ধর্ষিতার কাতর চিৎকার বন্ধ হোক

:: মোঃ মোস্তফা কামাল ::
ধর্ষণ বলতে কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যৌন তৃপ্তি লাভ করাকে বুঝায়। বর্তমান সমাজে অহরহই ঘটছে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা। একজন মানুষের মনুষ্যত্ব শূন্যের কোঠায় চলে আসলেই কেবলমাত্র সে ধর্ষণ নামক এ পৈচাশিক অপরাধ করে বসে।ধর্ষণের মূল কারণ ধর্ষণকারীর মানসিক বিকৃতি, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সামাজিক সচেতনতা, নারীপুরুষের সম অধিকারের অপব্যবহার, নারীদের সচেতনতার অভাব, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না দেয়া, পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধের অভাব, নারীর খোলামেলা ও আবেদনময়ী পোশাক পরিধান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ এবং সন্তানে প্রতি পিতামাতার উদাসহীনতা ইত্যাদি। এ রকম নানাবিধ কারণে ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। লাঞ্ছিত হচ্ছে নারীরা।

ধর্ষণ পৃথিবীর প্রাচীনত অপরাধগুলোর মধ্যে একটি।একটি যৌনাবেদনময়ী মেয়েকে দেখে একটি ছেলের যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। তারাও একজন যৌনাবেদনময় ছেলেকে দেখে যৌন উত্তেজনায় ভুগতে পারেন। তবে যেহেতু আমাদের দেশে নারীরাই পুরুষদের দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে, নিপড়ীত হচ্ছে তাই মেয়েরা তাদের এই যৌনাকাঙ্ক্ষা কিভাবে নির্লিপ্ত করে সেটা আপাত প্রাসঙ্গিক নয়।

বাংলাদেশ ধর্ষক নামক ঘৃণ্য নরপশুদের হাত থেকে মুক্ত নয়। অধিকার নামক একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই নয় মাসে ৩৩৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে ১৫৮ জন নারী ও ১৮০ জন মেয়ে শিশু। ১৫৮ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, ৬৮ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছর এ পর্যন্ত মোট ধর্ষণেরর ঘটনা ঘটে ২৪৮টি, গণধর্ষণ হয় ১১৬টি, ধর্ষণের পর হত্যা ৮৭টি।তবে এত সব ধর্ষণ ঘটনার প্রেক্ষিতে যে প্রতিবাদগুলো হয়েছে তার প্রায় সবই হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়ের সাথে সাথে ব্যাপারগুলো ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। যতদূর মনে পড়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবলমাত্র দিনাজপুরের ইয়াসমিন ধর্ষণ এবং হত্যা নিয়েই সামাজিক একটি আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু তারপর আরও হাজার খানেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বড় আকারের তেমন কোনো সামাজিক আন্দোলন হয় নি।সামাজিক আন্দোলন শুধু রাস্তায় নেমে করলেই হবে না।

অনলাইনেও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। তবে যারা সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে নিজের মধ্যকার যাবতীয় জড়তা দূর করে অসীম সাহসিকতার সাথে রাজপথে সামাজিক অধিকারের আন্দোলন করছেন তারা অগ্রগামী। তারা নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবিদার। তবে আমাদের কারো আচরণ যেন কখনই কারও সাথে সংঘর্ষিক না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।এ আন্দোলন হবে প্রচলিত আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। সেই সাথে একজন ধর্ষণের শিকার নারী কিভাবে সঠিক আইনি পরামর্শ পেতে পারেন বা তার করণীয়় কি সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করা।

কারও একার পক্ষেই ধর্ষণের মতো অপরাধের প্রতিরোধ করা সম্ভব না। প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ধর্ষণ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম প্রয়োজন সকলের মাঝে নৈতিক মানবতাবোধের স্ফূরণ। কোনো ধর্মেই ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজকে উৎসাহিত করা হয় নি।তাই ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার উপর প্রবল গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি ও নৈতিক অবক্ষয় রোধ করার মাধ্যমে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সৃষ্টিই পারে ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রধান ভূমিকা রাখতে।এছাড়া নারীদের ধর্ষণ সম্পর্কে সচেতন করে তুলা এবং হঠাৎ করে ধর্ষণের শিকার হলে নিজেদের বাঁচাতে পারে এমন আত্মরক্ষামূলক কৌশল শিখানো উচিত।

আমাদের জীবন যাপন এবং আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার মাপকাঠি আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ধারক ও বাহক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।কেউ কারও ব্যক্তি স্বাধীনতার বা ব্যক্তি অধিকারের অপব্যবহার করুক তা কাঙ্ক্ষিত নয়। বাংলাদেশের আর কোনো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হোক কিংবা দেশের কোনো নারী মাথা নিচু করে চলুক, রাস্তায় আতঙ্ক নিয়ে চলুক তা আমরা চাই না। আমরা চাই নারীপুরুষের সহাবস্থান এবং তা প্রচলিত সুষ্ঠু ধারার ভিত্তিতে।

Advertisement