ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষমতার দাপট না দেখানোর আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শ্লোগান। সব দুঃসময়ের বিরুদ্ধে, দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়। আজ সুসময়ে আছে। এই সুসময় চিরদিন নাও থাকতে পারে। ক্ষমতা চিরদিন থাকে না। ক্ষমতার দাপট কেউ দেখাবেন না।
মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১ টায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী বলেছেন সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে। অনেক স্বপ্ন দেখতে হবে। অনেক স্বপ্ন দেখাতেও হবে। দুঃসময়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়ন করে না করে বসন্তের কোকিলদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না। মাদকসেবী, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজদের নেতৃত্বকে না বলুন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রংপুরে কমিটি না হওয়ার কারণে সেশনজটে আটকে গেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে আত্মীয়দের নেতা বানাবেন না। বিশুদ্ধ রক্ত দিয়ে দল পরিচালনা করুন। দলের নেতৃত্ব তাদের হাতে তুলে দিন। দূষিত সব রক্তদের পরিহার করুন।
সেতু মন্ত্রী আরও বলেন, এক সময় রংপুরের মানুষ মঙ্গাকবলিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী সেই মঙ্গাকে যাদুঘরে পাঠিয়েছে। রংপুরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। বগুড়া থেকে চারলেনের কাজ শুরু হয়েছে। রংপুর থেকে বুড়িমারী বাংলাবান্দা সড়ক করা হবে। গোটা উত্তরাঞ্চলের সমস্ত মহাসড়ক চারলেনের আওতায় আনা হবে। রংপুর জেলার ৯৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। দ্রুত শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিশ্বের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের নারী নেতাদের তালিকাও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়বে। সেই যাত্রায় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেলন, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক টিপু মুনশি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আখতার। এছাড়াও স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জেলা সেক্রেটারি রেজাউল করিম রাজু ও মহানগর সভাপতি সাফিউর রহমান সফি। সম্মেলন উপস্থাপনা করেন মহানগর সেক্রেটারি তুষারকান্তি মণ্ডল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত এই সম্মেলন। ২০০৭ সালে সাফিয়ার রহমান সাফিকে সভাপতি ও বাবু তুষার কান্নি মণ্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে ১৯৯৭ সালে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হয়। এরপর ২০০৬ সালে রংপুর জেলা সম্মেলন আহ্বান করা হলে দলের দুই গ্রুপের বিরোধের জেরে তা পণ্ড হয়ে যায়। পরে আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা জেলা আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। ২০০৯ সালে মরহুম আবুল মনছুর আহমেদকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। পরে আবুল মনসুর আহমেদের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। সমাবেশের পরে জেলা ও মহানগর কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।