করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর চীন এই প্রথম ভ্রমণকারীদের জন্য তার সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দিয়েছে।বিদেশ থেকে ভ্রমণকারীদের চীনে যাওয়ার পর এখন আর কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না এবং চীনা নাগরিকরাও এখন বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবে।তবে ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে পিসিআর টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ দেখাতে হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীন সরকার ২০২০ সালের মার্চ মাসে ভ্রমণের ওপর এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।দেশটিতে যখন চান্দ্র নববর্ষ পালিত হচ্ছে তখনই সর্বশেষ এই কোভিড বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হলো।নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে এসময় প্রচুর মানুষ চীনের ভেতরে চলাচল করে থাকে। এসময় লোকজন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বাড়িতে ফিরে যায়।ধারণা করা হচ্ছে এবারের নববর্ষের ছুটিতে ২০০ কোটি ট্রিপ হতে পারে যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।কোভিড মহামারি মোকাবেলায় চীন সরকার যেসব নীতি গ্রহণ করেছিল, ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে এই নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।যেসব পরিবারের সদস্যরা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কারণে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।বিধি-নিষেধ শিথিল করার পর সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। হাসপাতালে প্রচুর রোগী ভর্তি হচ্ছে।
বেইজিং-এর এই সিদ্ধান্তের পর দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে এবং হংকং-এর সাথে সীমান্ত এলাকায় পরিবারগুলো পুনরায় মিলিত হতে পারার কারণে আবেগ-ঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।ধারণা করা হচ্ছে হংকং থেকে আগামী কয়েক সপ্তাহে চার লাখের মতো মানুষ চীনে আসতে পারে।একজন নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন যে কয়েক বছর ধরে তিনি তার পিতামাতাকে দেখেননি। তাদের একজন কোলন ক্যান্সারে ভুগছেন। এখন সরকারের এই সিদ্ধান্তে তিনি “খুব, খুব খুশি।যুক্তরাজ্য থেকে চীনে গেছেন লি হুয়া। সেখানেই তার পরিবার বাস করে। তিনি বলছেন, “বহু বহু দিন পর” তিনি তার পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছেন।“ফিরতে পেরে আমি খুব খুশি। খুশি চীনা বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরে,” বলেন তিনি।গত বছরের শেষের দিকে লোকজন কোভিড বিধি-নিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এর পর থেকেই সরকার একের পর এক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে থাকে।দ্রুত এই পরিবর্তনের ফলে চীনের বিভিন্ন শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়।খবরে বলা হচ্ছে চীনের জিরো কোভিড নীতি শিথিল করার পর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রচুর রোগী ভর্তি হচ্ছে।করোনাভাইরাসে প্রতিদিন চীনে কতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে সরকার তার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বলা হচ্ছে যে শনিবার মাত্র দুজন মারা গেছেন।চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে প্রচুর মানুষ বাড়িতে যায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে।আশঙ্কা করা হচ্ছে নববর্ষের ছুটিতে লোকজন শহরাঞ্চল থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কারণে এই ভাইরাস এখন আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কোভিড মহামারি মোকাবেলায় গত তিন বছর ধরে বিশ্বের যেসব দেশে কঠোর বিধি-নিষেধ অনুসরণ করা হচ্ছিল, চীন তার অন্যতম।চীনের বিভিন্ন শহরে আলাদা আলাদা করে লকডাউন জারি করা হয়েছে, নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাধ্যতামূলক গণ-পরীক্ষার।দেশটির অর্থনীতিতেও এসব বিধি-নিষেধের বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।এর ফলে বিভিন্ন শহরে কোভিড নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।শিংজিয়ান অঞ্চলে একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন নিহত হওয়ার পর এই প্রতিবাদ আরো জোরালো হয়ে ওঠে।চীনে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে কোভিড বিধি-নিষেধের কারণেই এই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ কখনোই মেনে নেয়নি।যেদিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলো সেই একই দিনে সরকার যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করছে তার সমালোচনায় করায় কর্তৃপক্ষ চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি