ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে। সিটির মেয়র ও কাউন্সিলরদের দাবি, আগে মহানগর সম্মেলন করতে হবে।
এরপর দলের জাতীয় সম্মেলন। অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের শীর্ষ নেতারা চান, আসন্ন সিটি নির্বাচন ও জাতীয় কাউন্সিলের পরই হোক মহানগর কাউন্সিল।
দু’পক্ষই দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে দাবি উপস্থাপন করেছেন। তিনি বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সোমবার ওবায়দুল কাদের বলেন, দুই মহানগর নেতাদের কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিতে বলেছি। তবে কাউন্সিল আর সিটি নির্বাচন একসঙ্গে সম্ভব হবে না।
আমরা অপেক্ষায় আছি নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত দেয়। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে কাউন্সিল হবে, আর নির্বাচন হলে মহানগরের কাউন্সিল হবে নির্বাচনের পর।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, নিজেদের সুবিধা ও পদে আরও কিছুদিন নির্বিঘ্নে থাকার অভিপ্রায়ে মেয়র-কাউন্সিলর ও নগর নেতাদের মধ্যে মৃদু বিরোধ চলছে।
সিটি নির্বাচন এবং মহানগর কাউন্সিল কাছাকাছি হওয়ায় বিশেষ সুবিধায় থাকা নেতারা নির্বাচন-কাউন্সিল কোনোটিই চান না।
শেষ পর্যন্ত কোনটি আগে হবে তা নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
কাউন্সিল (সম্মেলন) করতে গত ১২ অক্টোবর দুই মহানগর নেতাদের টেলিফোনে জানিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের।
এর পরপরই ২৩ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও ২৫ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ বর্ধিত সভা করে।
সেখানে মহানগর কাউন্সিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও তারিখ ঘোষণা করেননি ওবায়দুল কাদের।
গত ২৪ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ নির্বাহী সংসদের বৈঠক করে। এতে অনেকে কাউন্সিলের পক্ষে-বিপক্ষে মত দেন।
আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজসহ বেশ কয়েকজন সম্মেলন করার পক্ষে জোরালো দাবি তুলে ধরেন।
অপরপক্ষে সহ-সভাপতি খন্দকার এনায়েতুল্লাহ, আবুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, ডা. দীলিপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন সিটি নির্বাচনের পর সম্মেলনের দাবি উপস্থাপন করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন যথাসময়ে মহানগর কাউন্সিল করার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন। তবে এ বিষয়ে রোববার তিনি বলেন, দল যেটা ভালো মনে করে আমি তার সঙ্গেই আছি।
কাউন্সিল-সিটি নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের নেতা ও কাউন্সিলররাও।
এর আগে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্তরের সংগঠনের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সে হিসেবে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলন হওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ে মহানগর নেতাকর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতিমধ্যে মহানগর কাউন্সিল প্রস্তুতিতে ভাটা পড়েছে।
কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় কাউন্সিলের ছুতো তুলে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশ অমান্য করার চেষ্টা করছেন।
দুই মহানগরের কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ না হলে বিষয়টি দলের আগামী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় উঠতে পারে। সেখানে দলীয় প্রধান নিজে তারিখ নির্ধারণ করে দিতে পারেন। মেয়াদোত্তীর্ণ সব শাখায় কাউন্সিল করেই জাতীয় কাউন্সিল করতে চান তিনি।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের সাড়ে তিন বছরের মাথায় ২০১৬ সালে ১০ এপ্রিল প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মহানগর উত্তরে একেএম রহমত উল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে হাজী আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও মো. শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকার দুই অংশে কমিটি দেয়া হয়।
একই সঙ্গে ঢাকা মহানগরের ৪৯ থানা ও ১০৩ ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। ইতিমধ্যে এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।