আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কুনদুজে সশস্ত্র সংগঠন তালিবানের হামলায় গত এক সপ্তাহে অন্তত ২৯ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ২২৫ জন। যদিও প্রাদেশিক প্রশাসনের দাবি, গত তিন দিন ধরে অনেকটা কমে এসেছে সহিংসতা।কুনদুজ প্রশাসনের দাবি, প্রদেশের ৯টি জেলার মধ্যে অধিকাংশই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। শনিবার (২৬ জুন) তালিবানের দখলে থাকা দুটি জেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া শুক্রবার পুনর্দখল করা হয়েছে আরও ছয়টি জেলা। যদিও তালিবান বলছে এখনো প্রদেশটির কেন্দ্রের চারটি জেলা তাদের দখলে রয়েছে।হতাহতের শিকার কুনদুজের অধিবাসী তালেব বলেন, তাদের বাড়িতে একটি মটরসেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। যাতে নিহত হয়েছেন তার বাবা। কুনদুজ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, তালিবানের সঙ্গে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির নারী ও শিশুরা। যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটির মোট ১০টি প্রদেশে ২২৫ জন তালিবান নিহত হয়েছে। যদিও তালিবানের পক্ষ থেকে নিজেদের হতাহতের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
শনিবার রাতে পারওয়ান প্রদেশে তালিবানকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে আফগানিস্তান প্রশাসন। যাতে কমপক্ষে ২০ জন তালিবান নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে পারওয়ানের গভর্নর ফজলুদ্দিন আয়ার সাইদ।প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রুহুল্লা আহমাদজাই বলেন, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাহসের সাথে তালিবানের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন। যাতে পিছু হঠতে শুরু করেছে তালিবান সন্ত্রাসীরা। গত দুই মাসে আফগানিস্তানের কমপক্ষে ১শ’টি জেলা দখলে নেয় তালিবান। যা উদ্ধারে লড়াই করছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এ দিকে ২৫ জুন আফগানিস্তানে তালিবানকে লক্ষ্য করে ফের দুটি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে জো বাইডেনের বৈঠকের কিছুক্ষণ আগে এ হামলা চালায় তারা। দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ২৫ জুন বাইডেনের সাথে বৈঠক করেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও জাতীয় ঐক্যমত্যের জন্য গঠিত শীর্ষ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ।বৈঠক শেষে জো বাইডেন জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা হলেও দেশটিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের মধ্যকার অংশীদারিত্ব শেষ হচ্ছে না। এটি স্থায়ী হতে চলেছে। আপনারা জানেন আমাদের সৈন্যরা আফগানিস্তান ছেড়ে আসছে, তবে আমাদের সহযোগিতা শেষ হচ্ছে না।চলতি বছরের ১ মে থেকে আফগানিস্তান হতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি এখন পর্যন্ত নিজেদের ৫০ শতাংশের বেশি সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যদিও আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ ও কূটনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দেশটি। নাম প্রকাশ না করা মার্কিন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ২৪ জুন এমন তথ্য জানিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি। যেখানে বলা হয় কমপক্ষে ৬৫০ জন মার্কিন সেনা আরও কিছুদিন আফগানিস্তানে অবস্থান করবে।যদিও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা থেকে যাওয়ার বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছে তালিবান। তালিবান জানায়, ১১ সেপ্টেম্বরের পর যদি আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য থাকে সে ক্ষেত্রে তাদেরও প্রতিক্রিয়া জানোনোর অধিকার রয়েছে। এছাড়া বাইডেনের সঙ্গে ঘানি-আবদুল্লাহর ২৫ জুনের বৈঠককে নিষ্ফল বলে উল্লেখ করেছে তালিবান।২০১১ সাল থেকে চলা যুদ্ধ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি আফগান সেনা ও পুলিশ নিহত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছে ৪০ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ। নিহত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশি সেনা।সূত্র : টোলো নিউজ