যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে তুরস্কে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হয়। ১৫ আগস্ট সকালে রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান, এনডিসি কর্তৃক দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময়ে সকলেই দিবসটি স্মরণে কালো ব্যাজ পরিধান করেন এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিবারের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য প্রদান করেন। দূতাবাসের শেখ রাসেল শিশু কর্নারে রাষ্ট্রদূত কর্তৃক শেখ রাসেলের ছবি অবমুক্তকরণ, শিশুদের খেলার সরঞ্জামাদি ও পুস্তক শেলফ স্থাপন এবং শেখ রাসেল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সংঘটিত বিয়োগান্তুক ঘটনায় সকল শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া পাঠ করা হয়। দূতাবাসের বিজয় একাত্তর মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে দিবসটি উপলক্ষে মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে রাষ্ট্রদূত, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, মিনিস্টার ও মিশন উপ-প্রধান, দুতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিনী ও দুতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সহধর্মীনিগণ পৃথক পৃথক বৃক্ষ রোপনে অংশগ্রহন করেন।
দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে বিকালে জুম এ্যাপসের মাধ্যমে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী,
তুরস্কের প্রবাসী বাংলাদেশীগন এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গণ্যমান্য নাগরিকগন আলোচনা সভা ও
কবিতা আবৃত্তি পর্বে অংশগ্রহন করেন। উক্ত আলোচনা পর্বে অংশগ্রহন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য
প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ সামাদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, মুক্তিযোদ্ধা ও
মানবাধিকার কর্মী মিজ রোকেয়া কবির, বেসিস এর চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমাস কবির এবং তুরস্কে কর্মরত চিকিৎসক ডায়াগনিস্টিক ও ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্ট ডাক্তার বাবরুদ্দিন আহম্মেদ। কবিতা আবৃত্তি পর্বে অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য, কবি আসাদ মান্নান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মাদ নুরুল হুদা, আইনজীবী শিমুল পারভিন, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রফেসর কবি কামরুল হাসান, বাংলাদেশদূতাবাসের মিনিস্টার ও মিশন উপ-প্রধান কবি মোঃ রইস হাসান সরোয়ার, মাসিক সুখী পরিবার পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং দৈনিক সকালের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও ভিশন ২০২১ ফোরামের চেয়ারম্যান এস.এম আজাদ হোসেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর জীবন, অর্জন ও ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদশর্ন করা হয়। রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তুক ঘটনার প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, বাঙ্গালী জাতির কল্যাণেও তাদের অধিকার নিশ্চিতকল্পে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতিকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করে শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাই এনে দেননি বরং স্বপ্নের “সোনার বাংলা” বিনির্মাণে এবং বাঙ্গালী জাতির মূল্যবোধ, আদর্শ ও লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের “সোনার বাংলা” গড়ার লক্ষ্যে প্রত্যেক বাংলাদেশীকে যার যার অবস্থানে থেকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকারীরা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের চেতনাকে বাংলাদেশের আপামর জনতার মন থেকে যেমন মুছে ফেলতে পারেনি তেমনিভাবে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিকেও বাধাগ্রস্থ করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আজ একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এখন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর জন্য রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। পরিশেষে, বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও অন্যান্য শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোঃ আবুল বাশার কর্তৃক পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও বিশেষ মোনাজাত -এর মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।