তিউনিশিয়ার উপকূল থেকে নতুন করে ৪১ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্টগার্ড। এর ফলে গত ১০ দিনে শুধুমাত্র তিউনিশিয়াতেই অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০ জনে। শুক্রবার দেশটির ন্যাশনাল গার্ড কর্মকর্তা হুসেম এডিন জেবাবলি বলেন, মৃতদেহগুলোতে পচন ধরে গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বেশ কয়েকদিন ধরে লাশগুলো পানিতে ভেসে ছিল। অল্প কয়েক দিনে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে বুধবার ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশী দুটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর পশ্চিম লিবিয়া উপকূলে অর্ধশত মরদেহ ভেসে আসে বলে জানায় দেশটির কোস্টগার্ড।আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে, তিউনিশিয়ার আছে মাত্র ১৫০ কিলোমিটারেরও কম উপকূল। তবে ভূমধ্যসাগরে এর উল্টো পাশেই রয়েছে ইতালী। তাই উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপে পাড়ি জমাতে তিউনিশিয়া একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নৌকাডূবি হলে তাই তিউনিশিয়া উপকূলেই সবথেকে বেশি মরদেহ ভেসে আসে। এতে চাপে পড়েছে স্থানীয় হাসপাতালগুলোও।
হাসপাতালের চাপ কমাতে প্রায় প্রতিদিনই শেষকৃত্য করতে হয়।২০শে এপ্রিল কমপক্ষে ৩০ জনকে কবর দেয়া হয়। এর পরের ১০ দিনে আরও বহু মানুষের মরদেহ আসতে থাকে তিউনিশিয়ার হাসপাতালগুলোতে। এই মরদেহগুলোকে দাফনের আগে প্রতিটি লাশ থেকে ডিএনএ সোয়াব নেয়া হয়। তিউনিশিয়ান ফোরাম ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটস (এফটিডিইএস) এর কর্মকর্তা রমধনে বেন আমোরের মতে, এই বছর ২৪শে এপ্রিল পর্যন্ত কমপক্ষে ২২০ জন মৃত এবং নিখোঁজ রেকর্ড করা হয়েছে। যারা ডুবে গেছে তাদের বেশিরভাগই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে এসেছে। তবে অনেক অমুসলিমও রয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অমুসলিম অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য একটি বিশেষ কবরস্থান তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে।ইনফোমাইগ্রান্টস জানিয়েছে, গত সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচদিনে টিউনিশিয়ার বিভিন্ন উপকূল থেকে এক হাজার ৮০০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করেছে দেশটির উপকূলরক্ষীরা৷ একদিনে নৌকা ডুবে মানুষ মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে নৌকা নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টাও বাড়ছে। শুধুমাত্র ২৫ এবং ২৬ এপ্রিল দুই দিনেই ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টারত ১৭টি নৌকাকে আটকে দিয়েছে তিউনিশিয়া৷সোমবার উত্তাল সাগরে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে ৩৭২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করে তিউনিশিয়া কোস্টগার্ড। এর মধ্যে বাংলাদেশিও ছিল। রাজধানী তিউনিস থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের বন্দর নগরী স্ফ্যাক্সোর উপকূলে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। সম্প্রতি সাব-সাহারা আফ্রিকা, সিরিয়া ও সুদানের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে নৌকাযোগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিবেশী লিবিয়াতেও পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর সমুদ্র পাড়ি দেয়া বেড়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে এ পর্যন্ত চারশোর বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে মারা গেছে।