজ্ঞা অনুযায়ী এটি একটি ধর্ষণ।Full stop! মেয়েটি যদি অন্য দোষ বা অপরাধ করে তার জন্যে আলাদা দন্ড দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই ধর্ষণের সাথে অন্য কিছুকে amalgamate কোরে ধর্ষকের অপরাধকে dilute করা একেবারেই অনুচিত।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে সেক্স এবং ভায়োলেন্সের মিশ্রণ থাকে ব’লে ধর্ষণকে যতটা disproportionately highly sexualised করা হয় ততটা ভায়ালেন্স কিংবা ক্রাইম হিসেবে ধরা‌ হয় না।

আসলে আমাদের সমাজে একটি বড় misconception হচ্ছে rape happens only out of sexual desire. আমাদের সমাজকে এই সাইকো-সায়েন্টেফিট তত্ত্বটা বুঝতে হবে যে ধর্ষণ হচ্ছে এক ধরনের abuse of power বা control that has little to do with human sexuality (which is healthy in the right context). অনেক পুরুষেরই সেক্সুয়াল ডিজায়ার আছে, তারা সবাই সেক্সুয়াল এসল্ট করেনা। যিনি সত্যিকারের পুরুষ তিনি কখনো ধর্ষণ করেন না। ধর্ষণ যদি মানুষ সেক্সুয়াল ডিজায়ার থেকে করত তাহলে তিন বছরের শিশু আর সত্তর বছরের বৃদ্ধা ধর্ষিতা হত না। অনেক ধর্ষকের বাড়়ীতে সুস্থ সবল স্ত্রী রয়েছেন। ছোট্ট শিশু আর অসহায় বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করাই প্রমাণ করে যে ধর্ষক একজন নারীকে sexual situation-এ ফেলে জোরপূর্বক বল খাটিয়ে অপরাধ কর্ম করে।

এটি এত বড় জঘন্য অপরাধ যে এটিকে নিয়ে political footballing করাটাও অপরাধ। তাই এই একটা জায়গায় সরকার, বিরোধী দল, আদালত, সুধীজন, নারীবাদী এবং বুদ্ধিজীবী সবাইকে এক হাট্টা হয়ে ধর্ষণের বিপরীতে দাঁড়াতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, কয়েকজন ‌অপরাধী তাদের অপকর্ম দিয়ে সমাজকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে না,‌ সমাজ অধঃপতনে যায় সুধীজনের নীরবতার কারণে।

কবি সৈয়দ শামসুল হক আজ আমাদের মাঝে নেই। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো এখন এভাবে লিখতেন, ‘যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায় / ফুলনদেবীর কথা মনে পড়ে যায়’।

বাংলাদেশে ধর্ষণ যেভাবে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তাতে ধীরে ধীরে যদি দেশটা ফুলনদেবীতে ভরে যায় তাহলে খুব কী অবাক হওয়ার কিছু আছে?

আমি আবারো বলছি, কয়েকজন অপরাধী তাদের অপকর্ম দিয়ে সমাজকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যেতে পারেনা, সমাজ অধঃপতনে যায় সুধীজনের নীরবতায়। তাই‌ বলছি, ‘ জাগো, বাহে,‌ কোনঠে সবায়’!!

লেখক : ডক্টর জাকি রিজওয়ানা আনোয়ার, মা ও শিশু বিশেজ্ঞ। চ্যানেল এসের সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার এবং সিনিয়র কমিউনিটি এক্টিভিস্ট।

 

https://britbangla24.com/news/114323/

 

https://britbangla24.com/news/62415/

Advertisement