তেলাঙ্গানায় ধর্ষণ-হত্যায় অভিযুক্ত চারজনকে ক্রসফায়ার, সমালোচনার ঝড়

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভারতের তেলাঙ্গানায় বন্দুকযুদ্ধের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সে দেশে প্রশংসার বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তবে এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া কতটা যৌক্তিক, সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আজ পুলিশকে লক্ষ্য করে পুষ্পবৃষ্টি হয়েছে। তবে অনেকরই প্রশ্ন, পুরো ঘটনায় কি বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে না?

শুক্রবার ভোররাতে পুলিশের এনকাউন্টারে গণধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্তদের নিহত হওয়ার ঘটনা শোনার পর নিজের স্বস্তি চেপে রাখতে পারেননি নির্যাতিতার বাবা। তার মতে, এ ঘটনার পর মেয়ের আত্মা শান্তি পেল। তিনি বলেন, ১০ দিন হলো আমার মেয়ে মারা গেছে। পুলিশ এবং সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। মেয়ের আত্মা এখন অবশ্যই শান্তি পেয়েছে।

২৭ নভেম্বর হায়দরাবাদের শামশাবাদে এক তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে হত্যা করে ওই চার অভিযুক্ত। এর পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সাদনগরে পুড়িয়ে ফেলা হয় ওই তরুণীর দেহ। আজ গভীর রাতে ওই ঘটনার পুনর্নিমাণ করতে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, সে সময় তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। আত্মরক্ষার্থে তাদের গুলি করে মারা হয়।

ক্রসফায়ারের খবর শোনার পর নির্যাতিতার বাবার মতো স্বস্তি পেয়েছেন নির্ভয়ার মা আশা দেবী। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় যেন তার ক্ষতে মলমের প্রলেপ লেগেছে। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে মেয়ে জ্যোতি সিংহকে গণধর্ষণ করে ছয়জন। সে মাসের শেষে হাসপাতালে মৃত্য হয় জ্যোতির।

সাত বছর আগের সেই ক্ষতই বয়ে বেড়াচ্ছেন জ্যোতির মা আশা দেবী। তিনি বলেন, পুলিশ যে ওদের এভাবে শাস্তি দিয়েছে, তাতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। পুলিশকর্মীরা খুব ভালো করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সে দাবি জানাচ্ছি।

তবে নির্যাতিতার বাবা অথবা নির্ভয়ার মায়ের সঙ্গে সহমত নন অনেকেই। এ ঘটনার পর পুলিশের নিন্দা করে বিজেপি সাংসদ মেনকা গান্ধী বলেন, যা হয়েছে তা এই দেশের জন্য ভয়ানক। … চাইলেই যাকে খুশি এভাবে মারতে পারেন না আপনি। আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। আদালতে তো ওদের (অভিযুক্তদের) ফাঁসিই হত।

তবে মেনকা গান্ধীর দলেরই আরেক সাংসদ অবশ্য তার বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করেছেন। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এতে মেয়েটির আত্মা শান্তি পেয়েছে। এত বড় ও জঘন্য ঘটনার পর ওরা পালানোর চেষ্টা করেছে। তাতে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।

যদিও লকেট চট্টোপাধ্যায় মতোই পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা করলেও গোটা বিষয়টি যে তদন্তসাপেক্ষ সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা। তার কথায়, পুলিশ ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটা তো তদন্তাধীন বিষয়। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি চেয়েছিলাম। তবে ঘটনার সময় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ তা তারিফযোগ্য।

রেখা শর্মার মতোই সাবধানী মন্তব্য কলকাতার সাবেক পুলিশ কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা যদি পালানোর চেষ্টা করে এবং পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে, তাহলে ঠিকই আছে। তবে এই মুহূর্তে ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে, তেমন ভাবেই দেখা উচিত। কারণ এর পর তো পুরো ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত হবে।

আজকের ঘটনার পর তেলঙ্গানা পুলিশের প্রশংসা করেছেন বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। তার মতে, যে সমস্ত পুলিশকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের সকলেই প্রশংসার যোগ্য। আমি নিশ্চিত অন্য রাজ্যের পুলিশও এমন কোনো উপায় বার করবেন, যাতে অপরাধীদের উচিত শিক্ষা মেলে।

বিরোধী দলের একাংশের মতে সায় নেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। তার মতে, এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া যায় না। দ্রুত চার্জশিট দিয়ে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

Advertisement