ব্রিট বাংলা ডেস্ক : ‘অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগ এনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডাব্লিউএইচও) তহবিল দেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি গত মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, ডাব্লিউএইচও তার ‘প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে’। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এটা নয়।
জাতিসংঘের জেনেভাভিত্তিক এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ট্রাম্প বলেন, চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সংস্থাটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্য ‘গোপন করেছিল’। ১৯৪ সদস্যের এই বিশ্ব সংস্থাকে জবাবদিহির আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এর আগে ট্রাম্প ডাব্লিউএইচওকে ‘চীন ঘেঁষা’ বলে অভিহিত করেন।
যদিও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তাঁর ভূমিকার জন্য ট্রাম্প নিজ দেশেই সমালোচিত হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, শুরুর দিকে ‘গাছাড়া মনোভাবের’ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এত বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যু এরই মধ্যে ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
হোয়াইট হাউসে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্য গোপন করা ও গুরুতর অব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নির্ধারণ করতে একটি পর্যালোচনা চলছে আর এ সময় তহবিল বন্ধ রাখতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি আমি। ডাব্লিউএইচও তার প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে আর একে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’ এই পর্যালোচনায় ৬০-৯০ দিন সময় লাগবে বলে ট্রাম্প জানান। ট্রাম্প আরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবকালে আমেরিকার উদারতার সম্ভাব্য সর্বোত্তম ব্যবহার হচ্ছে কি না তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে আমাদের।’
ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘এখন ডাব্লিউএইচওর তহবিল বন্ধ করার সময় নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এখন অবশ্যই সাহায্য করতে হবে। কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে চলমান লড়াইয়ে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৃহত্তম একক দাতা দেশ। গত বছর সংস্থাটিকে ৪০ কোটি ডলার দিয়েছিল তারা, যা ডাব্লিউএইচওর মোট বাজেটের ১৫ শতাংশের একটু কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ সালে চীন সংস্থাটিকে সব মিলিয়ে প্রায় আট কোটি ৬০ লাখ ডলার দিয়েছিল। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে চীনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত ডাব্লিউএইচওর চালমান লড়াইকে দুর্বল করবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এক টুইট বার্তায় বলেন, বর্তমান সময়ে সহায়তা প্রত্যাহারের কোনো যুক্তি নেই। এখন বরং আমাদের সবার উচিত ডাব্লিউএইচওর হাতকে আরো মজবুত করা।’ কড়া ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, ‘এটা দোষারোপ করার সময় নয়। এই ভাইরাস কোনো সীমান্ত চেনে না। এখন জাতিসংঘকে শক্তিশালী করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগের কারণেই কভিড-১৯-এর বিস্তার শ্লথ হয়েছে। অন্য কোনো সংস্থা তাদের মতো কাজ করতে পারবে না। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের ডাব্লিউএইচওকে এখন অনেক বেশি প্রয়োজন।’
মার্চে সংস্থাটি মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার তহবিলের জন্য আবেদন জানিয়েছিল এবং পরে এক প্রতিবেদনে সব মিলিয়ে অন্তত ১০০ কোটি ডলার তহবিল চাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছিল। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।