ট্যুয়িক প্রতারণা : উইন্ডরাশের চাইতে বড় ইমিগ্রেশন ক্যালেঙ্কারীর আশঙ্কা

ব্রিটিবাংলা ডেস্ক : ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট জালিয়াতির বিষয়টি উইন্ডরাশের চাইতে বড় ইমিগ্রেশন কেলেঙ্কারী হতে পারে বলে ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারীকে সতর্ক করেছেন এমপিরা। পাঁচ বছর আগে দ্যা টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন সংক্ষেপে টিওইআইসি (ট্যুয়িক) টেস্টে জালিয়াতির ঘটনার সুরাহা করতে হোম সেক্রেটারী সাজিদ জাভিদকে তাগিদ দিয়েছে অল পার্টি পার্লামেন্টারী গ্রুপ।
২০১৪ সালে একটি প্যানারোমার মাধ্যমে ইস্ট লন্ডনের দুটি সেন্টারে ট্যুায়িক টেস্টে জালিয়াতির বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করেছিল বিবিসি। তখন হোম সেক্রেটারী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরিজা মে। গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ট্যুয়িক টেস্ট জালিয়াতির চিত্র দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এরপর ট্যুয়িক টেস্টে প্রতারণার অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রায় ৩৪ হাজার বিদেশী শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করে বা ভিসার মেয়াদ কমানো হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১ হাজারের বেশি স্টুডেন্টকে জোরপূর্বক স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়। প্রায় পাঁচ বছর আগে এই জালিয়াতির জন্যে এখনো বিদেশী শিক্ষার্থীরা ইমিগ্রেশন অফিসারদের টার্গেটের শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে ট্যুয়িক টেস্টে জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর জন্যে ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখা হচ্ছে।
২০১৪ সালে একটি প্যানারোমার মাধ্যমে দুটি সেন্টারে ট্যুায়িক টেস্টে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছিল। তখন হোম সেক্রেটারী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরিজা মে। তিনি গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ট্যুয়িক টেস্ট জালিয়াতির চিত্র দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এরপর থেকে খড়গ নামে বিদেশী শিক্ষার্থীদের উপর। প্যানারোমা প্রকাশের প্রায় ৩ হাজার ৬শ শিক্ষার্থীর আবাসিক ঠিকানায় অভিযান চালিয়েছিল হোম অফিস। যারাই ট্যুয়িক টেস্ট দিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হয়েছে তাদেরকে ধরে ফেরত পাঠিয়েছে হোম অফিস। ট্যুায়িক ইস্যুতে আটকের পর বিদেশী শিক্ষার্থীদের আপিলের অধিকারও রাখা হয়নি। তাদেরকে হোম অফিসের পক্ষ থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্বদেশে গিয়ে আপিল করতে হবে। ইউকের ভেতরে অবস্থান করে তাদের আপিলের কোনো সুযোগ নেই। ঢালাওভাবে ধরপাকড়ের ফলে ইংরেজী সাহিত্য, একাউন্টেন্সি এবং আইন বিষয়ে পড়–য়া ডিগ্রীর শিক্ষার্থীদের ভুক্তভোগির শিকার হতে হয়েছে। পিএইচডি শিক্ষার্থীরাও এই ট্যুয়িক কেলেঙ্কারীর কারণে অযথা ইমিগ্রেশন হয়রানীর শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমেরিকান কোম্পানী এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস সংক্ষেপে ইটিএস এই ট্যুয়িক টেস্ট পরিচালনা করত। ইউকের বিভিন্ন সেন্টারে নেওয়া হত এই টেস্ট। এই কোম্পানী জানিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউকের ৯৬টি সেন্টারে ৫৮ হাজার ৪৫৮ টেস্ট নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩৩ হাজার ৭শ ২৫ জন শিক্ষার্থী টেস্টে প্রতারণা করেছে। আর ২২ হাজার ৬শ ৯৪ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ। মাত্র ২ হাজার শিক্ষার্থী এই প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে হোম অফিসকে জানিয়েছিল আমেরিকান ওই কোম্পানী। প্যানারোমার মাধ্যমে ট্যুয়িক টেস্টে প্রতারণার জন্যে যে ভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে সেই ভয়েস উপর গবেষণা করেই উপরের তথ্য নির্ধারণ করে হোম অফিসকে জানিয়েছিল আমেরিকান ওই কোম্পানী।
এদিকে ইলফোর্ড সাউথের লেবার দলীয় এমপি মাইক গ্যাপস জানিয়েছেন, ট্যুয়িক টেস্ট প্রতারণা প্রকাশের পর হোম অফিসের কঠোরতার ফলে তার নির্বাচন এলাকার বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ নিয়ে হোম অফিস বাড়াবাড়ি করেছে বলে মনে করেন, ইস্টহ্যামের লেবার দলীয় এমপি স্টিফেন টিমসও। তিনি বলেন, টেস্টে বসে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতারণা করেছে বলে যে দাবী করা হচ্ছে তা অর্থহীন বলে মনে করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে গত বছর হোম সেক্রেটারীর সঙ্গে কথাও বলেছেন এমপি টিমস। তবে এখনো হোম সেক্রেটারীর কাছ থেকে সঠিক জবাব পাননি। যদিও গত এপ্রিলে হোম সেক্রেটারী তাকে জানিয়েছে, তিনি বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তার অফিস বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।
ট্যুয়িক প্রতারনার অভিযোগে অযথা হয়রানীর শিকার বা দেশ ত্যাগে বাধ্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে ক্যাম্পেইনে নামার পরিকল্পনা করছে অল পার্টি পার্লামেন্টারী গ্রুপ। আগামী মে মাসে এ নিয়ে গ্রুপের প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা। এর আগে এমপিরা শিক্ষার্থী, আইনজীবি এবং ইমিগ্রেশন জাজদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।

Advertisement