টেরিসা মে এখন ‘নো ওমেন্স ল্যান্ডে’

 Dr. Zaki Rezwana Anwar  

বৃটেনে ২০১৬-র রেফারেন্ডমের পর সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত ডকুমেন্ট ‘ব্রেক্সিট হোয়াইট পেপার’ প্রকাশিত হওয়ার পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মিসেস মের শুধু বিরোধী দল নয় – নিজ দলের মধ্যেই বিরোধিতার গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। এই গুঞ্জন শোরগোলে পরিণত হয়েছে ব্রেক্সিট মিনিষ্টার ষ্টীভ বেকার, ব্রেক্সিট সেক্রেটারি ডেভিড ডেভিস ও পররাষ্ট্র সেক্রেটারি বরিস জনসনের ধারাবাহিক পদত্যাগের পর পর।

প্রধানমন্ত্রী থেরিজা মে

এদিকে ডেভিড কেমেরুনের ছেড়ে যাওয়া নির্বাচনী এলাকার এমপি রবার্ট কোর্টসও তার ফরেন অফিসের পার্লামেন্টরী প্রাইভেট সেক্রেটারির পদ থেকে পদত্যাগ কোরে কাষ্টমস বিলের বিপক্ষে ভোট করবেন – এমন আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। সেই সাথে টোরি দলের ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রূপের (ই আর জি) জোরে শোরে মে হটাও অপারেশন — এ সব কিছুই সোজা সাপ্টাভাবে আমাদের বলে দিচ্ছে যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মে-কে নেতৃত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে।

সাবেক ফরেন সেক্রেটারী বরিস জনসন

ওদিকে ওয়েষ্টমিনষ্টারে গ্রীষ্মকালীন ছুটীর ঘন্টা বাজছে জুলাইয়ের ২৪ তারিখে। কাজেই টোরির হার্ড ব্রেক্সিটিয়াররা আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই ‘নো কন্ফিডেন্স’ মোশন এনে এর একটা নিষ্পত্তি চাইবেন – সেটা খুবই অনুমেয়। আর বিভিন্ন সূত্র, গত সপ্তাহান্তে ইইউর সাথে ‘কমন রুল বুক’ – এ স্বাক্ষর করার প্রস্তাবের বিরোধিতা কোরে ৪০জন এমপি ১৯২২ কমিটির চ্যায়ারম্যানের কাছে’নো কন্ফিডেন্স’ ভোটে সমর্থন দিয়েছেন। ৪৮জন টোরি এমপি অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন দিলেই শুরু হবে নেতৃত্বের লড়াই। আর টিকে থাকতে হলে টেরিসা মে-কে বর্তমান ৩১৬ জন টোরি এমপির অর্ধেকের বেশী অর্থ্যাৎ অন্তত ১৫৯টি ভোট পেতে হবে।

সাবেক ব্রেক্সিট সেক্রেটারী ডেডিভ ডেভিস

এখানে প্রাসঙ্গিক কারণেই আমেরিকার ৩৬তম প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের একটি কথা খুব মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনীতিবিদদের সব চাইতে বড় গুণ হচ্ছে ‘গণণা কোরতে পারার ক্ষমতা।’ কত হেভি ওয়েট রাজনীতিবিদ পদত্যাগ করল তা টেরিসা মের জন্য এখন এত বড় কথা নয় যত বড় কথা হচ্ছে ‘পার্লামেন্টের অঙ্ক।’

ব্রিটবাংলা প্রকাশিত ডক্টর জাকি রিজওয়ানার অন্যান্য লেখা :

https://britbangla24.com/news/36629

https://britbangla24.com/news/28055

২০১৬ সালে নেতৃত্বের লড়াই থেকে বরিস জনসন সরে দাঁড়ালেও এবার যে তিনি দাঁড়াবেন তার দুটো কারণ আছে। প্রথমত এবার প্রধানমন্ত্রী হবার সুযোগ হারালে রাজনীতির সাইকেলে তার আরেকবার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বল্লেই চলে। দ্বিতীয়ত তিনি পদত্যাগ করায় হার্ড ব্রেক্সিটিয়ারদের ভোটগুলো সব তিনি পাবেন – এমন স্বপ্ন দেখাও অসম্ভব নয়। তবে জরিপে দেখা গেছে টোরি দলের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি নেমে এসেছেন চতুর্থ স্থানে। তাকে ডিঙিয়ে সামনে এগিয়ে রয়েছেন সাজিদ জাভিদ, মাইকেল গোভ এবং জেকব রিস।

টোরি দলে পার্টি লীডার হটানোর ঘটনা নুতন নয়। ১৯৯০ সালে ইউরোপ ইস্যুতেই মার্গারেট থেচারকে পদত্যাগ কোরতে একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে এ ধরনের একই পরিস্থিতিতে জন মেজর তার দলের বিদ্রোহীদের বলেছিলেন ‘পুট আপ অর শাট আপ’। সবাই শাট আপ করলেও জন রেডওড প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং জন মেজরের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। তার দু বছর পর অবশ্য লেবারের কাছে জন মেজরের পরাজয় হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মে-র ভাগ্য কি ১৯৯০ নাকি ১৯৯৫ সালের মত হয় – সেটি দেখার বিষয়।

নেতৃত্বের লড়াইয়ে টোরির হার্ড ব্রেক্সিটিয়াররা কেউ ১৫৯ ভোট জোগাড় কোরতে পারবেন কিনা জানিনা, তবে যেটা তারা পারবেন তা হচ্ছে পার্লামেন্টের ভেতরে গরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। টেরিসা মে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও মে প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট বিল চরম ব্রেক্সিটপন্থীরা কমন্সে আটকে দিতে পারবেন এবং সে ক্ষেত্রে টেরিসা মে-র বিরোধী দল থেকে সমর্থন চাওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবেনা। তখন জেরমী করবি কি মে-র দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন? মোটেই না। লেবার পার্টি হিসেব কোরে দেখবে, ব্রেক্সিট ভোটকে কেন্দ্র কোরে টোরি সরকারে ধ্বস নামানো আর নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসার এটাই মোক্ষম সুযোগ।

লেখক : ডক্টর জাকি রেজোয়ানা আনোয়ার, মা ও শিশু বিশেজ্ঞ। চ্যানেল এসের সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার এবং সিনিয়র কমিউনিটি এক্টিভিস্ট।

Advertisement