ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: রামায়ণের একটি চরিত্রের নাম কুম্ভকর্ণ। যিনি বছরের ছয় মাস ঘুমান। আর ছয় মাস জেগে থাকেন। রাম যখন লঙ্কাভিমুখি বানর সেনাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তখন কুম্ভকর্ণের ঘুমের সময়। রাবন পড়লেন মহা বিপদে। কিন্তু রামের সঙ্গে জয় পেতে কুম্ভকর্ণের প্রয়োজন। তাকে যে করেই হোক জাগাতে হবে। থরে থরে তার সামনে খাবার রাখা হলো।
সেই রসনার গন্ধে ঘুম ভাঙে কুম্ভকর্ণের। হঠাৎ রাশেদ খান মেননের কথায় তেমনটাই মনে হচ্ছিল। তিনি কীসের গন্ধে জাগলেন এমন প্রশ্ন জনমনে। যে কথা মানুষ ভোটের আগে পরে সবসময় বলে আসছে তিনি এতপরে কেন বললেন? হঠাৎ কেন সাক্ষ্য দিচ্ছেন গত নির্বাচনে ভোট কারচুপির?
বলেছেন, গত নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে এটা গণমানুষ জানে ভোটরঙ্গ ঘটাবার আগের রাত থেকেই। এলাকায় এলাকায় যখন ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ভরে ভোজের আয়োজন করা হয় জয় লাভের। আর সেই ভোটে তিনিও একজন এমপি। এতদিন তৃপ্তির ঢেকুর দিচ্ছিলেন। জয়ের আনন্দে মশগুল ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ঘটনার সঙ্গে তার নামও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। গতকাল বরিশালে দলের সম্মেলনে সরকারের সমালোনা করে তিনি বেশকিছু প্রসঙ্গ তুলেছেন। কিন্তু একইসঙ্গে বিনাভোটে এমপি পদ নিয়ে নানান সুবিধা যুক্তও আছেন। কিন্তু হঠাৎ কেন রাশেদ খান মেনন একথা বলছেন সেটাই টক অব দ্য টাউন?
গত কিছুদিন ধরেই ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান চলার পর থেকেই রাশেদ খান মেনন আলোচনায়। বিশেষত, তিনি যে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত সে ক্লাবেও ক্যাসিনো চলতো, জুয়ার আসর বসতো। এর আগেও নানা অনিয়মের সঙ্গে রাশেদ খান মেননের নাম এসেছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ছাত্রী ভর্তি নিয়ে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বাম রাজনীতির যে ধারা মানুষ জানে এবং বুঝে সে ধারায় একেবারে ভিনড়ব রাশেদ খান মেনন। গত টার্মে মেনন এবং ইনুর একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। তা হচ্ছে সরকারি টাকায় তাদের হজের যাওয়ার ছবি। দুজনই একেবারে ইউটার্ন করেছেন হজে যাওয়ার মাধ্যমে। যদিও এখনও তারা বামের লাল ঝান্ডা নিয়ে ছুটছেন। কিন্তু আমজনতা তাদেরকে সুবিধাভোগী বাম বলেই আখ্যায়িত করে থাকে। হঠাৎ রাশেদ খান মেননের বক্তব্য নিয়ে তুমুল আলোচনা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
এক সিনিয়র সাংবাদিক লিখেছেন, জ্বালারে জ্বালা, এ কি কম জ্বালা। সাংসদ হতে নৌকা, পরে কন বিরোধী দল-এ জ্বালা সইতে পারে। আরেকজন প্রশ্ন তুলেছেন, মেনন স্বাক্ষ্য দিলেন জনগণ ভোট দেয়নি, তাহলে শপথ নিলেন কেন? আরেক সাংবাদিক তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ওকে, তাহলে এখন ওই আসনে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান’।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে মেননের বক্তব্য নিয়ে যখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও প্রশ্ন তুললেন এই বিষয়ে। তিনি বলেছেন, তিনি (মেনন) এতদিন পর কথা বলছেন কেন? তিনি মন্ত্রী হলে কি এমন কথা বলতে পারতেন?
তবু বলতে হয়, রাশেদ খান মেনন অনেকদিনপর উপলব্ধি করলেন, জনগন ভোট দেয়নি। কিন্তু শপথও নিলেন, লাল পাসপোর্ট আর এমপির জন্য বরাদ্দ গাড়িও হাঁকালেন। এখন দেখার বিষয় নীতি ও মূল্যবোধের প্রশ্ন থেকে, ক্সনতিকতা থেকে, আদর্শ রাজনীতির প্রশ্নে ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রতিবাদে তিনি কবে এমপি পদ ছাড়ছেন?